পাঁচ বছরে অর্থনীতির চাকা সচল থাকলেও মেয়াদের শেষ বছরে এসে রাজনৈতিক ধাক্কায় আক্রান্ত হয়েছে তা।
Published : 30 Dec 2013, 09:43 PM
অর্থনৈতিক গবেষক ও ব্যবসায়ী নেতাদের ভয়, দ্রুত পরিস্থতির উন্নতি না হলে দীর্ঘমেয়াদে সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
অর্থনীতির ওপর এমন সরাসরি আঘাত এর আগে কখনো আসেনি বলে মনে করছেন অনেকে।
অর্থনীতির প্রতিটি খাতই বিপর্যয়ের মধ্যে।
তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ আগুনে শতাধিক এবং রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মূত্যুর ঘটনায় দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পরও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল।
এখন আর সেটা থাকবে না বলে উদ্বিগ্ন পোশাক রপ্তানিকারকরা।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন। কখন কী হয় বুঝে উঠতে পারছেন না। কোনো পরিকল্পনাও করতে পারছেন না।
বিনিয়োগহীন অর্থের (অলস টাকা) পাহাড় জমে গেছে ব্যাংকে।
সঙ্কটে পড়েছে পর্যটন শিল্প। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব প্রথমবারের মতো শীতকালীন মেলা স্থগিত করে দিয়েছে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনিতেই আমাদের অনেক সমস্যা। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে আমরা এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছি।
“কিন্তু প্রতিদিনই আমাদের এই শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। যে রাজনীতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমরা দ্বিতীয় স্থান দখল করেছি, সেই রাজনীতিই এখন আমাদের পিষ্ঠ করছে।”
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েক মাসের সহিংসতায় অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হয়েছে। সংঘাত-সহিংসতা আরও দীর্ঘায়িত হলে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি পণ্যের ক্রেতারা অন্যত্র সরে যাবে। আর সেটা হলে অর্থনীতির প্রতিটি খাতই দীর্ঘ মেয়াদে বড় ক্ষতির মধ্যে ঢুকে পড়বে।”
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ পরিস্থিতির জন্য সরাসরি বিরোধী দলকে দায়ী করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্বমন্দার মধ্যেও গত পাঁচ বছরে অর্থনীতিকে আমরা শক্ত ভিক্তির উপর দাঁড় করিয়েছি। দু-একটি ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকই ছিল বেশ ভালো। এর আগে কোন সরকারের আমলেই অর্থনীতি এমন স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল না।
“কিন্তু অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থতির কারণে দেশের অর্থনীতি এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে রাজনীতিতে শান্তি ফিরে এলে অর্থনীতিতে ফের চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে বলে আমি মনে করি।”
মুহিত বলেন, “চলমান বৈশ্বিক মন্দা ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও সার্বিক বিচারে ২০১৩ সালে দেশের অর্থনীতি (শেষ প্রান্তিক বাদে) ইতিবাচক ধারায় ছিল। তবে বছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে সূচকগুলো বাস্তব কারণেই বেশ খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।”
গত পাঁচ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচ বছর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।
“বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গত চার অর্থবছরের গড় প্রবৃদ্ধি পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। তবে সমাজে ও রাজনীতিতে শান্তি ফিরে এলে অর্থনীতির সূচকগুলোতে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটবে বলে আশা করা যায় “
গত চার অর্থবছরে গড়ে ৬ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
রাজস্ব আদায়
রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশে গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট ৫২ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল। গত অর্থবছরে তা বেড়ে এক লাখ ১৬ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায়ের এই ইতবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে কীনা- তা নিয়ে সংশ্রয় দেখা দিয়েছে। আশানুরূপ রিটার্ন জমা না পড়ায় ব্যাক্তিশ্রেণী করদাতাদের আয়কর বিবরণী (রিটার্ন) জমা দেওয়ার সময়সীমা তিন দফা বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত রিটার্ন জমা দিতে পারবেন করদাতারা। এর আগে দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হলেও এবারও তিন বার বাড়ানো হয়েছে।
এরপরও কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন জমা পড়েনি বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “শুধু রাজস্ব নয়; ধ্বংসাত্মক রাজনীতির প্রভাব অর্থনীতির সব খাতেই পড়ছে। তবে আমরা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই একটা সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।”
নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুহিত।
রেমিটেন্স
২০০৮-০৯ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে রেকর্ড ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার এসেছে। এ হিসাবে গত চার অর্থবছরে রেমিটেন্স বেড়েছে ৪৯ শতাংশের বেশি।
তবে চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহের গতি নিম্মমুখি। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ কম।
রেমিটেন্সের ধীর গতি প্রসঙ্গে জায়েদ বখত বলেন, “দেশের অস্থিতিশীলতার সঙ্গে রেমিটেন্সের কোন সম্পর্ক নেই। আমার মনে জানুয়ারির পর থেকে রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়াবে। তবে এবার হয়ত (অর্থবছর) গতবারের মত ভালো প্রবৃদ্ধি হবে না “
গত অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
আমদানি
২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমদানি খাতে মোট ব্যয় হয়েছিল ২২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৩৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। চার বছরে বেড়েছে ৫১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানি ব্যয় হয়েছে ১২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির ধারা ইতিবাচক ধারায় থাকায় আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রপ্তানি
অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো সফলতা এসেছে রপ্তানিতে। পাঁচ বছরে রপ্তানি আয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট আয় হয়েছিল ১৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে তা বেড়ে ২৭ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আয় হয়েছে ১২ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।
আতিকুল ইসলাম বলেন, “এখন যে রপ্তানি আয় দেশে আসছে তা আগের নেওয়া অর্ডারের। এখন অর্ডার কমে গেছে তার প্রভাব কয়েক মাস পড়ে পড়বে।”
জায়েদ বখতও বিজিএমইএ সভাপতির সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
রিজার্ভ
পাঁচ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ।২০০৮-০৯ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ছিল ৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। যা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি।
এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের এমন স্বস্তিদায়ক পরিবেশ এর আগে কখনো তৈরি হয়নি। রিজার্ভের এই স্থিতি দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ভারত প্রথম (২৯৫ বিলিয়ন ডলার) ও তৃতীয় স্থানে পাকিস্তান (১০ বিলিয়ন ডলার)।
টাকার স্থিতিশীল বিনিময় হার
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায় টাকার মূল্যমান ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। সোমবার ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সা। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এই ‘একই’ দরে কেনাবেচা হচ্ছে ডলার।
রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে বলে জানান গভর্নর আতিউর রহমান।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে টাকা-ডলারের বিমিয় হার ছিল ৮১ টাকা। এর আগে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডলারের দাম বাড়তে বাড়তে ৮৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
“কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং বাজারভিত্তিক তদারকির কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মুদ্রার তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান।
বিনিয়োগ
গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর অভাবে বিনিয়োগে দীর্ঘদিনের মন্দা রয়েছে। গত বছর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম থাকলেও সরকার বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেয়। এবার সরকারের বিনিয়োগও কম। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ মন্দায় ব্যাংকগুলোতে সেপ্টেম্বর শেষে উদ্বৃত্ত তারল্য প্রায় সাড়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। একই সময়ে শিল্পে বিতরণ করা মেয়াদি ঋণ গত বছরের তুলনায় কমেছে।
মূল্যস্ফীতি
মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে গড় বার্ষিক ও পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিক মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৬২ ও ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
২০১২-১৩ অর্থবছরে তা অনেকটাই কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৭০ ও ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর শেষে তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫১ ও ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
“তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পণ্য সরবরাহ চেইন ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব সার্বিক মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকার ঝুঁকি অস্বীকার করার উপায় নেই,” শঙ্কা প্রকাশ করেন গভর্নর।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে বড় ধরনের উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) চলতি হিসাবে উদ্বৃত রয়েছে ৭০ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর শেষে তা ছিল ২৫০ কোটি ডলার।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ; যার চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে।
মাথাপিছু আয়
গত অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪৪ ডলার। বিগত পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয় দেড়গুণেরও বেশি হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
এই পাঁচ বছরে গ্রামীণ মানুষের আয় কয়েকগুণ বেড়েছে। একজন ক্ষেতমজুর এখন একদিনের মজুরি দিয়ে দশ কেজিরও বেশি চাল কিনতে পারে। পাঁচ বছর আগে তিন কেজি চাল কিনতে পারতো।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ করতে হবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। এখন পর্যন্ত ৭ শতাংশেও উন্নীত হতে পারেনি প্রবৃদ্ধি। কয়েক বছর ধরে তা ৬ থেকে সাড়ে ৬-এর সীমায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
রাজনৈতিক সংঘাত শুরুর আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবার প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আসন্ন মুদ্রানীতিতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে, এমন তথ্য দিতে যাচ্ছে। তবে এসব পূর্বাভাস আসছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত ধরে।
এর পরে রাজনৈতিক সঙ্কটে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিতে যে ক্ষতি, তা হিসাবে নেওয়া হয়নি।
জায়েদ বখত বলেন, “কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি যদি না হয়, তাহলে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান কোনোটাই করা যাবে না। তাতে মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৪ ডলার বৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়নের কোনো সূচকে যে অগ্রগতি, তা ধরে রাখা সম্ভব হবে না।”
সন্তোষজনক সার্বভৌম ঋণমান অর্জন
বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী দুটি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এন্ড পুওর এবং মুডি’স এর মূল্যায়নে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সন্তোষজনক সার্বভৌম ঋণমান অর্জন করে। এ দুটি ঋণমান ছিল যথাক্রমে বিবি- এবং বিএ-৩।
বিশ্বের অনেক ধনী দেশের ঋণমানে অবনমন ঘটলেও বাংলাদেশ ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালেও প্রতিষ্ঠান দুটির রেটিংয়ে একই ঋণমান ধরে রাখতে পেরেছে।
এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “বাংলাদেশের ঋণমানের ভালো অবস্থার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থায়ন ও লেনদেনের ভারসাম্যে ঝুঁকি হ্রাস, উন্নয়নের জন্যে পুঁজির প্রাপ্তি সহজতর হওয়া, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।”