‘এ দেশেও আমার দর্শক আছে!’

প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের নাতি তিনি। মা সুনেত্রা ঘটকও ছিলেন চলচ্চিত্রের মানুষ। তবে মা আর মাতামহের পরিচয়ে নয়, নিজ অভিনয়গুণেই পরমব্রত এখন পশ্চিমবঙ্গের শক্তিমান অভিনেতাদের মধ্যে একজন। বাংলাদেশি সিনেমায় অভিনয় করতে এই অভিনেতা এখন বাংলাদেশে।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2015, 08:35 AM
Updated : 23 April 2015, 11:18 AM

অনিমেষ আইচ পরিচালিত ‘ভয়ংকর সুন্দর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি।  ভারতীয় লেখক মতি নন্দীর ‘জলের ঘূর্ণী ও বকবক শব্দ’ অবলম্বনে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে পরমব্রত অভিনয় করবেন বাংলাদেশের নাট্যাভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনার বিপরীতে। সম্প্রতি সিনেমাটি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

গ্লিটজ: প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সিনেমাতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন। পারিবারিক সূত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। কেমন লাগছে?

পরমব্রত: সত্যিই দারুণ লাগছে। বাংলাদেশে এসেছি অনেকবার। এ দেশটির সঙ্গে আমার পারিবারিক বন্ধনের কথা মনে হলে অন্যরকম রোমাঞ্চ বোধ হয়। বাংলাদেশ নিয়ে অনেক পড়াশোনাও করেছি আমি। আমি ভাবতাম এ দেশে আমাকে আর তেমন কে চিনবে! গেল বার যখন এসেছিলাম তখন রাস্তায় বের হতেই লোকে আমাকে ছেঁকে ধরলো। আমার সিনেমা নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করলো। আমি খুব অবাক হয়েছি। এ দেশেও আমার দর্শক আছে!

গ্লিটজ: বাংলাদেশি নির্মাতাদের তরফ থেকে এর আগেও আপনি প্রস্তাব পেয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে দিয়ে অনিমেষকেই কেন হ্যাঁ বললেন?

পরমব্রত: অনিমেষকে আমার বড় পাগলাটে, খ্যাপাটে মনে হয়েছে। অনিমেষের মধ্যে সিনেমা নিয়ে প্যাশন আছে। তার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো সে যা বানাবে খুব যত্ন নিয়ে বানাবে। আর সব পরিচালকের মতো সে নানা রকম গাণিতিক হিসাব-নিকাশের গল্প আমার কাছে পারেনি। এর আগে যেসব বাংলাদেশি নির্মাতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তাদের থেকে অনিমেষের ভিন্নতা হলো গল্প চয়নে। অনিমেষ গল্প চয়নে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে, যা অন্যরা পারেনি।

গ্লিটজ: আপনার সহঅভিনেত্রী ভাবনাকে নিয়ে কি ভাবছেন?

পরমব্রত: ভাবনা সম্পর্কে খুব একটা জানি না আমি। (পাশে বসা ভাবনাকে দেখিয়ে) দেখুন, ভাবনা খুব সুন্দরী। ভাবনা নাকি খুব ভালো নাচিয়ে। আমি ভাই মোটেই নাচানাচি করতে পারি  না। আমাকে দিয়ে নাচ মোটেই হয় না। তবে অনিমেষের কাছ থেকে শুনেছি, ও নাটকে খুব ভালো কাজ করছে। ওর প্রথম সিনেমার হিরো আমি। দেখা যাক।  

গ্লিটজ: অভিনেতা হিসেবে আপনাকে সবাই ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রের নায়ক বলেই ভাবছে। নিজেকে কোন ঘরানার অভিনেতা মনে করেন?

পরমব্রত: অফ ট্র্যাক ট্যাগটা কী করে যেন আমার নামের সঙ্গে সেঁটে গেলো! আপনারাও বলছেন আমি অফ ট্র্যাকের অভিনেতা। অভিনেতা হিসেবে আমি তো একে প্রপার সিগনেচার হিসেবেই দেখছি।

গ্লিটজ: আপনার অভিনীত ‘কাদম্বরী’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আপনি। আপনার কাছে রবীন্দ্রনাথ কেমন? 

পরমব্রত: আমি যখন রবীন্দ্রনাথের চরিত্রটি করার প্রস্তাব পাই, তখন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে খুব পড়াশোনা করতে শুরু করলাম। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটি। আমার কাছে মনে হয় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সবার ধারণা এক হতে পারে না। আমি ঠিক করলাম আমি আমার মতো করে রবীন্দ্রনাথকে ফুটিয়ে তুলবো। কিশোর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমি পড়তে শুরু করলাম। তিনি যখন ‘কাদম্বরী’ লিখেছিলেন তখন তার নানা কার্যক্রম নিয়ে আমি জানতে লাগলাম। ব্যাপারটি তখন খুব সোজা হয়ে গেলো।

গ্লিটজ: চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

পরমব্রত: আমি সার্বিকভাবে স্বয়ং সম্পূর্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সিনেমার গল্পের সঠিক চিত্রায়ন। চরিত্রের ব্যাপ্তি নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো চরিত্রের গুরুত্ব। প্রায় দেখা যাচ্ছে, চিত্রনাট্যের সঙ্গে সিনেমার কোনো মিলই থাকছে না। দুটির মধ্যে তফাৎ থেকেই যাচ্ছে। এ দুটি এক হয়ে গেলে ব্যাপারটি দারুণ হয়।

অভিনেতা হিসেবে আমি বলবো, আমি স্বাধীনচেতা। টালিগঞ্জ বলুন আর বলিউড বলুন, আমি আমার মতো করে পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। ব্যাপারটি সত্যি এনজয় করছি।

গ্লিটজ: অভিনেতা পরিচয়ের পাশাপাশি আপনি একজন নির্মাতাও। টালিগঞ্জ কি সত্যিই সিনেমার নতুন কোনো ভাষা তৈরি করতে পারছে?

পরমব্রত: দেখুন, সিনেমার বিষয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সিনেমার সম্পাদনা-পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করছে সময়ের উপর। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক থেকে শুরু করে সবাই তাদের সময়ে আলাদাভাবে চলচ্চিত্রের ভাষা তৈরি করতে পেরেছিলেন। এ সময়ের পরিচালকরা সেই ধারাটি অব্যাহত রেখেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে কাজ করছে তারা।

গ্লিটজ: আপনার সমসাময়িক অনেক অভিনেতাই ঢাকাই সিনেমাতে নিয়মিত হয়ে উঠেছে। কজন বেশ দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিও করে ফেলেছে। আপনিও সেই পথে হাঁটবেন কি?

পরমব্রত: আমি এক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম। টালিগঞ্জের অভিনেতা যারা এখন ঢাকাতে কাজ করছে, তারা সবাই যৌথ প্রযোজনায় কাজ করছে। সম্ভবত আমি আমার প্রজন্মের প্রথম অভিনেতা যে পুরোপুরি বাংলাদেশি প্রযোজনার সিনেমাতে কাজ করছে। ওসব নাচ-গাননির্ভর বাণিজ্যিক সিনেমা আমি টালিগঞ্জেও করিনি। এ ধরনের সিনেমা আমি করতেও চাই না।

গ্লিটজ: এক মাস থাকবেন বাংলাদেশে। শুটিংয়ের ফাঁকে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কি পরিকল্পনা আছে?

পরমব্রত: সবে তো এলাম। এখনও ভাবিনি কিছু। এখন মাথায় ‘ভয়ংকর সুন্দর’- এর কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।