খলচরিত্র অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং: শতাব্দী ওয়াদুদ

মঞ্চে তার দাপট বহুদিনের; সেই ধারাবাহিকতায় টিভি নাটকেও গড়েছেন নিজেস্ব পরিচয়। তবে ২০১১ সালের ‘গেরিলা’র পর থেকে শতাব্দী ওয়াদুদকে সবাই চেনেন সিনেমার মানুষ হিসেবেই।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2016, 11:31 AM
Updated : 12 Dec 2016, 11:31 AM

বাণিজ্যিক ও বিকল্প- দুই ধারার সিনেমাতেই খল এবং ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শক্ত অবস্থান গড়েছেন তিনি। সামনেই মুক্তি পাবে তার অভিনীত নতুন বাণিজ্যিক সিনেমা ‘ঢাকা অ্যাটাক’। সিনেমা, নাটক ও মঞ্চ- তিন ক্ষেত্রেই স্বচ্ছন্দ এই শিল্পীর সঙ্গে গ্লিটজ-এর আড্ডা জমেছিল শনিবার বিকেলে। 

গ্লিটজ: দীপংঙ্কর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমাতেও কি খলচরিত্রে দেখা যাবে?

শতাব্দী ওয়াদুদ: না, এই সিনেমায় আমি খলচরিত্রে নয় বরং ইতিবাচক চরিত্রেই অভিনয় করছি। সিনেমায় আমাকে সবাই একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখতে পাবেন।

গ্লিটজ: ‘গেরিলা’ ও ‘চোখের দেখা’ সিনেমায় খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ সিনেমায় ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেক্ষেত্রে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় আবারো ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয়, আপনার দর্শকরা কিভাবে এই বিষয়টিকে গ্রহণ করবেন বলে মনে করছেন?

শতাব্দী: মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমায় এই পর্যন্ত আমি যে ধরনের কাজ করেছি সেখানে অনেক ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। গল্পের সঙ্গে চরিত্রটা কতটুকু নিবীড়ভাবে গেঁথে আছে, একজন দর্শক সবসময় সেই বিষয়টাকে প্রাধান্য দেয়। আমার অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে গল্পের মিল কতটুকু রয়েছে, তা আমি অভিনয়ের সময় সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করি। সেই দিক থেকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় গল্পের সঙ্গে আমার অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে পুরোদসস্তুর মিল রয়েছে। তাই আমার কাছে মনে হয় এই সিনেমায় আমার ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় দর্শকরা খুবই ইতিবিাচক ভাবেই গ্রহন করবেন।

গ্লিটজ: সিনেমাতে বেশিরভাগ সময়েই আপনি অভিনয়ের জন্য খলচরিত্রকে কেন র্নিবাচন করেন?

শতাব্দী: খলচরিত্রে নিজেকে ভেঙ্গে ফেলার সুযোগ অনেক বেশি থাকে। আমার কাছে এই বিষয়টাই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারন সব চরিত্রে যদি অভিনয় একই রকম হয়ে যায় তাহলে বিষয়টি দেখতে মোটেও ভালো লাগে না, সেক্ষেত্রে একটা ঘেয়ামীর বিষয়টি তৈরি হয়। যেই কাজে নিজেকে প্রকাশের সুযোগ বেশি সেই ধরনের কাজে আমার আগ্রহ সবেচয়ে বেশি। অন্যদিকে একটি সিনেমায় খলচরিত্রের কারনে সিনেমায় গতিময়তা তৈরি হয়।

আমার কাছে সব চরিত্রই গুরুত্বর্পূণ। একজন অভিনেতার কাজই হলো অভিনয় করা। এখানে ভালো চরিত্র, খারাপ চরিত্র, বড় চরিত্রে কিংবা ছোট চরিত্র বলে কিছু নেই। যদি সঠিকভাবে যেকোনো চরিত্রের চরিত্রায়ন করা যায় তাহলে দর্শক অবশ্যই তা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসবেন। তবে সত্যি বলতে আমার সবসময় বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে বেশি ভালো লাগে। কারণ আমি এমন ধরনের পরীক্ষাগুলো দিতে খুবই পছন্দ করি।

গ্লিটজ: সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে আপনি বাণিজ্যিক ও বিকল্প ধারার সিনেমার মধ্যে কোনো পাথর্ক্য কী টানছেন?

