ভাইয়ের আসনেও ভোটের লড়াইয়ে বাদ কাদের সিদ্দিকী

ঋণ খেলাপি হওয়ায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী আসনে উপ-নির্বাচনেও আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2015, 09:10 AM
Updated : 13 Oct 2015, 03:29 PM

একই কারণে গত বছর টাঙ্গাইলের আরেকটি আসনে মনোনয়নপত্র কিনলেও ভোট করতে পারেননি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি।

ওই নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের পর আইনি লড়াই চালিয়ে বিফল কাদের সিদ্দিকী এবার ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন।

মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর তার প্রার্থিতা বাতিল করেন টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান। বাতিল হয় তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রও।

এর প্রতিক্রিয়ায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা দুপুরে দুই ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

তাৎক্ষণিকভাবে দলটির পক্ষ থেকে টাঙ্গাইলে বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হলেও পরে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

কাদের সিদ্দিকীর দাবি, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ তার ও তার স্ত্রীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাদের সিদ্দিকী ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সাংসদ শওকত মোমেন শাজাহানের মৃত্যুতে শূন্য টাঙ্গাইল-৮ আসনে উপনির্বাচনেও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন।

তখন ঋণ খেলাপি হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিলে তিনি আদালতে যান। কিন্তু হাই কোর্ট তার আবেদন খারিজ করে দিলে আর নির্বাচন করা হয়নি আওয়ামী লীগের এক সময়ের এই নেতার।

হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করায় এবার টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপ-নির্বাচন হচ্ছে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন দলের আরও দুই নেতা ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী ও হাসমত আলী।

যাচাই-বাছাইয়ের পর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মোট চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

অগ্রণী ব্যাংকের ১০ কোটি ৮৮ লাখ ২৬ হাজার ৪২৩ টাকার ঋণ খেলাপের জন্য কাদের সিদ্দিকী ও নাসরিন সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিলের কথা জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

প্রার্থিতা বাতিলের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাদের সিদ্দিকী দুপুরে টাঙ্গাইল শহরে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, “উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার ও আমার স্ত্রীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।”

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

তারা ‘কাদের সিদ্দিকীকে ছাড়া কালিহাতী উপ-নির্বাচন, মানি না-মানব না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। 

বেলা ২টার দিকে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে বুধবার সকাল-সন্ধ্যা টাঙ্গাইলে হরতালের ঘোষণাও দেন কাদের সিদ্দিকীর সমর্থকরা।

বিকালে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমার মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য সড়ক অবরোধ, হরতাল করতে হবে না।

“আমি খুশি হতাম, যদি আপনারা কালিহাতীতে মা-ছেলেকে যৌন নির্যাতন এবং পুলিশের গুলিতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে হরতাল অবরোধ করতেন।”

পরে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী বিকাল ৫টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দলের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর অনুরোধে হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এলেঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে ইকবাল সিদ্দিকীও ছিলেন দলীয় সভাপতির সঙ্গে। এছাড়াও ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা, কালিহাতী উপজেলা শাখার সভাপতি হাসমত আলী, যুব আন্দোলনের সভাপতি হাবিবুন্নবী সোহেল, টাঙ্গাইল জেলা যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিকুর রহমান সাদেক ও টাঙ্গাইল জেলা ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ সেফুল।

টিকে রইলেন ৬ প্রার্থী

কাদের সিদ্দিকীসহ চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীসহ ছয় জনের প্রার্থিতা বৈধ বলে রায় দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। 

হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী

জাতীয় পার্টির (জাপা) সৈয়দ মুশতাক হোসেন রতন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আলীমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

আলীমের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরপত্রে সই করা একজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং আরেকজন স্বাক্ষর করার কথা স্বীকার করেননি।

মোস্তাক হোসেনের দলীয় সমর্থনের প্রমাণপত্র না থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নৌকা প্রতীকের সোহেল হাজারীর সঙ্গে লড়াইয়ে থাকছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী ও হাসমত আলী, এনপিপির ইমরুল কায়েস, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাদেক সিদ্দিকী ও বিএনএফের আতাউর রহমান খান।

এদের কেউ চাইলে ২১ অক্টোবরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে ২২ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে প্রচারণা। ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১০ নভেম্বর।