আয়োজকদের উপর ক্ষোভ থেকে জব্বারের বলীকে বিদায় জানালেও অন্যান্য এলাকার বলী খেলাগুলো চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাসিন্দা দিদার।
নাম দিদারুল আলম হলেও ‘দিদার বলী’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। জব্বারের বলী খেলায় শতাধিক বলি অংশ নিলেও দিদারের খেলা দেখতেই আসেন বেশিরভাগ দর্শক।
২০০২ সালে প্রথম চট্টগ্রামের জব্বারের বলী খেলায় অংশ নিয়েছিলেন দিদার। এবার নিয়ে ১১ বার শিরোপা উঠে তার হাতে।
মঙ্গলবার খেলার আগে দিদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবছরই জব্বারের বলী খেলায় আমার শেষ অংশগ্রহণ। আগামী বছর থেকে আর এখানে অংশ নেব না।”
কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা দিদার পেশায় মুদি দোকানি। শখের বসে বলী খেলতে যাওয়া শুরুর পর এখন তা তার নেশায় পরিণত হয়েছে।
শুরুর প্রসঙ্গে দিদার বলেন, “২০০০ সালে শখ করে কক্সবাজারে ডিসি সাহেবের বলী খেলায় প্রথম অংশ নিয়েছিলাম। প্রথমবার অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ২০০২ সালে চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলি খেলায় অংশ নিয়েছিলাম।”
গত বছর রানার্সআপ ঘোষণা করার ক্ষোভ জানিয়েছিলেন দিদার। “যতবার অংশ নিয়েছি কখনও দ্বিতীয় হইনি। তবে কয়েকবার যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।”
গত বছর ৩৩ মিনিট খেলার পর কোনো ফলাফল না হওয়ায় ‘কৌশলগত’ দিক বিবেচনা করে উখিয়ার শামসুকে জয়ী ঘোষণা করায় রানার্স আপ হয়ে মাঠ ছাড়েন দিদার।
মঙ্গলবার খেলার আগে আয়োজকদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে দিদার বলেনে, “আয়োজকরা চান আমি যেন আর অংশ না নিই। নতুন কাউকে তারা চ্যাম্পিয়ন করতে চান। তাই আর এখানে অংশ নেব না।”
চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময়ও আগামী বার থেকে আর অংশ না নেওয়ার কথা জানান দিদার।
তবে আগামী ২৭ ও ২৮ এপ্রিল কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলী খেলায় অংশ নেবেন বলে তিনি জানান।
এবছর সিআরবি শিরীষ তলায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত বলী খেলায়ও চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।
বলী খেলায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে রাজি ছিল না জানিয়ে দিদার বলেন, “পরে বিভিন্ন সময়ে শিরোপা জেতায় এখন আর বাধা দেয় না, বরং উৎসাহ দেয়।”
২০০২ সালে জব্বারের বলী খেলায় প্রথম অংশ নিয়েই কক্সবাজারের উখিয়ার ছিদ্দিক বলীর সঙ্গে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হন দিদার।
এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৮ ও ২০০৯ সাল খাগড়াছড়ির মর্ম সিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ২০০৭ সালে মর্ম সিংকে হারিয়ে প্রথম একক শিরোপার স্বাদ তিনি পান।
২০০৯ সালে দিদারকে জব্বারের বলী থেলা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরের তিন বছর তিনি অংশ নিতে পারেননি। ২০১৩ সালে পুনরায় ফিরেই টানা তিনবছর চ্যাম্পিয়ন হন।
সাত ভাই এক বোনের মধ্যে তৃতীয় দিদার ১৯৯৮ সালে কক্সবাজরের রামু হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর আর পড়ালেখা করেননি। পারিবারিক ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এর মাঝেই প্রতিবছর বলী খেলার প্রস্তুতি নেন দিদার। প্রতিদিন সকাল অথবা বিকালে দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে ব্যয়াম করেন।
দিদার বলেন, “এপ্রিল মাসে দুইটি বলী খেলায় অনুষ্ঠিত হয়। তাই ডিসেম্বর মাস থেকে এর প্রস্তুতি নিতে থাকি।”
এই চার-পাঁচ মাসে সকালে দিদারের নাস্তার সঙ্গে থাকে দুধ, ডিম; দুই বেলা ভাতের সঙ্গে খান মুরগি ও কবুতর।