চরিত্রের প্রতি প্রেমই ভালো অভিনয় করিয়ে নেয়: জয়া আহসান

চরিত্র থেকে চরিত্র ভ্রমণে জয়া যেন সর্বজয়া হয়ে উঠছেন। কলকাতায় নানা ছবির কাজ সেরে এবার তিনি মনোযোগী হয়েছেন আপনভূমে। মাহমুদ দিদার পরিচালিত ‘বিউটি সার্কাস’ চলচ্চিত্রে জয়াকে দেখা যাবে সার্কাসকন্যা ‘বিউটি’র চরিত্রে। কী করে নিজেকে এমন ভাঙেন জয়া? সেসব নিয়ে গ্লিটজের মুখোমুখি তিনি...

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2017, 01:46 PM
Updated : 22 Feb 2017, 04:20 PM

গ্লিটজ: ‘বিউটি সার্কাস’ এর বিউটিকে দেখে তো সবাই চমকে গেছে...

জয়া আহসান: অভিনয় জীবনের মজাটাই হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জীবনটা যাপন করতে পারি আমরা। অভিনয়ের কারণে নানা রকম চরিত্র করার সুযোগ হয়। যেমন ‘বিউটি সার্কাস’-এও হল। সার্কাসের জীবনটা আমার দেখা হয়নি। তো কাজটির সঙ্গে যুক্ত হলাম। শুটিং ছিলো নওগাঁর সাপাহার নামে একটা জায়গায়। একটু রিমোট এরিয়া। খুব শুটিং বান্ধব নয়। কিন্তু সবকিছুর বাইরে দিদারের আয়োজনটা আর টিমের ফোর্সটা ছিলো এমন যে, শুটিংয়ে আমাদের যতটুকু লক্ষ ছিলো ততটুকু আমরা পারফর্ম করে এসেছি। আর সার্কাসটা আসলে শীতকালেরই একটা কাজ। অন্যসময় তো সার্কাসের সেট ফেলা সম্ভব না। বর্ষাকালে তো সম্ভব নয়ই, গরমের সময় এসব ভারী পোষাকে কাজ করা খুব কষ্টকর। এ জন্যই একটু দেরি করেই এ সময়টাতে শুটিং শুরু হলো। যতটুকু কাজ হয়েছে ভালোই হয়েছে। আয়োজনটা খুব বড় ছিলো। সার্কাস শব্দটা শুনলেই তো বুঝতে পারা যায়, এটার সাথে বিশাল টিম জড়িত। আর বাংলাদেশের যে সবচেয়ে বড় সার্কাস দল ‘লক্ষী নারায়ণ সার্কাস’ তাদের নিয়েই আসলে আমাদের আয়োজনটা করা হয়। আর শুটিংয়ের বাইরেও আমরা যে কাজগুলো দেখেছি সেগুলো খুবই অদ্ভূত। সার্কাস তো আমাদের দেশে বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু ওদের অ্যামাজিং কিছু খেলা আছে, সেগুলো দিদার শুট করেছে। জানি না গল্পের জায়গা থেকে ওগুলো রাখতে পারবে।

গ্লিটজ: শুটিংয়ে হাজার দুয়েক গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করেছিলো শুনেছি...

জয়া আহসান: লোকজন খুব ভালো ছিলো যারা শুটিংয়ে সাহায্য করেছে। ওখানের জনগণ মানে সাধারণ মানুষ খুব ভালো ছিলো। খুব ভালো...

গ্লিটজ: চরিত্রটির জন্য কেমন প্রস্তুতি ছিলো আপনার?

জয়া আহসান: যতটুকু প্রস্তুতি নেয়া দরকার ছিলো, বলবো যে ততটুকু প্রস্তুতি হয়তো নেওয়া হয়নি। আরও কিছু অংশ বাকি আছে শুটিংয়ের, তার আগে হয়তো প্রস্তুতিটা আরও নেয়া যাবে। তারপরও শুটিং শুরুর আগে একটু যাওয়া আসা, দেখা, একটু ট্রাই করা, শুটিংয়ের আগে সারাক্ষণ প্র্যাক্টিস করা এ বিষয়গুলো হয়েছে আর কি।

গ্লিটজ: স্ট্যান্টম্যান ছাড়াই বেশকিছু রিস্কি শট দিয়েছেন শুনলাম। কী করে পারলেন?

