‘ভুল করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি’

সহজ কথায় তিনি জীবনের জটিলতার ভাঁজ খোলেন। নিজেও কথা বলেন অকপটে। সপ্তাহখানেক আগে ঢাকায় এসেছিলেন ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানের শিল্পী অনুপম রায়। আড্ডায় শোনালেন গান ও গানের বাইরের নানা গল্প।

চিন্তামন তুষারচিন্তামন তুষারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2014, 10:11 AM
Updated : 19 Oct 2014, 06:55 AM

সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুপমের আলাপচারিতার অংশবিশেষ গ্লিটজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন চিন্তামন তুষার।

গ্লিটজ: ‘বাক্যবাগীশ’ অ্যালবাম নিয়ে আপনি বলেছেন — গানের কথা বা চিন্তার দিক থেকে আপনি অন্য জায়গায় সরে এসেছেন। আপনার আগের অ্যালবাম দুটিতে প্রেমের গান প্রাধ্যান্য পেয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি প্রেমের গান থেকে সরে এলেন কেন?

অনুপম: এই অ্যালবামটা সেভাবেই ভাবা হয়েছে যে— অনেক হলো প্রেমের গান, এবার একটু বিরতি নেই। কারণ আমার আশেপাশে অনেক ঘটনা ঘটছে। সেসব নিয়ে আমার অনেক ধারণা তৈরি হচ্ছে, গানও তৈরি হচ্ছে কিছু। সেই গানগুলো আমি কোথায় দেবো? এদিকে আমি দুই ফিল্ডে কাজ করি— একটা হচ্ছে ফিল্মি-মিউজিক, অন্যটি হচ্ছে ননফিল্মি-মিউজিক। বছরে ফিল্মি-মিউজিকের গান রিলিজের একটা তথ্য দেই— গতবছর পঁচিশটি গান মুক্তি পেয়েছে আমার। এর মধ্যে প্রেমের গান এমনিতেই রিলিজ হচ্ছে। এই ‘বোবা টানেল’ বলুন বা যে গানগুলো ‘চতুষ্কোণ’, ‘হাইওয়ে’ সিনেমায় রয়েছে। কিন্তু ‘বাবুরে’ বা ‘যে সমাজে’ জাতীয় গানগুলো ফিল্মে দেওয়ার স্কোপ পাচ্ছি না। তাই একটা স্বতন্ত্র্য অ্যালবাম করেছি যেখানে একটু সিরিয়াস এবং সমাজকেন্দ্রীক কথা রয়েছে।

গ্লিটজ: প্রথম দুটি অ্যালবামের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের অ্যালবামের সংগীতায়োজনে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। ঢোল, তবলা ব্যবহার করেছেন। এসরাজ, বেহালাও ব্যবহার করেছেন বলছেন। মেলোডির প্রতি একটা দুবর্লতা আছে আপনার। শেষ পর্যন্ত কী দাড়াচ্ছে?

অনুপম: বেইজ, গিটার, কিবোর্ড, ড্রামস নিয়ে আজকাল আমরা লাইভ পারফর্ম করছি। বলা যায় ব্যান্ড ফর্মেটে গান করছি। এখন ব্যাপার হচ্ছে, এর বাইরেও আমার একটা অস্তিত্ব আছে। এর বাইরেও আমি আমার সাউন্ডটাকে নিয়ে যেতে পারি। সে কারণেই আমি চেষ্টা করি, অ্যালবামের দুয়েকটা গানে নিজের সাউন্ড বজায় রেখেই যেনো একটু ইন্ডিয়ান বা একটু মেলোডির এলিমেন্টস আসে! এই অ্যালবামে ভায়োলিন ব্যবহার করা হয়েছে দুটি জায়গায়। তবলা, ঢোলও এসেছে। খুব বিদেশি না হয়ে যে গ্রুভটা বাজবে, তাতে আমাদের দেশের গন্ধ, মটির গন্ধ যদি একটু আসতে পারে! তাতে আমার নিজের ভালো লাগবে।

গ্লিটজ: আপনার গানে শব্দের ব্যবহারটা অন্যরকম। সে বিষয়ে ‍কিছু বলুন?

