সিনেমাই আমার টার্গেট: শিনা চৌহান

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত পিঁপড়াবিদ্যা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের বড়পর্দায় অভিষেক ঘটে ভারতীয় অভিনেত্রী শিনা চৌহান-এর। যদিও পর্দায় প্রবেশের আগেই মাঠে প্রবেশ তার। বিপিএল কন্যা হিসেবে ঢাকার মাঠগুলোতে উপস্থাপনায় তিনবার দাঁড়িয়েছেন মাইক্রোফোন হাতে। এবারও বিপিএলের মাঠে উপস্থিত তিনি। হোটেল আর স্টেডিয়াম নিয়েই ব্যস্ত থাকলেও চোখটা যেন ফের বাংলাদেশের বড়পর্দায়। স্টেডিয়ামে বসেই গ্লিটজের মুখোমুখি তিনি। ছবি তুলেছেন শিথিল রহমান।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2016, 11:08 AM
Updated : 8 Dec 2016, 03:07 PM

গ্লিটজ: আপনার শেকড়ের কথা দিয়ে শুরু হোক…

শিনা চৌহান: আমার হোমটাউন কলকাতা। বাংলাতেই পড়েছি, শিখেছি লিখেছি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি থিয়েটার করতাম। কলকাতা থেকে যখন দিল্লিতে চলে যেতে হল তখন সেখানেও প্রচুর থিয়েটার করা হয়েছে। ওখান থেকে আবার বোম্বে। 

গ্লিটজ: কিন্তু বড়পর্দায় আপনার আপনার অভিষেক মালায়লাম ফিল্মে। এটা কিভাবে? 

শিনা: আমি অনুপম খের ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়েছি। অনুপম খেরতো নিঃসন্দেহে অনেক বড় ডিরেক্টর। উনার ওখান থেকে দিপিকা পাডুকোনসহ অনেক বড় বড় অভিনয়শিল্পী বেরিয়েছে। ওখানে থেকে পড়ার পর থেকেই আমার ফিল্মে অ্যাক্টিং শুরু হয়। একটা অ্যাড করেছিলাম। ওখানেই ডিরেক্টর জয়রাজ আমাকে দেখলেন, অফার করলেন, মালায়লাম ফিল্মের সুপারস্টার মাম্মত্তির সঙ্গে ‘ট্রেন’ মুভিটা করবো কিনা। আমি রাজী হয়ে গেলাম। এটা ২০১২ সালের কথা।

গ্লিটজ: তারপরের চার বছরে ছয়টা ছবি...

শিনা: আমি একটু ভালো সাবজেক্ট চাই। সবসময় চ্যালেঞ্জিং রোল করতে চেয়েছি। এজন্যই বেছে বেছে কাজ করি। ভালো ডিরেক্টর ভালো গল্প হলে আমি সবসময় ওপেন থাকি।

গ্লিটজ: অফট্র্যাকের ছবিতেই বেশি দেখা গেছে আপনাকে। কিন্তু আপনার গ্ল্যামারতো চোখ এড়ানোর নয়। মাসালা সিনেমায় নয় কেন?

শিনা: আমি আসলে কর্মার্শিয়াল, আর্ট দু’ধরণের ফিল্মই করতে চাই। ফারুকীর ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ তো অনেক ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের ফিল্ম; মালায়লাম যেটা করেছি ওটাও ওদের ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় হিরো মাম্মত্তির সঙ্গে, এখন যে দুটো করছি-একটা প্রায় শেষ, বাপ্পাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের জাস্টিস, অন্যটা অয়ন চ্যাটার্জির ‘কৃষ্ণগহ্বর’। ওটা একটা টোটাল কমার্শিয়াল ফিল্ম।

গ্লিটজ: আমি বলতে চাইছি যে আপনার ক্যারেক্টারটা কিন্তু এখানে একজন বিজ্ঞানীর, নাচে গানে ভরপুর নায়িকা নয়।

শিনা: ওখানেও অনেক গ্ল্যামারাস দেখাবে আমাকে। কিন্তু ওটা অনেক বেশি ড্রামার ওপর বেইজ করে। ইটস নট লাইক, আমি ডান্স করছি বা ব্লা ব্লা ব্লা। আমার মনে হয় থিয়েটার করে করে ক্যারেক্টারগুলো নিয়ে একটু বেশি ভেবে ফেলেছি। যেমন রবীন্দ্রনাথের গল্পে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর দুটো ছবিতে অভিনয় করেছি। উনারা তো ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড উইনিং ডিরেক্টর। উনি কেন আমাকে এসব ক্যারেক্টারে নিয়েছেন তা তাকেই জিজ্ঞেস করুন। (হাসি…)

গ্লিটজ: বাংলাদেশের ব্যাপারে আপনার আগ্রহের জায়গাটা কোথায়?

