দখলে বন্দি ‘মুক্তাঙ্গন’

‘মুক্তাঙ্গন’ নাম হলেও দখলবাজদের কবল থেকে মুক্তি মেলেনি জিরো পয়েন্ট ও পুরানা পল্টন মোড়ের মাঝামাঝি ইতিহাসের নানা ঘটনার সাক্ষী পার্কটির।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2015, 05:09 AM
Updated : 20 Nov 2015, 07:23 AM

সারি করে রাখা গোটা পঞ্চাশ প্রাইভেট কার, টিনের একচালা ঘর, পুলিশের কক্ষ আর ছোট ছোট দোকান দেখে যে কারো কাছে মুক্তাঙ্গনকে গাড়ি রাখার জায়গা বলে মনে হতে পারে। আশি-নব্বইয়ের দশকে এই মুক্তাঙ্গনের অনেক সভা সমাবেশের পথ ধরেই বদলে গিয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস।

আশেপাশে সবুজ নেই; যত্রতত্র মূত্রত্যাগের ফলে দুর্গন্ধ সবখানে। কর্দমাক্ত এ পার্ককে নগরবাসী অনেকটা এড়িয়েই চলেন এখন।

বছরখানেক ধরেই মুক্তাঙ্গনে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করছেন চালক রাকিব হোসেন।

“অন্যদের দেখাদেখি আমিও এখানে গাড়ি রাখি। সরকার সরিয়ে দিলে চলে যাব। কিন্তু আমরা চলে গেলেও কেউ না কেউ ঠিকই গাড়ি রাখবে।”

আরেক চালক আসাদ মিয়া পার্কের ভেতরের দুর্গন্ধময় পরিবেশের কথা জানিয়ে বলেন, “আমরা তো এখানে ব্যবসা করছি, অন্য কারও দখলে থাকলে আরও নোংরা থাকত।”

পার্কের ভেতরে ও সামনের ফুটপাতে বসেছে একাধিক অস্থায়ী দোকান। একপাশে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য একটি কক্ষ তৈরি করে নিয়েছেন।

অস্থায়ী একটি দোকানের মালিক আলমগীর হোসেন জানান, কয়েকবছর ধরেই পার্কের ভেতরে গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ‘ঢাকা মাইক্রোবাস ও কার মালিক সমিতি’ নামের একটি সংগঠন।

পার্কের সিংহভাগ দখলের পাশাপাশি সেখানে পাকা দেয়ালের একটি মসজিদও নির্মাণ করেছে তারা।

পার্কের ভেতরে গিয়ে চালকদের হাকডাক শোনা গেলেও তাদের কেউ সংগঠনটির নেতাদের হদিস দিতে পারেননি। 

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পার্ক সংলগ্ন ফুটপাত মেরামতের কাজ শুরু করেছে।

কাজে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা পার্কের একাংশ দখল করে একচালা টিনের ঘর বানিয়েছেন। থাকার পাশাপাশি তাদের রান্নাও চলছে সেখানে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানান, কাজের সুবিধার জন্যই তারা এখানে বসবাস করছেন।

“কাজ করি এ এলাকায়, তাই এখানেই থাকার ব্যবস্থা করেছি আমরা। এতে কাজ করারও সুবিধা হয়।”

মুক্তাঙ্গনের এ দশা নিয়ে অসন্তুষ্ট অনেকেই। তারা বলছেন, সরকারের উদাসীনতার কারণেই ব্যস্ত রাস্তার পাশে দরকারি এই পার্কটি দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না।   

“আগে পার্কের মাঝখানে কিছু গাছ ছিল, দখলদাররা তাও কেটে ফেলেছে। একবার ওদের উচ্ছেদ করতে দেখেছিলাম, কিন্তু আবার ফিরে এসেছে,” আক্ষেপ নিয়ে বলেন পথচারী রহিম মিয়া।

১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুক্তাঙ্গনের পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন তিনি।

“ব্যস্ত এ এলাকায় সবসময় যানজট থাকে। লোকজন এখানে বসতে পারত, কিন্তু এখনতো সে সুযোগ নেই। একটি পার্ক এভাবে হারিয়ে গেল!”

ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী কাইমুল ইসলামও। 

“রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র এটি, এখানে সবধরনের মানুষ সময় কাটাতে পারত। এক সময় এখানে সভা-সমাবেশ হতো। এভাবে যে একটি পার্ক দখল হয়ে গেল, তা কি মন্ত্রী-এমপিদের চোখে পড়ে না? তারা কি কোনোদিন এখানে সভা-সমাবেশ করেননি?”

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কাপড়ের ব্যবসা করা কাইমুল বলেন, মুক্তাঙ্গনে সভা-সমাবেশ উন্মুক্ত করে দিলে তা ঢাকার যানজট নিরসনেও ভূমিকা রাখবে।

“এখানে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ থাকলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, প্রেসক্লাব ও নয়াপল্টনের মত জায়গায় রাজনৈতিক কার্যক্রমের জন্য যানজট সৃষ্টি হতো না।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মদ বেলাল বলেন, করপোরেশন দখলদারদের পুরোপুরি উচ্ছেদের চেষ্টা করেও পারেনি।

“পার্ক দখল করে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার এই ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ও অবৈধ। প্রায়ই ওদের উচ্ছেদ করা হয়। পরে আবার তারা চলে আসে।”

মুক্তাঙ্গন পার্ক যে এলাকার অন্তর্ভুক্ত সেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তবা জামান পপিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।