চলে গেলেন রিচার্ড অ্যাটেনবরো

আর পাঁচ দিন পরেই ছিল অস্কারজয়ী নির্মাতা রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ৯১তম জন্ম দিন। কিন্তু তার আগেই ২৪ অগাস্ট না ফেরার দেশে চলে গেলেন ব্রিটিশ এই চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্ব।

সেঁজুতি শোণিমা নদীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2014, 11:42 AM
Updated : 25 August 2014, 12:04 PM

১২ বছর বয়সেই অভিনয়ে হাতে খড়ি হয়েছিল যে শিশুটির, ষাট বছরের বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষে তাকেই ধরা হয় যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল তারকাদের একজন হিসেবে। বিনোদন এবং সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নাইটহুড তো পেয়েছেনই, ব্রিটিশ রাজপরিবারের তরফ থেকে সম্মানসূচক ব্যারন উপাধিতেও ভুষিত হয়েছেন রিচার্ড অ্যাটেনবরো। সিনেমাপ্রেমীদের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে তৈরী সিনেমা ‘গান্ধী’র নির্মাতা হিসেবে।

ব্রিটিশ হয়েও মহাত্মা গান্ধীর চরিত্রের জন্য স্যার বেন কিংসলেকে নির্বাচন করতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি অ্যাটেনবরো। অ্যাটেনবরোর মৃত্যুতে কিংসলে সেই সব দিনের স্মৃতিচারণ করলেন, “রিচার্ড অ্যাটেনবরো তার বিশ বছর ধরে দেখে আসা স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবচেয়ে কঠিন এবং মূল দায়িত্বটার জন্য আস্থা রেখেছিলেন আমার ওপর। যখন তিনি গান্ধীর চরিত্রের জন্য আমাকে প্রস্তাব দেন, তখন আমার প্রতি তার বিশ্বাস দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। এর প্রতিদানে তার ওপরও পূর্ণ আস্থা স্থাপন করেছিলাম; যার ফলে ধীরে ধীর তাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম।”

কিংসলে আরও বলেন, “তার কথা সবসময়ই অনেক বেশি মনে পড়বে।”

১৯৮৩ সালের এই সিনেমাটি সে বছরের অস্কার আসরে জিতে নিয়েছিল আটটি পুরস্কার। সিনেমাটির পরিচালক এবং প্রযোজক হিসেবে দুটি অস্কার জিতে নিয়েছিলেন অ্যাটেনবরো নিজেই।

অ্যটেনবরোর অভিনয় ক্যারিয়ারের অন্যতম সের কাজ হিসেবে ধরা হয় ‘জুরাসিক পার্ক’-এ তার অভিনীত বিলিয়নেয়ার পার্ক মালিক জন হ্যামন্ডের চরিত্রটি। সিনেমাটির নির্মাতা স্টিফেন স্পিলবার্গও দারুণ শোকাহত সাবেক এই সহকর্মীর মৃত্যুতে।

“তিনি ছিলেন আমার খুবই কাছের একজন বন্ধু। সেই অগণিত মানুষের কাতারে আমি একজন, যারা তাকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসে।”

স্পিলবার্গ আরও বলেন, “তিনি গোটা বিশ্বকে অসাধারণ এক উপহার দিয়েছিলেন তার এপিক সিনেমা ‘গান্ধী’র মাধ্যমে। জুরাসিক পার্কের মালিক জন হ্যামন্ডের চরিত্রে এক্কেবারে যুতসই ছিলেন তিনি; যার কারণে পার্কের ডায়নোসরগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।”

অ্যটেনবরোর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুইটারে তিনি লেখেন, “‘ব্রাইটন রক’-এ তার অভিনয় ছিল অসাধারণ, ‘গান্ধী’ নির্মাণেও তিনি ছিলেন অনবদ্য। রিচার্ড অ্যাটেনবরো সিনেমার মহারথীদের একজন।”

তবে কেবল একজন শিল্পী হিসেবেই নয়, সংগঠক হিসেবে তার অসামান্য অবদানের জন্যও স্মরণীয় তিনি। বিবিসির সাবেক নির্বাহীদের অন্যতম লর্ড গ্রাডে তাকে অভিহিত করেছেন প্রাণশক্তি আর আবেগের এক অসাধারণ সম্মিলন হিসেবে।

“ইন্ডাস্ট্রি থেকে রিচার্ড যতোটা না নিয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি দিয়ে গেছে।” লর্ড গ্রাডে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন সেইসব দিনের কথা মনে করে, যখন উচ্চ পর্যায়ের অনেক বৈঠকেও অ্যাটেনবরোর ডাকসাইটে উপস্থিতি কলজে কাঁপিয়ে দিত ব্রিটেনের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডগলাস হার্ডের।

অ্যাটেনবরোর মৃত্যুতে তাই ব্রিটেনের সবক্ষেত্র থেকেই জানানো হচ্ছে শোক। সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এমনকি ক্রীড়া সংগঠনগুলোর তরফ থেকেও প্রকাশ করা হচ্ছে শোকবার্তা।

৬ দশকের ক্যারিয়ারে অভিনেতা হিসেবে অ্যাটেনবরোর স্মরণীয় কাজগুলো হলো, ‘ব্রাইটন রক’ (১৯৪৭), ‘দ্য গ্রেট এস্কেপ’(১৯৬৩) এবং ‘ডক্টর ডুলিটল’(১৯৬৭)। বিশেষ করে ‘ব্রাইটন রক’ সিনেমায় এক কিশোর খুনি ‘পিঙ্কি’র চরিত্রটি দর্শকরা মনে রেখেছেন অনেকদিন।

ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে অবশ্য অভিনয়ের চেয়ে পরিচালনাতেই বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েন অ্যটেনবরো। ‘গান্ধী’ ছাড়াও ‘ইয়ং উইনস্টন’ (১৯৭২), ‘চ্যাপলিন’ (১৯৯২), ‘শ্যাডোল্যান্ডস’ (১৯৯৩)-এর মতো সিনেমা উপহার দিযেছেন তিনি।

অ্যাটেনবরোর সৃজনশীল পথচলা থমকে যায় ২০০৮ সালে, যখন তিনি একটি ছয় তলা ভবনের সিড়ি থেকে পড়ে যান। এরপর থেকে চলাফেরার জন্য হুইলচেয়ারই সঙ্গি ছিল তার। জীবনের শেষ কটি বছর তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে কাটিয়েছেন লন্ডনের এক নার্সিংহোমে। সেখানেই ২৪ অগাস্ট দুপুরে তার মৃত্যু হেয় বলে জানিয়েছেন তার ছেলে।