জয়া আহসান: আসলে কেউ যদি ক্যারেকটারটাকে ফিল করে, ক্যারেকটারটার জন্য ডাইভ দেয়, ক্যারেকটারটা যদি তাকে মোটিভেট করে আমার মনে হয় যে কোনো অ্যাক্টরই এটা করবে। যেমন আমি কোনো স্টান্টম্যান বা শারীরিক সুরক্ষার জন্য কিছু ব্যবহার করিনি। নিজেই করেছি সবটুকু। এটা আসলে আমার মনে হয় চরিত্রের প্রতি প্রেমই ভালো অভিনয় করিয়ে নেয়।

গ্লিটজ: সামনে বেশকিছু থ্রিলিং পার্ট আছে যতদূর জানি। অজগরের সঙ্গেও পারফর্ম করতে হবে। কীভাবে করবেন?

জয়া আহসান: অজগরের সাথে কীভাবে করবো এখনো জানি না। তবে, ইতমধ্যে হাতির পিঠে চড়েছি। বাচ্চা হাতির পিঠে চড়তে হয়েছে, ঠিকভাবে কনট্রোল ছিলো না। জানি না কতটুকু রাখতে পারবে। বড় হাতি হলে বা ম্যাচিউর হাতি হলে একটা কথা থাকে। কিন্তু বাচ্চা হাতি হলে তো কিছু করার থাকে না। রিস্ক বলতে অত রিস্কও তো নেওয়া যায় না। তাছাড়া সবটুকু তো বিউটিই করবে না। অন্যদেরও অনেক পারফর্ম আছে। অরিজিনাল আর্টিস্টরাও এখানে যুক্ত আছেন।

গ্লিটজ: চরিত্র থেকে চরিত্রে ভ্রমণে কোন বিষয়গুলো বেশি এনজয় করছেন? 

জয়া আহসান: ঢাকার বাইরে বা এ ধরণের কাজে যেটা হয় যে অরিজিনাল পিপলের সঙ্গে মেলামেশা করা যায়। এই যেমন সার্কাস। আমরা যারা অভিনয় করি তাদের তো নানারকম মানুষের সাথে মেশা হয়। শুটিংয়ের বাইরেও দেখেছি যারা গ্রামে থাকে, গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ তাদের সাথে মেশার সুযোগ হয়। এটা আমি খুব এনজয় করি। ‘বিউটি সার্কাস’-এও কাজ করে ফিরতে গিয়ে খুব খারাপ লাগছিলো, কেমন যেন একটা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। তারাওতো আর্টিস্ট, আক্ষরিক অর্থে তারাও অনেক বড় আর্টিস্ট। তাদের সঙ্গে ইমোশনাল জায়গাগুলো তৈরি হয়ে যায়, এই ট্রিপগুলো তাই অনেক মজার হয়। সবকিছু মিলে এ ছবির শুটিংয়েও তেমন হয়েছে। আমি জায়গাটার প্রেমে পড়ে যাই। আমার কাছে মনে হতে থাকে আমি তাদেরই একজন...

গ্লিটজ: শুটিং তো থামলো কিছুদিন, এই অবসরে কী করবেন?

জয়া আহসান: সামনের মাসেই আমার অনুদানপ্রাপ্ত নতুন ছবি ‘দেবী’র শুটিং শুরু হচ্ছে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুটিং শুরু হবে। এর আগেই একটা যে কোনোদিন সবাইকে ঘটা করে বিস্তারিত জানাতে পারবো আশা করছি।

গ্লিটজ: কলকাতায় আপনার নতুন বছরটা কেমন যাবে?