অনুপম: যখন শুরু করি তখন এত কিছু ভেবে লিখিনি আমি। প্রশ্নগুলো তাই পরেই আসতে শুরু করেছে। এসব হঠাৎ করেই এসেছে বলা যায়। এটা আমার স্টাইলও হতে পারে আবার ধর্মও বলতে পারেন। আর এসব খুব সচেতনভাবে করেছি তা না। গান লেখা শুরু করেছিলাম খুব অল্প বয়সে। তখন আমার আশেপাশে যা হচ্ছে তাই দেখে, সেসব নিয়ে পড়াশুনা করেই লেখা শুরু করেছিলাম। একটু ভিন্নভাবে কিছু করতে চেয়েছিলাম। এর পেছনে পেছনে বাংলা কবিতাও খুব বেশি প্রভাব ফেলেছে। বাংলা শব্দ ভাণ্ডার থেকে আমি অনেক কবিতা ধার করে এনেছি বলা যেতে পারে। কিছু শব্দ চুরি করেছি, এও বলা যেতে পারে। আর লিরিককে খুব সাধারণ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যে ভাষায় আমরা কথা বলি সেটা থেকে অন্য রকম যেনো না শোনায়। নিজের সঙ্গে যেনো একদম মিশে যায়। কিন্তু তারপরও শব্দতো বহুবার ব্যাবহৃত হয়। শুধু কোন শব্দের পরে কোন শব্দ ব্যবহার করা হবে সেটা বারবার নতুন করে করাই যায়। আমিও সেই চেষ্টাই করি।

গ্লিটজ: আপনার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং কিন্তু লেখালেখি করছেন দেদারসে...

অনুপম: হ্যা, ওটা ভুল করে পড়া হয়ে গেছিল। নিজেরই মনে হয়, মাথা থেকে পা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারের কোনো লক্ষণই নেই আমার।

গ্লিটজ: আপনি বলছিলেন, আপনাদের স্টেটে সলো আর্টিস্টরা তেমন সম্মান বা গুরুত্ব পায় না। সে কারণেই কী সলো ক্যারিয়ারের আগে সিনেমার গানে এসেছেন?

ছবি:আসিফ মাহমুদ অভি /বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

অনুপম:
আমার সিনেমায় আসা হয়েছে কাকতালীয়ভাবে। আমার বন্ধু সৃজিত মুখোপাধ্যায় তার প্রথম সিনেমায় আমার গানটি ব্যবহার করেছিলো। প্রথমেই একটা গান জনপ্রিয় হওয়াতে লোকে ভাবতে শুরু করে যে— ‘একে দিয়েই সিনেমার গান করাতে থাকি। তাহলে গান জনপ্রিয় হতেই থাকবে।’ এবং হচ্ছেও তাই। ‘চতুষ্কোণ’-এর সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সিনেমায় মিউজিক করবো— এমনটা কিন্তু আমি ছোটবেলায় বা কোনোদিনও ভাবিনি।

গ্লিটজ: আপনাকে সম্ভবত ইদানিং একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বারবার, সৃজিত তার ‘মিশর রহস্য’ সিনেমায় আপনাকে দিয়ে কাজ করাননি। তার পরবর্তী কোনো প্রজেক্টে কাজ করছেন কি?

