১৬ মিনিটে শিরোপা দিদার বলীর হাতে

ষোলো মিনিট ২৫ সেকেন্ডের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ছিল শক্তিমত্তা আর কৌশলের মিশেল। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজারের রামুর দিদার বলীর শক্তির কাছে ধরাশীয় হন উখিয়ার কৌশলী শামসু বলী। একাদশ বারের মতো ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার শিরোপা উঠে দিদারের হাতে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2017, 01:04 PM
Updated : 25 April 2017, 01:32 PM

মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই বলীখেলার ১০৮তম আসর বসে লালদীঘি মাঠে। বলীদের লড়াই দেখতে হাজারো দর্শক জড়ো হয় মাঠে। খেলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সী ৭০ জন বলী।  

ফাইনালে মুখোমুখি হন গতবারের চ্যাম্পিয়ন শামসু বলী এবং দিদার বলী।  

গত বছর ৩৩ মিনিট খেলার পর কোনো ফল না হওয়ায় ‘কৌশলগত’ দিক বিবেচনায় শামসুকে জয়ী ঘোষণা করায় রানার আপ হয়ে মাঠ ছাড়েন দিদার।

মঙ্গলবার খেলার শুরু থেকে সমানে-সমানে লড়ে যাচ্ছিলেন শামসু ও দিদার। শক্তি প্রয়োগ করে দিদার খেলে গেলেও কৌশলী ছিলেন শামসু।

দুই প্রতিদ্বন্দ্বী একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে লড়াইয়ের মঞ্চে পড়ে যান দুইবার। এক পর্যায়ে রিং ধরে শেষ রক্ষা করার চেষ্টা করেন শামসু। তারপর দিদার তার চিরপরিচিত ভঙ্গিমায় শামসুকে পেছন থেকে ধরে আছড়ে ফেলেন। শামসুর পিঠ মাটিতে ঠেকে গেলে রেফারি দিদারের হাত তুলে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

প্রতিবারের মতো এবছরও খেলা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মালেক।

২০০২ সালে উখিয়ার ছিদ্দিক বলীর সঙ্গে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হন দিদার। এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৮ ও ২০০৯ সালে খাগড়াছড়ির মর্ম সিংয়ের সঙ্গে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হন দিদার। ২০০৭ সালে মর্ম সিংকে পরাজিত করে প্রথম একক শিরোপার স্বাদ পান দিদার।

মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বহিষ্কার ছিলেন দিদার। ২০১৩ সালে পুনরায় অংশ নিয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা চ্যাম্পিয়ন হন দিদার।  

এবার দিদার, শামসু ছাড়াও মিরসরাইয়ের লিয়াকত আলী ও কুমিল্লার রাশেদ সেমিফাইনালে অংশ নেন।  

সেমিফাইনালে দিদার লিয়াকতকে ২২ সেকেন্ডে ও শামসু দুই মিনিটেরও কম সময়ে রাশেদকে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেন।

প্রথম রাউন্ডে জয়ী প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে ও চ্যাম্পিয়নকে ২০ হাজার ও রানার-আপকে ১৫ হাজার টাকা নগদ ও ট্রফি দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণ করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

এর আগে বলী খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) মাসুদ-উল-হাসান।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা পরে জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত হয়। এ খেলার জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১২ বৈশাখে লালদিঘীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা, তার সঙ্গে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বসে বৈশাখি মেলা।

বলীখেলার ১০৮তম আসরকে সামনে রেখে এর মধ্যেই পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা।