অর্থমন্ত্রী কম দামিগুলোর ক্ষেত্রে অনেক বাড়ালেও দামি সিগারেটের ক্ষেত্রে কর হার প্রায় অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করায় হতাশা প্রকাশ করে তামাকবিরোধীরা বলছেন, এই বাজেটে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রতিফলন নেই।
Published : 02 Jun 2016, 09:04 PM
বৃহস্পতিবার আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন, যাতে কমদামের সিগারেট এবং বিড়ি-জর্দা-গুলের করহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বাংলাদেশে ‘বিড়ির ভয়াবহতা সিগারেটের চেয়েও বেশি’ উল্লেখ করে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।
এতে বর্তমানে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ির বাজারমূল্য ৭ টাকা ৬ পয়সা থেকে সাড়ে ১০ টাকা হবে। ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার বিড়ির প্রতি প্যাকেটের দাম ৭ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ছাড়াবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের মধ্যে করহার সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য জর্দ্দা ও গুলের উপর। শুল্কহার ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন তিনি।
সিগারেটের মূল্যসীমা সরকার থেকে বেঁধে দেওয়া ‘বাজার অর্থনীতিতে কাম্য নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন থেকে সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্যই কেবল নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
কম দামি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের সর্বনিম্ন দাম ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন তিনি।
সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক হার ৪৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এর ঊর্ধ্বে যে দুটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান আছে সেটি ৬১ এবং ৬৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬২ ও ৬৪ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
রাজস্ব বোর্ডের বাজেট প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা বলছে, অথচ সিগারেটের উচ্চ স্তর ৪৪-৬৯ টাকার পরিবর্তে ৪৫ টাকা এবং তদূর্ধ্ব এবং প্রিমিয়াম স্তর আগের মূল্য অর্থাৎ ৭০ টাকা ও তদূর্ধ্ব বহাল রাখা হচ্ছে।
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বাজেট ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই দুই স্তরে সম্পূরক শুল্ক মাত্র ১% বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে এই দুই উচ্চ স্তরের সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা কার্যত নেই।”
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে একক স্তরভিত্তিক কর কাঠামোর যে দাবি করে আসছিল বাজেট ঘোষণায় তার প্রতিফলন নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ফলে বিভিন্ন স্তরের সুবিধা নিয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলোর রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকল।”
তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি ট্যাবোকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) এক বিবৃতিতে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের শুল্ক বাড়ানোয় সন্তোষ জানালেও সিগারেটের শুল্কহার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে।
“এতে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার তেমন প্রতিফলন নেই বাজেটে। রাজস্ব আয়ও বাড়বে না।”
গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর স্পিকারদের সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমরা আশা করি, ২০৪০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার নির্মূল করা সম্ভব হবে।”
জর্দা ও গুলের উপর প্রযোজ্য কর আহরণের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি বলেও বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়।