অনুপম: ‘চতুষ্কোণ’-এর পর আগামী দুটি সিনেমায় বোধহয় আমি কাজ করছি না। দেখুন সে হচ্ছে ডিরেক্টর। কাকে নেবে বা নেবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তার থাকা উচিৎ। এখানে আমার হস্তক্ষেপ না করাই ভালো। তার যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়ে কাজ করুক। আমার কোনো সমস্যাই নেই।

গ্লিটজ: আপনি তো আপনার ব্যান্ডের সদস্যদের নিয়েই সিনেমার কাজগুলো করেন…

অনুপম: সবসময় হয় না। অন্যান্য ব্যান্ডের মতো আমাদেরও একটা সাউন্ড আছে, লিমিটেশন আছে। ওই পপ, রক ছাড়াও মিউজিকের জায়গাটা বিশাল। সুতরাং, আমরা ইন্ড্রাস্টির অনেক মিউজিশিয়ানের সঙ্গে কাজ করি এবং সবাই আমাদের বন্ধু। সবাই আমাদের সঙ্গে কাজ করতে খুব ভালোবাসে এবং সেই পরিবেশটাও খুব ভালো।

গ্লিটজ: ‘চলো পাল্টাই’ সিনেমায় আপনার ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’ গানটাকে কিন্তু অনায়াসেই একটা প্রেমের গান বলা যায়।

অনুপম: ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’ গানটি মূলত প্রেমের গান। গানটি অনেক আগে লেখা। মূল লাইন ছিলো— ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত/আমি প্রেমের প্রথম চিহ্ন রেখে যাই’। কিন্তু শুনলাম মিনেমাটি বাবা আর ছেলের গল্প নিয়ে, আমিও লাইন দিলাম পাল্টে। পাল্টে দিয়ে ওটাকে একটা অন্যরকম গান বানিয়ে বলা যায় বিক্রি করে দিলাম।

গ্লিটজ: আপনাকে এরকমভাবে অনেক গানই পাল্টাতে হয়েছে। ‘বেঁচে খাকার গান’টাও পাল্টেছেন…

অনুপম: হ্যা, ওই গানটিরও কিছু লাইন পাল্টাতে হয়েছে। সৃজিত দা পুরো গানটাই জানতো এবং কেনো লেখা হয়েছে বা কি সমাচার! ওটা সব রকমের শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য লেখা হয়েছে। সেইসব পাল্টে সেটাকে একদম ছবির উপযুক্ত করে তোলা হলো। এরকম সারাক্ষণ পাল্টানো চলছেই।

গ্লিটজ: এটা সারাক্ষণই চলছে?

অনুপম: হ্যা, এটা সারাক্ষণই চলছে। আমার গান তৈরি করাই থাকছে। আমি তো আর কারও জন্যে বা বসে গান লিখছি না। আমি নিজের ইচ্ছামতো লিখছি, যখন গান আসছে তখন গান লিখছি। এবার সেই গানগুলো কোথায় যাবে? লেখা আছে, তারই কয়েকটি সিনেমায় ব্যবহার করছি।

গ্লিটজ: এই পাল্টানো কি কেবলই বাণিজ্যিক?

অনুপম: আমি করি কী, একটা গানকে পাল্টে সিনেমায় দিলে তার অরিজিনালটা আবার অ্যালবামে রিলিজ করি।  যেমন— ‘একবার বল নেই’ গানের দুটি ভার্সন আছে। একটি ‘বাইশে শ্রাবণ’ সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে অন্যটি আছে আমার ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ অ্যালবামে। একই ভাবে ‘এই শ্রাবণ’ গানটি রয়েছে ‘বাইশে শ্রাবণ’ সিনেমায় আর তার অরিজিনালটি ‘আরো শীত’ নামে পরিচিত, সেই গানটিও আছে দ্বিতীয় অ্যালবামে। এইভাবেই আপাতত চলছে। আমার মজাই লাগে এই এক্সারসাইজটা করতে।

গ্লিটজ: চন্দ্রবিন্দুর সঙ্গে আপনার গীতির একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় কোথাও…

