১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির টাইটেল ওঠার আগেই খণ্ড খণ্ড দৃশ্যে দেখা যায় হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাকের ফলে ডা. মনীষের মৃত্যু হয় গভীর রাতে। সে সময় তার পাশে ছিল আট বছরের মেয়ে অদিতি। স্ত্রী সরোজিনী ছিলেন মাদ্রাজে।
টাইটেলের পর ছবি শুরু হতে দেখা গেল, মনীষের মৃত্যুর পর অনেক বছর পার হয়ে গেছে। ডাক্তারি পাশ করে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরেছে অদিতি। ১৯ এপ্রিল তার বাবা মনীষের মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু মা সরোজিনীর সে কথা মনে নেই। সেদিন ভোরেই তিনি খবর পেয়েছেন যে, মর্যাদাময় এক সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। বাড়িতে খবরের কাগজ, টিভির সাংবাদিকদের ভিড়। সেসব সামলাচ্ছেন সরোজিনীর বন্ধু সোমনাথ। অন্যদিকে মায়ের প্রতি নিঃস্পৃহ অদিতি অপেক্ষা করছে তার প্রেমিক সুদীপের ফোনের। অদিতি ছোটবেলা থেকে তার মাকে অপছন্দ করে। কারণ ব্যস্ত মায়ের কাছে নিজেকে উপেক্ষিত মনে হয়েছে তার। মায়ের চেয়ে বরং গৃহকর্মী বেলা তার বেশি আপন।
প্রচণ্ড কষ্টে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করে অদিতি। কিন্তু এই কষ্টের কথা সে জানতে দেয় না কাউকে। এদিকে সাফল্যে আনন্দিত সরোজিনী মাদ্রাজ রওনা হয় তার গুরুকে প্রণাম করার উদ্দেশ্যে। সঙ্গে থাকে বন্ধু সোমনাথ। সোমনাথ সরোজিনীর দীর্ঘ দিনের প্রেমিক ও বন্ধু।
মা চলে গেলে পর অদিতি সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার। বেলাকে ছুটি দেয় এক দিনের জন্য। বাবার মৃত্যুর দিনটাকেই সে বেছে নেয় নিজের মৃত্যুর দিন হিসেবে। ঠিক সে সময় শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। প্লেন ধরতে না পেরে বাড়ি ফিরে আসে সরোজিনী।
বেলাকে ছুটি দেওয়ায় অদিতির উপর বিরক্ত হয় সে। বিদ্যুৎহীন বাড়িতে দুজনের টুকরো আলাপচারিতা চলতে থাকে রান্নার ফাঁকে। অদিতির ঘরে গিয়ে আকষ্মিকভাবে সরোজিনী আবিস্কার করে তার সুইসাইড নোট এবং ঘুমের ওষুধ।প্রবল এক আতংকে সরোজিনী উপলব্ধি করে আরেকটু হলেই কি ভয়াবহ সর্বনাশ হয়ে যেতে পারতো।
সিনেমাটি শেষ হয় সকালের দৃশ্যের মধ্য দিয়ে। তখন ঝড় থেমে গেছে। সুদীপের কাছ থেকে ফোন পায় অদিতি। ক্ষমা চায় সে। কিন্তু বোঝা যায় না, অদিতি তাকে ক্ষমা করবে কি না। এ কথাও পরিষ্কার হয় না যে মাকে পুরোপুরি ক্ষমা করতে পেরেছে কি না মেয়ে। গতানুগতিক মধুরেণ সমাপয়েৎ নয়, বরং এক দোলাচলের মধ্য দিয়েই যে এগিয়ে যায় জীবন তারই ইঙ্গিতবাহী সমাপ্তির দৃশ্য।
সরোজিনী চরিত্রে অপর্ণা সেন, অদিতি চরিত্রে দেবশ্রী রায়, সোমনাথ চরিত্রে দীপংকর দে, বেলা চরিত্রে চিত্রা সেন এবং সুদীপ চরিত্রে প্রসেনজিৎ রায় অভিনয় করেন। মনীষ চরিত্রে ছিলেন বোধিস্বত্ত্ব মজুমদার। কয়েকটি চরিত্র, একটি বাড়িতে অধিকাংশ দৃশ্যের চিত্রায়ন এবং ঘটনার ঘনঘটা না থাকা সত্ত্বেও ছবিটি কখনো একঘেঁয়ে হয়ে ওঠে না বা শ্লথ গতির বলেও মনে হয় না। বরং দর্শক উন্মুখ হয়ে উপভোগ করে মা-মেয়ের সম্পর্কের টানাপোড়েন।
‘উনিশে এপ্রিল’ ১৯৯৫ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আসরে সেরা ছবি হিসেবে স্বর্ণ কমল জয় করে। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে দেবশ্রী রায় রৌপ্য কমল জয় করেন।
অসাধারণ পরিচালনা ও অনবদ্য অভিনয়ে বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র ধারায় ক্ল্যাসিক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে‘উনিশে এপ্রিল’।