'জুরাসিক ওয়াল্ডর্' - স্পিলবার্গ আপনি কোথায়?

জঙ্গলের পাতার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকা এক বিরাট চোখ, হঠাৎ জান্তব বিকট চিৎকার, এরপর যেন রক্তে লুকিয়ে থাকা আদিম ভয় মূর্ত হয়ে উঠবে আপনার চোখের সামনে - হাজার বছর আগে বিলীন হয়ে যাওয়া ডায়নোসরের রূপে। ঠিক ধরেছেন, কথা হচ্ছে 'জুরাসিক' সিরিজ নিয়ে, যার সর্বশেষ সংযোজন 'জুরাসিক ওয়ার্ল্ড'।

ওমর শরীফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2015, 08:42 AM
Updated : 24 June 2015, 04:51 PM

পর্দায় অতিকায় ডায়নোসরদের দেখে নব্বইয়ের দশকের দর্শকরা চোখ বুজেছেন আতঙ্কে কিংবা হা করে তাকিয়ে দেখেছেন স্টিফেন স্পিলবার্গের জাদু।

নব্বইয়ের আগেও যে ডায়নোসর নিয়ে ছবি হয়নি তা নয়। তবে ১৯৯৩ সালে 'জুরাসিক পার্ক’ - এলো সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা স্পেশাল ইফেক্ট আর চমৎতকার গল্পকাঠামো নিয়ে । সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে স্পিলবার্গ তৈরি করলেন দ্বিতীয় পর্ব 'দি লস্ট ওয়ার্ল্ড: জুরাসিক পার্ক'।

তবে বুদ্ধিমান পরিচালক বোধহয় বুঝে গিয়েছিলেন পরের পর্ব তেমন নাও জমতে পারে। তাই ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া সিরিজের তৃতীয় ছবি 'জুরাসিক পার্ক থ্রি' পরিচালনা থেকে হাত গুটিয়ে নির্বাহী প্রযোজক হয়েই দায়িত্ব সারলেন।

এরপর এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়েছে। কম্পিউটার জেনারেটেড ইমাজেরির পাশাপাশি থ্রিডির মোহে মজেছেন হলিউডপ্রেমীরা।

থ্রিডির কল্যাণে ডায়নোসরগুলো এখন আরও জীবন্ত ও ভয়ঙ্করদর্শন। তবে এই পর্যন্তই। যারা আগের পর্বগুলো দেখেননি তাদের এই ছবি বেশ লাগবে। তবে যারা আগের ছবিগুলো সঙ্গে মেলাতে যাবেন তারাই টের পাবেন স্পিলবার্গের মুনশিয়ানার অভাব।

সিনেমার মূল গল্পে তেমন একটা নতুনত্ব নেই। অনেকটা প্রথম পর্বের আদলে তৈরি। জুরাসিক পার্কে আকস্মিকভাবে ছুটে যাওয়া ডায়নোসরের হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে অ্যাকশন জারিয়ে যাওয়া।

তবে আগের পর্বগুলোতে দেখানো হয়েছিল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহায়তায় ডায়নোসরদের জন্ম আর তারপর টি রেক্সের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার কাহিনি।

আর এই ছবিতে দেখানো হয় প্রাগৈতিহাসিক এই প্রাণীদের নিয়ে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক বানিয়ে জমিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। দর্শকদের আকৃষ্ট করতে প্রাণীর সঙ্গে ডায়নোসরের ডিএনএ মিলিয়ে অতিকায় সব দানব তৈরি করা হচ্ছে। কর্পোরেট প্রক্রিয়ায় ডায়নোসর উৎপাদনের এই খেলায় তৈরি হয়েছে এমন এক জন্তু যা টিরেক্সের চেয়েও হিংস্র আর রেপটাইল ডায়নোসরের চেয়েও বুদ্ধিমান।

শুধু তাই নয় রেপটাইলদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বশে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক পক্ষ আবার এদের ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের ফন্দি আঁটছে।

ডায়নোসরদের প্রশিক্ষক ওয়েনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন 'গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্ল্যালাক্সি' খ্যাত ক্রিস প্র্যাট। সেনাবাহিনিতে ছিলেন তাই মারামারি আর অস্ত্র চালনাতেও পারদর্শী তিনি। ডায়নোসরের আক্রমণ থেকে রক্ষায় ত্রাণকর্তা হিসেবে যে তিনিই আর্বিভূত হবেন তা ছবির প্রথম থেকেই বোঝা যায়। পার্কের ব্যবস্থাপক ক্লেয়াররের চরিত্রে ব্রাইস ডালাস হাওয়ার্ডকে চলচ্চিত্রের শোভা বর্ধন আর হাস্যরস সৃষ্টির অনুষঙ্গ বলেই মনে হয়। তবে দুই কিশোর চরিত্রে নিক রবিনসন এবং টায় সিম্পকিন্সের সাবলীল অভিনয় দর্শককে আনন্দ দেবে।

জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের ক্ষ্যাপাটে কর্ণধারের চরিত্রে ভারতীয় অভিনেতা ইরফান খান তার সর্বোচ্চটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু চরিত্রটি অনেক ক্ষেত্রেই খাপছাড়া এবং অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। সিনেমার মাঝপথে চরিত্রটির আকস্মিক মৃত্যুও মনে তেমন একটা দাগ কাটেনা।

তবে দু ঘণ্টা ধরে পর্দায় ডায়নোসরদের মারামারি দেখতে চাইলে সিনেমাটি মন্দ নয়। বিশেষ করে সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে টি-রেক্স বনাম ইনডমিনাস-রেক্সের লড়াই তাক লাগাবেই। আর ঘটছেও তাই। বক্স-অফিসে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে সিনেমাটি। দ্রুততম সময়ে শত কোটি ডলার আয়ের পথে থাকা সিনেমাটি দেখতে তাই টিকিট কাটা যেতেই পারে।