বছরে একজন প্রবাসী দেশে পাঠান গড়ে ৩ লাখ টাকা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীদের প্রতিজন এক বছরে গড়ে তিন লাখ টাকার বেশি দেশে পাঠাচ্ছেন; আর প্রবাসীদের মোট আয় বা রেমিটেন্স থেকে গড়ে ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বিনিয়োগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2016, 07:16 PM
Updated : 16 June 2016, 07:16 PM

এছাড়া ২০১৫ সালে প্রবাসীরা যে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, তা মোট জাতীয় আয়ের ১২ দশমিক ৮৩ ভাগ।

বৃহস্পতিবার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রকাশিত ‘প্রবাস আয়ের বিনিয়োগ সম্পর্কিত জরিপ ২০১৬’ -এর ফলে এসব তথ্য উঠে আসে।

বিবিএস পরিচালিত এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জরিপের ফল তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন।

দিলদার হোসেন বলেন, “২০১৩ সালে বিবিএস অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করে। ওই শুমারির জন্য বরাদ্দ থেকে বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে প্রবাস আয়ের জরিপের প্রস্তাব করা হয়। তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রীর সম্মতিতে এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়।”

তিনি জানান, সারা দেশ থেকে ১০ হাজার ৪৫১টি খানা নমুনা হিসেবে গ্রহণ করে গত ১ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত মাঠ পর্যায় হতে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো এক বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জরিপের এই প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেলন হকও উপস্থিত ছিলেন।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বছরে একজন প্রবাসী গড়ে তিন লাখ দুই হাজার ১৮৪ টাকা দেশে পাঠান।

প্রবাসীদের কাছ থেকে মোট যে অর্থ আসে তার ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বিনিয়োগে যাচ্ছে। আর বিদেশে যাওয়ার জন্য যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যয় হচ্ছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ অর্থ।

২০১৫ সালে প্রবাসী আয়ের ৭৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ অর্থ বাড়িঘর/ফ্ল্যাট নির্মাণ ও সংস্কার খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে; আর অন্যান্য খাতে ১ থেকে ৭ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে।

প্রবাস আয়ের ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ জমি কেনায় ব্যবহার করা হয়েছে। 

জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, আর গত বছরে প্রবাস আয় গ্রহণকারীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবাস আয় সঞ্চয় করেছে। তবে ৫৯ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রবাস আয় গ্রহণকারী কোনো সঞ্চয় করেনি।

আর প্রবাস আয় থেকে সঞ্চয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয় করা হয়েছে ব্যাংক ব্যবস্থায়।

এর মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ সঞ্চয়ী হিসাব, ডিপিএস, এসডিপিএস আকারে ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, স্থায়ী আমানত হিসাবে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবাস আয় সঞ্চয় করা হয়েছে।

জরিপে বলা হয়, ৮৬ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কর্মরত আছেন। ২০১৫ সালে প্রবাস আয়ের ৯৬ শতাংশ আসে নগদে এবং ৪ শতাংশ আসে দ্রব্যমূল্য হিসেবে।

রেমিটেন্স পাঠানোয় সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ব্যাংক। এছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে আসছে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, আর ১২ দশমিক ৬৬ ভাগ পাঠানো হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও মানিগ্রামের মাধ্যমে।

পাঠানো টাকার ৪৪ দশমিক ১৮ শতাংশ টাকা বাবা-মা এবং ৪১ দশমিক ৭৮ শতাংশ পরিবারের স্বামী বা স্ত্রী গ্রহণ করে। ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ খানা প্রবাস আয়ের টাকা সঞ্চয় করে।

৮৬ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ পুরুষ। এরমধ্যে প্রায় ৫৪ দশমিক ৯০ ভাগ প্রবাসীর বয়স ৩৫ এর নীচে। আর নারী প্রবাসীদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের কম।

অনুষ্ঠানের বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “রেমিটেন্সের ৭৮ শতাংশ আসে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে। অবৈধ চ্যানেলের মধ্যে হুন্ডির মাধ্যমে আসে ১২ শতাংশ।”

এসময় তিনি আরও বলেন, ‍“সৌদি আরবে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের নানা রকম অপকর্মের কারণে বাঙ্গালিদের দুর্নাম হয়েছিল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি সফরের সময় দেশটির সরকারকে তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন।”

শিগগির বাংলাদেশ থেকে আবারও সৌদিতে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হবে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।