শতাব্দী:
মোটেই না। এক্ষেত্রে আমি বাণিজ্যিক ও বিকল্প ধারা-সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করছি। আমার কাছে সব ধরনের সিনেমাই সিনেমা। আমার কাছে মূল ধারার বাণিজ্যিক সিনেমাও সিনেমা একইসঙ্গে বিভিন্ন চলচ্চিত্র ফেস্টিভালে প্রদর্শণের জন্য র্নিমিত গল্প র্নিভর সিনেমাগুলোও আমার কাছে সিনেমা।

তবে আমার কাছে মনে হয়, অভিনয়ের এই পরীক্ষায় আমি উর্ত্তীণ হয়েছি। কারণ আমি বাণিজ্যিক ও বিকল্প- দুটো ঘরনার সিনেমাতেই অভিনয় করেছি।

গ্লিটজ: মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমা- তিন মাধ্যামের মধ্যে কোনটিতে থিতু হতে আগ্রহী?

শতাব্দী: আমি সবসময় অভিনয় করতে চাই। অভিনয় ছাড়া আমি অন্য কোন কাজ করি না। নিজের আত্নার তাগিদের জন্য আমি নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করতে চাই। অন্যদিকে আমি যখন মারা যাবো তখন তো মঞ্চ ও টেলিভিশনের কাজগুলো থাকবে না। কিন্তু সিনেমার কাজগুলো ঠিকই থেকে যাবে। সেই খিদে থেকেই সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করতে চাই।

এখানে সত্যি বলতে কোন বিশেষ মাধ্যমকে প্রাধাণ্য দেওয়ার বিষয়টি মনে কাজ করছে না। কিন্তু যদি প্রাধাণ্যর বিষয়টি চলেই আসে সেক্ষেত্রে অবশ্যই থিয়েটার। তারপরে টেলিভিশন ও সিনেমার স্থান। তবে আমি নিয়মিত অভিনয় করতে চাই, এই ব্যাপারে আমি পুরোপুরি ডিটারমাইন্ড।

গ্লিটজ: সিনেমায় খলচরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে কি হুমায়ুন ফরিদীর পদাঙ্ক অনুসরন করছেন?

শতাব্দী: আমাদের প্রজন্মের এমন কোনো অভিনয় শিল্পী পাবেন না যারা হুমায়ূন ফরিদীর অভিনয় দ্বারা অণুপ্রাণিত নয়। কোনো না কোনোভাবে আমরা সবাই  তার অভিনয় দিয়ে অবশ্যই অণুপ্রাণিত হয়েছি। সত্যি বলতে আমিও তার অভিনয় থেকে অনুপ্রাণিত। তার মতো এমন একজন গুনী অভিনেতা আমাদের দেশে জন্মগ্রহন করেছেন, কিন্তু এটা আমাদের দূভার্গ্য আমরা তাকে সঠিকভাবে মূ্ল্যায়ন করতে পারি নাই।

গ্লিটজ: আর আপনার ক্ষেত্রে?

শতাব্দী: আমি মোটেও এটা বিশ্বাস করি না। কারণ, একটি সিনেমা কিংবা একটি নাটক র্নিমান করতে গেল অনেক ধরনের পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় পর্যাপ্ত বাজেট নেই, শুটিংয়ের সময় নেই, অভিনেতার প্রস্তুতির সময় নেই। আমাদের এখানে গুনী র্নিমাতা রয়েছেন কিন্তু একটি ভালো গল্পের নাটক কিংবা সিনেমার বোঝার জন্য একজন দর্শকের যেমন ধরনের মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন, সেই প্রস্তুতিটা নেই। সেক্ষেত্রে একটি ভালো গল্পের কাজ যদি দর্শকরা না দেখে দেখেন, সেক্ষেত্রে কতদূর কাজ করা সম্ভব।

গ্লিটজ: ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় আপনার অভিনীত চরিত্রটিকে কী বার্তা থাকছে?

শতাব্দী: একটি ছোট অন্যায়কে সচেতন কিংবা অসচেতনভাবে গোপন করা হলে পরবর্তীতে সেই অন্যায়ের পথ ধরেই আস্তে আস্তে আরো অনেক বড় অন্যায়ের দিকে আমাদের যেতে হয়। তাই শুরুতেই যদি জীবনের ছোটখাট অন্যায়গুলো বর্জন করা সম্ভব হয়, তাহলে জীবনে কখনোই বড় অন্যায় জীবনকে গ্রাস করতে পারবে না। অন্যায় মানে অন্যায়, এখানে ছোট কিংবা বড় বলে কিছু নেই- মূলত এই বার্তাই দর্শকের জন্য রয়েছে।

গ্লিটজ: এসময়ের ব্যস্ততা কেমন চলছে?

শতাব্দী: আগামী বছরের শুরুতে জানুয়ারী মাসে ওয়াকিল আহমেদের ‘কত স্বপ্ন কত ভালোবাসা’ সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়াও তানিম রহমান অংশুর ‘আদি’ সিনেমাটিও রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। আর মিজানুর রহমান-এর ‘রাগী’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।