শিনা: বাংলাদেশের মানুষের আথিতেয়তাতো জগদ্বিখ্যাত। অভিনেত্রী হিসেবে ‘পিঁপড়াবিদ্যার’ও আগে আমিতো উপস্থাপক হয়ে বিপিএল দিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। বাংলাদেশের মানুষেরা আমাকে সবসময় যে ভালোবাসা দিয়েছে তা বিপিএল থেকেই শুরু। ফারুকীর সঙ্গে পিপড়া বিদ্যা যখন করলাম তারপর তো দর্শকদের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও স্ট্রং হয়ে গেলো। বাংলাদেশকে তো আমি রিপ্রেজেন্টও করেছি। ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ পুরো ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল করেছে। আমিও অনেক জায়গায় গিয়েছি। কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের খুব একটা পার্থক্যও দেখিনা। এটাকে আমি আমার সেকেন্ড হোমই মনে করি।

গ্লিটজ: এখানকার ফিল্মকে কিভাবে দেখেন আপনি?

শিনা: এখনতো খুব ভালো হচ্ছে বাংলাদেশের ফিল্ম। অনেক ট্যালেন্ডেটেড ফিল্ম মেকারও আছেন। ইন্টারন্যাশনালি ভালো ভালো সাকসেসফুল মুভি বানাচ্ছেন। এখানে অমিতাভ রেজা আছেন, গিয়াস উদ্দিন সেলিম আছেন, তৌকির আহমেদ, আবু শাহেদ ইমন আছেন; এরা খুব ভালো কাজ করছেন। আর ডেফিনিটলি সব থেকে কিং হলো মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। উনি তো বাংলাদেশের ফিল্মকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন- আমি উনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। অল থ্যাংকস গোজ টু ফারুকী!

গ্লিটজ: বাংলাদেশে আপনার নেক্সট জার্নিটা কেমন হতে পারে?

শিনা: বাংলাদেশে তো আমার জার্নিটা সবসময় ভালোই কেটেছে। সামনেও ভালো যাবে আশা করি। বিপিএল তো আছেই, বাংলাদেশের ফিল্মমেকারদের সম্পর্কে আরও জানতে চাই, আরও ফিল্ম দেখতে চাই। ইন্টারন্যাশনালি ভালো ফিল্ম হচ্ছে, আমার সঙ্গেও কিছু কথা চলছে। এখনই কিছু বলতে চাইনা। ভালো গল্প, ভালো ডিরেক্টর পেলে আবার কাজ করবো নিশ্চয়ই। 

গ্লিটজ: এ যাত্রায় কোন গোল্ডেন মোমেন্ট?

শিনা: মাঠে যখন নামি তখন সবাই যখন ‘শিনা শিনা’ বলে ডাকে, ওই মুহুর্তটা খুব ভালো লাগে আমার। ওদের সঙ্গে যে আমার একটা বন্ডিং আছে ওটা ফিল করি। এটাই আমার গোল্ডেন মোমেন্ট এখানে। তাছাড়া আরেকটা ভালো লাগার কথা বলতে চাই, বিপিএলে আমি এ নিয়ে তিনবার এলাম। বাংলাদেশের ক্রিকেটও এখন অন্যরকম একটা জায়গায় আছে। বিশ্বের বড় বড় দলগুলো থেকে খেলোয়াড়রা খেলতে এসেছেন। ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র পর এখানকার অডিয়েন্সের সঙ্গেও আমার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। সবমিলে চ্যানেল নাইন, ক্রিকেট টিম, অডিয়েন্স- দারুন কম্বিনেশন এবার।

গ্লিটজ: বিপিএলের ফাইনালে এবার কে জিতবেন বলে মনে করেন?

শিনা: আমার কোন প্রেফারেন্স নাই। ভালো টিম জিতুক। একটা ভালো কম্পিটিশন হোক। কে জিতবে তা, এক্সপার্টদের মতো ধারণা করতে পারবো না। 

গ্লিটজ: বিপিএলতো শেষ, ফেরার পর?

শিনা: আমার দুটো ফিল্মের কাজ চলছে। দুটোই ২০১৭ তে মুক্তি পাবে। ওগুলো নিয়েই ব্যাস্ততা। এছাড়া এবছর বেশকিছু ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডও করেছি। অ্যাড করতে ভালো লাগছে। কিন্তু সিনেমাই আমার টার্গেট।