জয়া আহসান: ওখানে এ বছর আমার দুটো বড় ছবি রিলিজ আছে। একটা শর্টফিল্মের রিলিজ আছে। শর্টফিল্মটা বাংলাদেশেও রিলিজ হবে। আর কৌশিক গাঙ্গুলীর ‘বিসর্জন’ মুভিটার রিলিজ আছে। এটা পহেলা বৈশাখে মুক্তি পাবে। আরও বেশকিছু ছবির কথা চলছে। কিন্তু এখানে আমার ‘দেবী’, ‘বিউটি সার্কাস’ ছাড়াও বেশ কিছু ছবির কাজ বাকি আছে, এগুলো শেষ করেই ওইদিকে যাবো।

আকরাম খান নির্মিত ‘খাঁচা’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে জয়া ও অন্যান্য অভিনয়শিল্পীরা

গ্লিটজ: দেশভাগ নিয়ে নির্মিত ‘খাঁচা’ নিয়ে সম্ভবত আপনার কিছুটা এক্সাইটমেন্ট আছে। ফেসবুকে প্রায়ই ছবি পোস্ট করছেন এই সিনেমার...

জয়া আহসান: এক্সাইটমেন্ট বলতে, আসলে কাজের জায়গা থেকেই দায়িত্ব বলেই টুকটাক প্রচার করি। স্ক্রিপ্টটা খুবই শক্তিশালী ছিলো, হাসান আজিজুল হকের গল্প। আমার ধারণা আমরা ভালো শুটিং করেছি। এখন ছবিটা পুরোপুরি আসলেই আমরা বলতে পারবো ছবিটা কেমন হয়েছে। এর আগে তো বলা সম্ভব না। আমি কোনো ছবি নিয়েই মন্তব্য করিনা। তবে, শুটিংটা ইন্টারেস্টিং ছিলো এ জন্য যে বিভিন্ন ধাপে আমার দু’তিনটা বয়সের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে। একদম ত্রিশ বছর থেকে শুরু করে সত্তর বছর বয়সী চরিত্রও করতে হয়েছে। অভিনয়ের পরিমিতির জায়গা থেকে এটা আমার জন্য ইতিবাচক একটা অভিজ্ঞতা। আশা করছি এ কাজটাও খুব ভালো হবে। আর ৪৭ এর দেশভাগ নিয়ে তো কোনো ছবি আমাদের এখানে সেভাবে তৈরি হয়নি। কলকাতায় হয়তো দেশভাগ নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু আমাদের এখানে নির্মাতা আকরাম খান যেভাবে ছবিটিকে দেখাতে চেয়েছেন সেভাবে আসলে কখনো ভাবেনি দর্শক। এখন মুক্তি পেলেই বোঝা যাবে দর্শক কেমন কমুনিকেট করতে পারছে ছবিটার সঙ্গে। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। ডাবিং করতে গিয়েও যতটুকু দেখেছি বেশ ভালো কাজ হয়েছে।

গ্লিটজ: ছবিটা কবে মুক্তি পাবে জানেন কিছু?

জয়া আহসান: এ ব্যাপারটা আমি ঠিক জানি না। নির্মাতা বলতে পারবেন। আশা করছি চলতি বছরেই এটি মুক্তি পাবে। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হতে যাচ্ছে ‘খাঁচা’।

গ্লিটজ: মুক্তিসম্ভাব্য ছবিগুলো নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?

জয়া আহসান: দেখি আসলে দিনের শেষে ছবিগুলো কেমন দাঁড়ায়। শুটিং ভালো হলেই ছবি ভালো হয় তা কিন্তু নয়, আমি তো শুধু আমার পারফর্মটা করেছি। কিন্তু এটাতো ওভারঅল পারফর্মের ব্যাপার। বাচ্চাটা যখন ভূমিষ্ট হবে, তখন হাতে পায়ে দশটা আঙুল নিয়ে জন্মেছে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। এটা তো আসলে আর্টিস্টের ওপর নির্ভর করে না। আমরা তো একটা উপদান হিসেবে কাজ করি। বাকিটাই তো নির্ভর করে নির্মাতার ওপর। দেখা যাক...