‘ফিরে আসুক একাত্তরের গানগুলো’

একাত্তরের যুদ্ধদিনে যে গানগুলো অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের, দেশ গঠনের লড়াইয়ে সেই সব গান আজকের তরুণদেরও প্রেরণা দিতে পারে বলে মনে করছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার সুজেয় শ্যাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2017, 04:59 AM
Updated : 15 March 2017, 08:27 AM

সাড়ে চার দশক পর স্বাধীন বাংলা বেতারের বেশ কিছু গান জয় বাংলা কনসার্টের মাধ্যমে এই সময়ের তরুণদের মধ্যে ফেরায় এক ধরনের ‘তৃপ্তি’ও অনুভব করছেন একাত্তরের অনেক আলোড়ন সৃষ্টিকারী গানের এই সুরকার।

যৌবনে নতুন দেশের স্বপ্নে যে সব সুরে সব সঁপে দিয়েছিলেন, স্বাধীন দেশে তার অনেকগুলোই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে দেখেছেন ৭১ বছর বয়সী সুজেয় শ্যাম। জীবনের শেষ বেলায় গানগুলোর প্রত্যাবর্তন দেখে ‘দারুণ উজ্জীবিত’ তিনি।

চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে মঙ্গলবার এই সুরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন সেই অনুভূতির কথা।

“যে গানগুলো লাইফ সাপোর্টে ছিল, সেই গানগুলো জয় বাংলা কনসার্ট নতুন প্রজন্মকে দিয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর যে আনন্দ পেয়েছিলাম, ঠিক সেই আনন্দ পেয়েছি।”

তিনি মনে করেন, বাঙালি ও এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধের ইতিহাস যেমন চিরদিন থাকবে, তেমনি এই সব গানও অনুপ্রেরণা যোগাবে।

“তবে এ জন্য গানগুলোকে আলোয় রাখতে হবে, থাকতে হবে চর্চায়, জানাতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। এ প্রজন্ম অনেক কিছু জানে না, জানালে পরেই না উজ্জীবিত হবে।”

১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যাম জানান, রবীন্দ্র-নজরুল-লালন সংগীতের বাইরে স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্য লেখা ও সুর করা মোট গানের সংখ্যা দেড়শর মত।

“এরই মধ্যে অনেক গান হারিয়ে গেছে বা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তবে এখনও সঠিকভাবে চেষ্টা করলে সেই গানগুলো ফিরে পাওয়া সম্ভব। এ বিষয়ে আর দেরি করা ঠিক নয়। সরকার বা বেসরকারি তরফে দ্রুত এই ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া দরকার।”

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেই গানগুলো গত ৭ মার্চ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্টে ফিরিয়ে আনায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান সুজেয় শ্যাম।

“কনসার্টে গাওয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানগুলোর একজন সুরকার হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি, এই কনসার্টের কারণে প্রায় ৫ লাখ দর্শক-শ্রোতা আমার নামটি জানতে পেরেছে, আমার গানগুলো শুনতে পেরেছে।”

কথা ও সুর ঠিক রেখে এ ধরনের আরও গান যদি ব্যান্ডগুলোর মাধ্যমে তরুণদের কাছে তুলে ধরা যায়, তাহলে তারা গানগুলোর সঙ্গে এবং বাঙালির সংগ্রামের সেই সময়ের সঙ্গে নিজেদের আরও সম্পৃক্ত করতে পারবে বলে মনে করেন এই সুরকার।

“আমাদের সবাইকে এটা মনে রাখতে হবে, এ ধরনের অনেক গান যেমন ‘তীরহারা এই ঢেঊয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে’ বর্তমান প্রজন্মের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়েছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে থাকাকালে মোট নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’। ছিল বিশ্বপ্রিয়’র লেখা ‘আহা ধন্য আমার’, কবি দিলওয়ারের লেখা ‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’।

এর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। কিন্তু বাকি সাতটি গান এখন আর তেমন গাওয়া হয় না বলে জানান সুজেয় শ্যাম।

তিনি বলেন, “এখন শেষ জীবনে ইচ্ছা, এই গানগুলো বেঁচে থাকুক মানুষের মাঝে। ফিরে আসুক হারিয়ে যাওয়া স্বাধীন বাংলা বেতারের বাকি গানগুলোও।”