অনুপম: মিল বলতে আমি খুব ইনফ্লুয়েন্সড ওদের দ্বারা এবং ওরা না থাকলে আমি বোধহয় এরকমভাবে লিখতে পারতাম না। আমার গড়ে ওঠার পেছনেও তাদের একটা অবদান আছে।

গ্লিটজ: কবির সুমনেরও অবদান আছে…

অনুপম: সুমনদারও অবদান আছে, তবে আমার মনে হয় সুমনদার চেয়ে বেশি অবদান আছে চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের। নচিকেতারও একটা অবদান আছে। প্রথমে যখন শুরু করি তখন তাদের মতো লিখতাম। যখন বুঝলাম চন্দ্রবিন্দু এরকম লিখছে, তখন নিজেকে পাল্টালাম। অরিজিনাল বলতে আর কি, সবই তো ইনফ্লূয়েন্সড। এতো সুর এতো কথা আমি তো কিছুই করছি না। কিন্তু কিছু একটা হচ্ছে।

গ্লিটজ: ‘গভীরে যাও’ গানটি গাইয়েছিলেন রূপঙ্কর বাগচিকে দিয়ে, শিলাজিৎও আপনার সুরে গেয়েছে। আপনি সিনেমার জন্য শিল্পী নির্বাচনে স্বাধীনতা পান?

ছবি:আসিফ মাহমুদ অভি /বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

অনুপম:
সৃজিতদার সঙ্গে কাজ করতে গেলে যেটা হয়— আমি প্রথমে বলি, এটা একে দিয়ে গাওয়ালে ভালো হবে। সৃজিত দার মতামত আমার সঙ্গে অনেকটাই মেলে। রূপঙ্কর দা, শিলাজিৎদা, লোপা দি— এদের নিয়ে কনফ্লিক্ট হয়নি। একেবারেই কনফ্লিক্ট হয় না, তা না। অনেক সময় একটি গানের জন্য তারও নিজস্ব সিদ্ধান্ত থাকে। আবার বড় প্রোডাকশন হাউজেরও অনেক সময় বক্তব্য থাকে। আমি চেষ্টা করি আমার মতো রাখার। আর এক বছরের এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে তো এতো কথা বলা যায় না। কারণ কেউ কথা শোনে না। এখন চার থেকে সাড়ে চার বছর হয়েছে। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান এসেছে। এখন লোকের ধারণা হয়েছে— ‘না এর বুদ্ধি-সুদ্ধি আছে।’ তাই এখন অতোটা ঝামেলা হয় না। আমার কথায় এখন অনেক কিছু হচ্ছে। আমি জানি না কবে আবার সেটা পাল্টে যাবে।

গ্লিটজ: প্রথম গানটির জন্য আপনি পাঁচ থেকে ছটি পুরস্কার পেয়েছিলেন। সেদিক থেকে ভাগ্যবান মনে করেন নিজেকে?

অনুপম: আমার অতিরিক্তই মনে হয়েছে ব্যাপারটা। তার কারণ আমি শূন্যতে ছিলাম। সেখান থেকে এতো পরিচিতি বা এতো পুরস্কার, নিজের অবাকই লাগতো-- যে এটা কী হচ্ছে। আসলে সব অদ্ভুত ডেসটিনির খেলা এবং কার যে হাত আছে, তা আমি নিজেও জানি না। আর যে পুরস্কারের কথা বলছেন তা কিন্তু সেই বছরেই হয়েছে। তারপরে দেখুন পুরস্কারের সংখ্যা কমে গেছে এবং এখন নিয়মিত পুরস্কার দেওয়া হয় না।

গ্লিটজ: তাহলে হঠাৎ করে ভালো সময় থেকে নিচে নেমে এসেছে টালিগঞ্জের সিনেমা?

