স্ট্যান্ড-গ্যারেজের আড়ালে জগন্নাথের ফটক

ফুটপাতের উপরই রিকশার সারি, আছে মেরামতের দোকান, সেলুন; এসব আড়াল করে রেখেছে কয়েক গজ দূরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2015, 07:19 AM
Updated : 5 Dec 2015, 07:19 AM

‘বন্ধ’ অন্য ফটকের অবস্থা আরও শোচনীয়। বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানেই চলছে মিনিবাস ও লেগুনা ‘সার্ভিস’। দিনে-রাতে শাহ পরিবহনের ডজনখানেক মিনিবাস ও শিলা পরিবহনের লেগুনা ওই খান থেকেই যাত্রা শুরু করে। ‘স্ট্যান্ড’ থাকায় গড়ে উঠেছে খানকয়েক গাড়ি মেরামতের দোকানও। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান ফটকের সামনের ফুটপাতকে গ্যারেজ বানাতে ‘দায়’ এড়াতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। 

ক্যাম্পাসের ভেতরে জায়গা না থাকায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক পরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো ফুটপাতকে আড়ালে করে রাখে। এই সুযোগে চলে ফুটপাত দখল।

ফুটপাত ও রাস্তার একাংশ দখলে থাকায় ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীদের।

প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে ‘গ্যারেজ’ ও ‘স্ট্যান্ড’, যা নষ্ট করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের‌ পরিবেশ;অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ফুটপাত থেকে খাবার দোকান তুলে দেওয়া হয়েছিল, এসব ‘গ্যারেজ’ ও ‘স্ট্যান্ড’ও তুলে দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার প্রধান ফটক সংলগ্ন ফুটপাতে কথা হয় রিপন মিয়ার সঙ্গে। ভাই রফিকুল মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি গার্ড হওয়ায় নিজের ১১টি রিকশা এখানেই রাখেন বলে জানান তিনি।

“আগে ছাত্রী হলের (শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল) পরিত্যক্ত জায়গায় গাড়ি রাখতাম। কিন্তু ওখানে নির্মাণ কাজ চলায় এখানে আসছি। রাতে এখানেই রিকশা থাকে, আমি আমার ভাইয়ের সাথে ছাত্রদের হলে (সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল) থাকি।’

তিনি জানান, ধান কাটার মৌসুম থাকায় বেশিরভাগ চালক গ্রামে চলে গেছে।

“এজন্যই ফুটপাতে এত রিকশা চোখে পড়ছে, না হলে দেখা যেত না।’

স্ট্যান্ডে থাকা একটি রিকশার চালক লিটন জানান, তিনি যে রিকশা চালান তার মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ফরিদ আহমদ।

“তার ৮টা রিকশা এখানেই থাকে। উনার রিকশাই ভাড়ায় চালাই, মাঝে মাঝে মেরামতেরও কাজ করি।”

ফুটপাতের একপাশে কয়েক দশক ধরে ‘স্থায়ী আসন’ গেড়েছে ইঞ্জিন মেকানিক্স ও গাড়ির সরঞ্জামাদির দোকান।

এ অংশের রাস্তায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক বন্ধ করে বেশ কয়েক বছর ধরে স্ট্যান্ড চালাচ্ছেন মিনিবাস ও লেগুনার মালিকরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘নতুন একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের জন্য’ ফটকটি তারাই বন্ধ রেখেছেন।

এসব দখলকে ‘অপরাধ’ নয়, বরং ‘উত্তরাধিকার’ হিসেবেই দেখেন দখলদাররা।

ফুটপাতে দোকান বসানোর কারণ জানতেই তাদের কয়েকজনের ঝটপট উত্তর- ‘আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ছিলেন’, ‘উনার ছেলে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে’, ‘তার চাচা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন’।

এজন্য এখানে দোকান চালাতেও তাদের কোনো ‘ঝক্কিঝামেলা’ হয় না।

‘নিরাপদে’ দোকান চালানোর কথা জানিয়ে জাকির হোসেন নামের এক দোকানি বলেন, “এখানে আছি ১০-১২ বছর ধরে। কেউ কিছু বলে না, কাউকে দু’পয়সা দিতে হয় না। এক-দুইবার পুলিশ আসে, তখন দোকান বন্ধ রাখি। তারপর আবার চালাই।’’

আরেক দোকানি হাসিবুল ইসলাম জানান, তার বাবা ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কর্মচারী। তখন থেকেই তার দোকান।

“দোকান দিছি, ১০-১৫ বছর তো হবেই। গাড়ির স্ট্যান্ড থাকার কারণেই এখানে দোকান গড়ে ওঠেছে।”

ফটক সংশ্লিষ্ট ফুটপাত ও রাস্তায় দখলদারিত্বের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তাদের অভিযোগ, বারবার বলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ‘কান দেয় না’। 

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়েও একটু দম ফেলার জায়গা নেই। এখন তো ফুটপাতেও হাঁটা যায় নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ‘গ্যারেজ’ ও ‘স্ট্যান্ড’ এর কথা প্রক্টর নূর মোহাম্মদকে জানালে তিনি ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেন।

“আমি জয়েন করার আগে এখানে খাবারের দোকান ছিল। এখন তো নাই, আমরা ‍ওদের উঠিয়ে দিয়েছি।”

খাবারের দোকান উঠে গেলেও সেখানে নতুন করে রিকশা গ্যারেজ হয়েছে জানালে প্রক্টর বিষয়টি ‘গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে’ বলে আশ্বস্ত করেন।

“আমরা ওদের উঠিয়ে দেব। আমি বিষয়টি জানলাম, ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”