সমুদ্রসম্পদ ব্যবহার করে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বঙ্গোপসাগরে অংশীদারিত্ব প্রত্যাশার পর এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত।
Published : 03 Sep 2014, 09:50 PM
‘ব্লু ইকোনমিকে’ পুরোপুরি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
ঢাকায় প্রথমবারের মতো ব্লু ইকোনমি নিয়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় যোগ দিতে আসা ভারতীয় এই ওশেনোগ্রাফার মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার সোনারগাঁও হোটেলে কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে সমুদ্রসম্পদ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিতের মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বঙ্গোপসাগর অংশীদারিত্ব’ প্রত্যাশার কথা বলা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী সমুদ্র অর্থনীতিতে অংশীজনদের মধ্যে বিভিন্ন মাত্রায় সহযোগিতার ভিত্তিতে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন।
এছাড়া গবেষণা, পর্যবেক্ষণ, তদারকি এবং তথ্য-উপাত্তের বিনিময়ের ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সম্পর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসন্ন কুমার বলেন, “সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার সঙ্গে সমুদ্র নিয়ে গবেষণায় বাংলাদেশের দক্ষ লোকবল লাগবে। কিন্তু এটি (গবেষণা) খুবই ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের একার পক্ষে কাজটি করতে পারবে না।”
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমা বিরোধের মিমাংসা হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের এখনই ‘উপযুক্ত সময়’ বলে মনে করেন তিনি।
ভারত ব্যাপক আকারে সমুদ্র গবেষণা শুরু করতে যাচ্ছে জানিয়ে প্রসন্ন কুমার বলেন, “এক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা থাকতে পারে। মিয়ানমারও এই কাজের অংশীদার হতে পারে।”
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের ওশেনোগ্রাফাররা মোদি সরকারে ‘প্রতিবেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ’ নীতির সুবিধা নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতীয় এই সমুদ্র বিজ্ঞানী বলেন, “প্রযুক্তি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক ইস্যুসহ এখানে অনেক বিষয় জড়ি আছে। তাই সবচেয়ে ভালো পন্থা হচ্ছে সহযোগিতা।।”
‘ব্লু ইকোনমির’ পক্ষে বাংলাদেশ জোরালো অবস্থান নেয়ার পর এক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার ভালো সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ মিংমাসার পরই ‘ব্লু ইকোনমি’ বিষয়ক কর্মশালা আয়োজনের আগ্রহ দেখায় বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপান এলাকা। এর ফলে সাগরের বিশালজুড়ে সম্পদ আহরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে সমুদ্র সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।
মূলত বিষয়টি মাথায় রেখেই কর্মশালার শেষ দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘অংশীদারিত্বে র’ কথা তুলে ধরেন।
প্রসন্ন কুমার বলেন, “সমুদ্রের বিশেষ অঞ্চল সম্পর্কে বাংলাদেশের ধারণা থাকতে হবে, যে অঞ্চলটি পরে দেশের প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে ব্যবহৃত হবে।
“এজন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের, যারা সমুদ্রকে বুঝবে। সমুদ্রের যে অংশটি আপনাদের রয়েছে, সেই অংশ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। বাংলাদেশের প্রয়োজন যোগ্য লোকবল এবং সমুদ্র বিদ্যাশিক্ষা কিছু প্রতিষ্ঠান। আপনাদের আগে বঙ্গোপসাগরের ধরন বুঝতে হবে।”
প্রসন্ন কুমার বলেন, “মেঘনা নদী থেকে প্রচুর পানি বঙ্গোপসাগরে আসে। কিন্তু এর পরিমাণ কিংবা সাগরের জন্য এটি কতটুকু উপযুক্ত সে সম্পর্কে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যখনই আমরা সম্পদ সৃষ্টির কথা বলি তখন আপনাকে জানতে হবে কি পরিমাণ সম্পদ আপনার হাতে আছে।”
পুরো বিষয়টিতে বেসরকারি খাতও জড়িত হতে পারে, তবে সরকারকেই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে, বলেন প্রসন্ন কুমার।