অনুপম: নিচে আসেনি, বলা যায় একেকটা সময়ে একটা করে স্ট্যান্ডার্ড সেট হয়। এরপর ওই স্ট্যান্ডার্ডের আরও কাজ এলে তার লেবেলটা সে রকম হয়ে যায়। সে সময়ে আরেকটা একই মানের কাজকে তখন খারাপ মনে হয়। তাই আরেক ধাপ ওপরের হতে হবে নতুন কাজটিকে। তাতেই মানুষ আবার নতুন করে হলমুখি হবে। তবে, আমরা এগোচ্ছি বলা যেতে পারে।

গ্লিটজ: আপনি দুইটি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন। সৌরভ গাঙ্গুলিকে নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারির মিউজিকও করেছেন। আপনার কী ডিরেকশনে আসার ইচ্ছা আছে?

অনুপম: আমার ডিরেকশন দেওয়ার খুবই ইচ্ছা আছে। তবে সেটা সময় লাগবে।

গ্লিটজ: এই মুহূর্তে টালিগঞ্জে কি পরিবর্তন আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন।

অনুপম: নতুন ডিরেক্টর আসা দরকার এবং নতুন ভাবনা-চিন্তা। কাজগুলো কিন্তু রিপিট হচ্ছে। মানে সবার একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেছে— কে কেমন কাজ করবে। নতুন আইডিয়া আসলে, নতুন রকমের সিনেমা হলে আমার মনে হয় ভালো হবে।

গ্লিটজ: সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কমলেশ্বর বন্দোপাধ্যায়, কৌশিক গাঙ্গুলিরা নানা ধরনের কাজ করছেন…

অনুপম: হ্যাঁ করছেন।

গ্লিটজ: আপনার কি মনে হয় না, সিনেমায় শহরকেন্দ্রীক গল্প বেশী এসে যাচ্ছে?

অনুপম: এটা ঠিক জানি না। ডিরেক্টররা সবাই শহরের লোক। তাদের বাইরের কোনো এক্সপোজার নেই। তারা যা দেখছেন, তাই বানাচ্ছেন। তার বাইরে যে কতো কিছু পড়ে আছে। সেখান থেকে, সেই সব কম্যুনিটি থেকে নির্মাণ করতে হবে। না হলে কিন্তু হবে না জিনিসটা।

গ্লিটজ: সেই সুযোগটা কী আছে ইন্ডাস্ট্রিতে?

অনুপম: আমার পক্ষে বলা মুশকিল। আমি সিনেমায় গান করি মাত্র। বলা যায়, হয়তো মুশকিল একটু।

গ্লিটজ: কী ধরনের সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন?

অনুপম: আমি প্রচুর সিনেমা দেখি। একটু সিরিয়াস সিনেমা দেখতে ভালোবাসি। এই ধরনের সিনেমা আমাকে ভাবায়। ভিজুয়ালের প্রতি আমার খুব লোভ। আমার গানে ভিজুয়াল খুব স্ট্রাইকিং হয় এবং সেগুলো করার চেষ্টা করি। তাই যে সিনেমায় ভালো ভিজুয়াল থাকে। ক্যামেরার কাজ খুব ভালো হয়। সেই সিনেমাগুলো দেখতে খুব ভালো লাগে। সেখানে কি গল্প হচ্ছে— চোর ধরা পড়লো কি পড়লো না, আমার তাতে কিছু যায় আসে না।

গ্লিটজ: ভিজুয়ালের প্রতি লোভের একটা ছোট্ট ফসল কি কমিক?

