'ইন্ডিয়াস ডটার' নিষিদ্ধ: ভারতের সত্য গোপনের চেষ্টা?

বিবিসির তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ নিয়ে ভারতজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। ২০১৩ সালে নয়াদিল্লীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রটির প্রচার নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে হিন্দি সিনেজগতের তারকারা দেখছেন নেতিবাচক দৃষ্টিতে। অনেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘উটপাখি মনোভাব’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

গ্লিটজ ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2015, 12:31 PM
Updated : 6 March 2015, 12:31 PM

ব্রিটিশ নির্মাতা লেজলি অডউইনের এই তথ্যচিত্রটিতে ধর্ষকদের মধ্যে একজন, মুকেশ সিং-এর সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে।সাক্ষাৎকারে মুকেশ ধর্ষণের জন্য নারীদেরও দায়ী করেন। বেশিরভাগ নারীই শালীন পোশাক না পরায় পুরুষরা উত্তেজিত হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া,  রাতে নারীদের একা চলাফেরা, বিশেষত সিনেমাহল থেকে ফেরা বা প্রেমিকের সঙ্গে চলাফেরাকেও দুষেন ওই ধর্ষক। তিনি আরও বলেন, ধর্ষিতা যদি ধর্ষণ ঠেকানোর চেষ্টা না করতেন তাহলে তার মৃত্যু হতো না।

এই সাক্ষাৎকারের কারণেই মূলত তথ্যচিত্রটি প্রচারের ব্যাপারে সরকারি মহল থেকে আপত্তি ওঠে। ভারতে এটির প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে বলা হয়, অন্য দেশেও তথ্যচিত্রটির প্রচার ঠেকানোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বুধবার রাতেই যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিবিসিতে তথ্যচিত্রটি প্রচারিত হয়।

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নির্মাতা হানসাল মেহতা এ ব্যাপারে বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “ এই ব্যাপারে আমার একমাত্র প্রতিক্রিয়া হল, সরকারকেই আসলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। সিনেমা হল আয়নার মতো। আর আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে এই ধরনের জঘন্য অপরাধও আমাদের সহ্য করতে হয়। তার ওপর সরকার এখন আমাদের আয়নাও দেখতে দেবে না!”

মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছে হিন্দি সিনেমার তারকারা।

অভিনেতা বোমান ইরানির টুইট, “তথ্যচিত্র হল সত্য থেকে তৈরি গল্প। এই তথ্যচিত্র কেন বানানো হল- সেই প্রশ্ন করার আগে আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত এতে প্রকাশিত সত্যটি নিয়ে।”

নির্মাতা অনুরাগ বসু মনে করেন, তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ না করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। তার টুইট, “এইমাত্র ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ দেখলাম। নিষিদ্ধ না করে এটা দেখা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা উচিত। আমাদের মনোভাব আসলে উটপাখির মতো। ‘ইন্ডিয়াস ডটার’কে নিষিদ্ধ করাটা আসলে বালুতে মাথা গুঁজে সত্যকে অস্বীকার করার মতো।”

নির্মাতা অনুভব সিনহার টুইট, “ এইমাত্র ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ দেখে শেষ করলাম। কেন তারা এটিকে নিষিদ্ধ করলো? কেন? তারা কি সত্যিই তথ্যচিত্রটি দেখেছে?”

অনেকেই মনে করছেন, তথ্যচিত্রটিতে ধর্ষকের মনোভাব প্রকাশ করার মাধ্যমে আসলে সত্যেরই উন্মোচন হয়েছে। এর ফলে সতর্ক হওয়ার সুযোগও পাওয়া যাবে।

অভিনেত্রী জেনেলিয়া ডিসুজার টুইট, “দয়া করে ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ দেখুন। আমাদের আসলে বুঝতে হবে এবং আমাদের ভেতর ও চারপাশে থাকা অশুভ শক্তিকে নির্মূল করতে হবে।”

অভিনেত্রী এশা গুপ্তার টুইট, “অনেক হয়েছে কঠিন সত্যকে গোপন করা। আমি ‘ইন্ডিয়াস ডটার’-এর পক্ষে আছি। সত্যকে প্রকাশ করা উচিত, যাতে আমরা আমাদের চারপাশে থাকা অশুভ শক্তির সম্পর্কে জানতে পারি।”

অনেকে বলছেন, তথ্যচিত্রটির মাধ্যমে ভারতীয় পুরুষদের মনোভাব নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে, যা আসলে সবার জন্যই লজ্জার।

নির্মাতা পুনিত মালহোত্রা লেখেন, “সরকার কেন এই তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করছে, বিষয়টি আমাকে খুবই পীড়ন করছে। সমাজের আয়না হিসেবে এটি সবার সামনে তুলে ধরা উচিত; যাতে করে সবাই বুঝতে পারে আমরা, পুরুষেরা আসলে কীভাবে চিন্তা করি।”

অভিনেতা রাজককুমার রাওয়ের টুইট, “এরকম পুরুষদের সঙ্গে একইদেশে বাস করাটাও লজ্জার। আমরা আসলে কী হয়ে গেছি! লজ্জা।”

তারকাদের অনেকেই বলছেন, এভাবে তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ভারত সরকার আসলে রক্ষণশীলতারই পরিচয় দিচ্ছে। এতে করে দেশ আরও পিছিয়ে পরবে। 

সঞ্জয় গুপ্তার টুইট, “গরুর মাংস নিষিদ্ধ, তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ, সিনেমা নিষিদ্ধ, মুসলমানদের জন্য পাঁচ শতাংশর কোটা বাতিল। আমরা আসলে কোথায় চলেছি? খারাপ দিনই আসলে ভাল ছিল।”

অভিনেতা ভির দাসের টুইট, “আমি জানি না তথ্যচিত্রটিতে এমন কী আছে। তবে আমার মনে হচ্ছে, এই দেশ জাতীয় লজ্জার বিরূদ্ধে অনেক বেশি লড়ছে, দেশের নারীদের রক্ষা করার তুলনায়।”