একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ‘হাফ আখড়াই’, স্টুডিও থিয়েটার হলে অবয়ব নাট্যদলের ‘ফেরিওয়ালা’ এবং মূল মিলনায়তনে নাট্যধারার ‘অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা’।
উদীচীর দর্শকনন্দিত নাটক ‘হাফ আখড়াই’ রচনা করেছেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী এবং পরিচালনা করেছেন আজাদ আবুল কালাম।
নাটকটির গল্প ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা টপ্পা গানের একটি দলকে ঘিরে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, নারীর প্রতি সে সময়ের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, ধনী-গরীব বৈষম্যই এ নাটকটির মূল প্রতিপাদ্য।
১৮০৪ সালে বাংলা টপ্পা গানের জনক রামনিধি গুপ্ত কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন আখড়াই। নিজস্ব পদ্ধতিতে সংগীত শিক্ষা প্রচলনের মাধ্যমে দ্রুতই কলকাতার অভিজাত শ্রেণির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বয়সের ভারে শিষ্য মোহনচাঁদের কাছে শিক্ষাগুরুর দায়িত্ব হস্তান্তরের পরই ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে তার প্রতিষ্ঠিত আখড়াইয়ের চেহারা। গুরু-শিষ্যের দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে মোহনচাঁদ গঠন করেন আলাদা দল, যার নাম হয় “হাফ আখড়াই”। এ দ্বন্দ্বই অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে “হাফ আখড়াই” নাটকে।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিফাত হোসেন, মাসুমুর রহমান, আইনুল ইসলাম তপন, নাজমুল হক বাবু, আলমগীর হোসেনসহ অন্যরা।
স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ অবয়ব নাট্যদলের ‘ফেরিওয়ালা’ নাটকটি রচনা করেছেন আসাদুজ্জামান দুলাল, নির্দেশনা দিয়েছেন শহিদুল হক খান শ্যানন।
নাটকটির শুরুতেই দেখা যায়, চাড়াল জাতের দরিদ্র তরুণ লকাই ছুটতে ছুটতে এসে অশক্ত বাবা নীলকণ্ঠীকে খবর দেয়- শহর থেকে এক সাহেব এসেছে তাদের দুঃখ-কষ্ট কিনতে। কাজেই বাপ-ব্যাটা মিলে তাদের যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট একটা কলসিতে ভরে বিক্রি করতে যায়। স্থানীয় মেম্বার এসে বলে এসব মামুলি দুঃখ-কষ্ট কিনতে ক্রেতারা আগ্রহী নয়, তারা চায় ভিন্ন রকমের দুঃখ-কষ্ট।
এরপর লকাই আর নীলকণ্ঠী হিসাব করে দেখে বহু আন্দোলন সংগ্রামের প্রতীক প্রাচীন একটা ত্রিশূল আছে তাদের ঘরে। মেম্বার তার আর্থিক লাভের আশায় ঐ ত্রিশূল বিক্রি করতে তাদের উৎসাহ দেয়। লকাই রাজি হলেও বেঁকে বসে নীলকণ্ঠী। সে এই পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষা করতে চায়। এ নিয়ে ছেলের সঙ্গে বিরোধ হয় বাবার। এক পর্যায়ে ঐ ত্রিশূলে আত্মহত্যা করে নীলকণ্ঠী।
মেম্বার লকাইকে পরামর্শ দেয় লাশের বুক কেটে ত্রিশূলের ফলা বের করে দ্রুত বিক্রির জন্য। ততক্ষণে বোধোদয় হয় লকাইয়ের, এবার সে বেঁকে বসে। পরে লোলুপ মেম্বার লকাইকে হত্যা করে হস্তগত করে ঐতিহ্যবাহী ত্রিশূলটি।
নাটকটিতে অভিনয় করেন কাজী দেলোয়ার হেমন্ত, মাহমুদ হাসান জনি, ফ্রাংকোলিন সরকার, তানজিবা আক্তার শোভা, আবু সাঈদ, তানভীর, অপূর্ব দাস, আব্দুল হান্নান, এম ডি হাবিব, নাজমুল ইসলামসহ অন্যরা।
এছাড়া জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হওয়া নাট্যধারার ‘অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা’ নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন অলোক বসু। অতীশ দীপঙ্করের জীবন ও দর্শন উঠে এসেছে এ নাটকে।