অনুপম: না আমি একদম ছোটবেলা থেকেই কমিক লিখতাম এবং আঁকতাম। সেটা ক্লাস ফাইভ বা সিক্স থেকে শুরু। আমাদের ওখানে ‘দ্য স্টেটসম্যান’ নামের পত্রিকায় আমার কমিক স্ট্রিপ বের হতো সে সময়। আমার বাবা আমাকে সাহায্য করতেন। পরে যতো বড় হলাম ততো আমার আঁকার স্কিল খারাপ হতে থাকে এবং প্র্যাকটিস না করায় আমি এখন কিছুই আঁকতে পারি না। তাই আমার বন্ধু সম্বুদ্ধর সঙ্গে কোলাবরেট করছি। সে ছবি আঁকে, আমি গল্প লিখি। আমার কমিক আঁকার বা লেখার একটা ইচ্ছা ছোট থেকেই ছিলো। সেটা এতোদিনে সফল হচ্ছে। গল্পটা অনেকদিন পড়ে ছিলো, পাবলিশারই পাচ্ছিলাম না। এবার আমরা ‘দৈনিক প্রতিদিন’-এর সাপ্তাহিক সাপ্লিমেন্টারি ‘রোববার’-এ ছাপতে পারছি। খুব শিগগিরই শেষ হবে ৪৮ পাতার গ্রাফিক নভেলটি। এরপর যদি ছাপতে কেউ আগ্রহী হয়।

গ্লিটজ: আপনি যে সিনেমাগুলোতে কাজ করছেন সেগুলোতে কর্মাশিয়াল ট্যাগ বোধহয় দেওয়া হয় না। কেনো হচ্ছে এরকম?

অনুপম: সিনেমাগুলো যথেষ্ট কর্মাশিয়াল। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে বিজনেস করতে পারে না। তাই সেগুলোকে বলা হচ্ছে ননকর্মাশিয়াল। সেগুলো কর্মাশিয়াল হলে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটা জেলায় চলতো। কিন্তু জেলা থেকে শহরের এতোই তফাৎ হয়ে গেছে যে শুধু শহরেই চলে এবং ব্যবসা হয় না। কারণ কম লোক দেখছে এবং টাকাও উঠছে না। যদি আমাদের গোটা দেশের পলিটিক্যাল-ইকোনমিক উন্নতি হতো, তাহলে সব জায়গাতে ব্যবসা করে খেতে পারতো। মানে এটাকে কোনো মতেই ননকর্মাশিয়াল বলা যায় না। আজ সুপারস্টার দেব নামে সবাই যাকে চেনে, তার সিনেমা যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের দুইশো হলে রিলিজ করতে পারছে, সেভাবে এই সিনেমাগুলো চল্লিশটা হলেই রিলিজ করতে পারছে না।

গ্লিটজ: এটা কেন হচ্ছে?

অনুপম: এটা পুরোপুরি পলিটিক্যাল আর ইকোনমিক কন্ডিশনের জন্যে। এতো তফাৎ। স্বাধীনতার পরে আমাদের কোনো উন্নতি হয়নি বলে আমরা অদ্ভুত একটা বিশৃঙ্খল জায়গায় পৌছে যাচ্ছি দিন দিন।

গ্লিটজ: আপনি আবার দেব বা তার মতো তারকারা যে ধরনের সিনেমায় কাজ করে সেসব সিনেমায় কাজ করেন না...

অনুপম: কাজ করি না বলতে, আমার গানের একটা ভাষা আছে। সেই সিনেমাগুলিরও একটা ভাষা আছে। এই দুই ভাষার কোথাও তফাৎ আছে বোধহয়। একটা বিশাল পার্থক্য সেটা আপনিও বুঝতে পারেন, আমিও বুঝতে পারি। এই তফাৎটা কি করে মেটাবো তা আমি জানি না। আমি তো কবিতা করেই কথা বলবো, কিন্তু তার সেই চরিত্রগুলো কবিতা করে কথা বলে না বা কাঁদে না। এই তফাৎটা যদি না মেটে, আমি কোনো দিনই সেই সিনেমায় যেতে পারবো না বা সেই সিনেমায় আমাকে পাওয়া যাবে না। এখন সেই তফাৎটা কি করে মিটবে! একটা সিনেমা করেই কিন্তু হবে না। পুরোপুরি একটা ইকোনমিক, সোশ্যাল, পলিটিক্যাল চেইঞ্জ আসলে তবে সেই তফাৎটা মিটবে।