উচ্চাঙ্গসংগীতে আরাধনার রাত

কোন কোন ঘরানায় উচ্চাঙ্গসংগীত চর্চা উপসনার অপর নাম, বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সেই কথাই আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন পণ্ডিত রাজন মিশ্র।

সমবেত জাতীয় সংগীতে উৎসবের সূচনা

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব এবার পাঁচ দিন

গিরিজা, তেজেন্দ্রনারায়ণ, কৌশিকীর পরিবেশনা

তারকাখ্যাতিকে গুরুত্ব দেন না কৌশিকী

মিশ্র ভাতৃদ্বয়ের জেষ্ঠ্য পণ্ডিত রাজন বলেন, “সংগীত আমাদের ভালোবাসা ও আরাধনা। সম্ভব হলে আপনারাও অংশ নিতে পারেন।” পণ্ডিত রাজন মিশ্র ও পণ্ডিত সাজন মিশ্র বেনারাস ঘরানার খেয়াল গাইয়ে

হিসেবে বিশেষ পরিচিত। বংশ পরম্পরায় দীক্ষাপ্রাপ্ত দুই ভাই  বিলম্বিত, দ্রুত খেয়াল এবং তারানা পরিবেশন করেন ভৈরব রাগে। প্রলম্বিত বিলম্বিতে তারা একের পর এক স্বর বিস্তার করেন।

এরপর ললিত রাগে খেয়াল পরিবেশন শেষে শোনান ভৈরবী রাগের বিখ্যাত ঠুমরী ‘বাবুল মোরা’। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত দেন ওস্তাদ আকরাম খান এবং হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায়।

দ্বিতীয় দিনের উৎসব শুরু হয় গৌতম সরকার, মোহম্মদ জাকির হোসেন, এনামুল হক ও বিশ্বজিত নট্টের সম্মিলিত তালবাদ্য পরিবেশনার মধ্যমে। তারা তিনতালের লহড়া পরিবেশন করেন।

এদিন মৃদঙ্গ নিয়ে মঞ্চে ওঠেন গুরু কড়াইকুরি মনি। তার সঙ্গে আরও ছিলেন ঘটামশিল্পী সুরেশ বৈদ্যনাথন, খঞ্জিরাশিল্পী অমৃত নাটরাজ এবং তাদের তাল সহযোগী ছিলেন নারায় নারায়না।

পরিবেশনার শুরুতেই সুরেশ বৈদ্যনাথন গুরু কড়াইকুরির পক্ষ থেকে কর্নাটকি সংগীত এবং মৃদঙ্গর অবস্থান বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “সুরের জীবন ও গতি দান করে‘তালবাদ্য রাজ’ মৃদঙ্গ।”

পরবর্তী দেড় ঘণ্টায় তিন যন্ত্রের ‘সওয়াল জওয়াব’-এর কোনো পর্যায়ে লুকোচুরি খেলা, কখনওবা ঝগড়া, আবার হঠাৎ ধমকের সুরে বোল তুলে দর্শক-হৃদয়ে কাঁপন তোলেন গুণী তিন শিল্পী।

পরিবেশনা শেষ হতেই উপস্থাপক জানান, স্টেডিয়ামের ভেতর উপস্থিত ৪০ হাজারেরও বেশি দর্শক।

পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার বাজনা না শুনলেও নাম শোনেনি এমন সংগীতপ্রেমীর দেখা পাওয়া ভার। তারই সুযোগ্য সন্তান রাহুল কুমার শর্মা। পণ্ডিত সত্যজিত তালওয়ালকরের তবলার ‘প্রলয়ের’ মাঝে সন্তুরের ‘স্বর্গীয়

সুর’ বুনে দিলেন নবীন শর্মা। মত্ত তালে কৌশিকধ্বণি রাগ যেন তাদের দুজনার পরিবেশনায় নতুন রূপে ধরা দিলো।

আরেক বিখ্যাত ভাতৃদ্বয় পণ্ডিত উমাকান্ত গুন্ডেচ্চা ও পণ্ডিত রমাকান্ত গুন্ডেচ্চা গত আসরে মহিউদ্দিন ডাগরের রুদ্রবীণা পরিবেশনা স্মরণ করিয়ে দিলেন ।

ডাগরবানি ধ্রুপদিয়া ভাতৃদ্বয় কণ্ঠ খাদে নামিয়ে যোগ রাগের প্রলম্বিত আলাপে পুরো স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে তুলছিলেন বারবার। শিবরঞ্জনি রাগে গায়ত্রীও পরিবেশন করেন তারা। পাখওয়াজে সঙ্গত দেন তাদের আরেক ভাই অখিলেশ গুন্ডেচ্চা।

তরুণ সরোদিয়া আবির হোসেনও যথেস্ট ব্যাঞ্জণা সৃষ্টি করেন ওস্তাদ আকরাম খানের তবলার বোলের সঙ্গে। তিনি রাগ জয়জয়ন্তী ও মিশ্র পিলু বাজিয়েছেন।

কণ্ঠশিল্পী সুপ্রিয়া দাশও নন্দ রাগে খেয়াল ও কাফি রাগে ঠুমরী পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সঙ্গত দেন সবুজ আহমেদ এবং হারমোনিয়ামে সঞ্জীবন সান্যাল।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে পাঁচ দিনব্যাপী বার্ষিক বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের তৃতীয় দিনের আয়োজন আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয় ২৯শে নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায়।

তৃতীয় দিনের উৎসবে অংশ নিবেন— নিশিত দে (সেতার), মঞ্জুষা পাতিল (কন্ঠ), শিব কুমার শর্মা (সন্তুর), অসিত রায় (কণ্ঠ- ধ্রুপদ), অরুণা সাইরাম (কণ্ঠ), কুশল দাশ (সেতার) এবং উলহাস কাশালকার (কণ্ঠ)।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পরিবেশনায় অংশ নেবেন বেঙ্গল ‘পরম্পরা’-এর একদল নবীন

শিক্ষার্থী।

ছবি: বেঙ্গল ফাউণ্ডেশন।