রোববার চট্টগ্রাম নগরীতে ‘২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব’ শীর্ষক পৃথক দুটি আলোচনা সভায় এ দাবি জানায় চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
ব্যবসায়ীদের এ দুটি সংগঠনের সঙ্গে আলাদা আলোচনায় বসেছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজিবুর রহমান।
২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করে পণ্য বিক্রির উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা থাকলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা থেকে সরে এসেছিল সরকার।
তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হবে। এবার তা বাস্তবায়ন করতে অনড় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এনবিআরের সঙ্গে সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, “এশিয়া প্যাসিফিকে ভ্যাট হার সাত শতাংশের বেশি না হলেও আমাদের এখানে ১৫ শতাংশ।
“এশিয়ার মধ্যে আমাদের ব্যাংক ঋণ ও ব্যবসা ব্যয় সর্বোচ্চ। ভ্যাটের হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করে ব্যাংক ঋণের সুদের হার না কমানো হলে বিনিয়োগ কমে যাবে, অর্থনীতিতে কোনো গতি আসবে না।”
ভ্যাটের হারের নেতিবাচক প্রভাব ব্যবসায়ীদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, নতুন যে ভ্যাট আইন আসন্ন বাজেটে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে।
“কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের আয় সীমিত। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে একজন লোক নিয়োগ দিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসেব রেখে ভ্যাট প্রদান করা সম্ভব নয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাটের হার কমাতে হবে।”
ব্যবসায়ীদের জন্য আগের মতো প্যাকেজ ভ্যাট চালু রাখার দাবি জানান তিনি।
তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, “ভ্যাটের বিষয়টি বিবেচনায় আছে আমাদের।”
অন্যান্য প্রস্তাব
এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সভায় ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমাতে বর্তমান অডিট ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনার অনুরোধ জানান কেডিএসের গ্রুপের কর্ণধার খলিলুর রহমান।
স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের দাবি জানান তিনি।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালায় ঢালাওভাবে আমদানি পণ্যের প্রভাব থেকে দেশি শিল্প সুরক্ষায় যে ক’টি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে, তার কোনোটিই কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ খলিলুরের।
পোশাক রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি অর্জনে পোশাক খাতে বিশেষ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেন তিনি।
অব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে আরও বেশি নজরদারি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর।
“রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ৪০ শতাংশ। করের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের মূলধন ঘাটতি অগ্রহণযোগ্য।”
এছাড়াও তিনি করপোরেট করের হার কমানো, কর্মরত বিদেশিদের আয়করের আওতায় আনা, করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা বাড়ানোসহ কয়েকটি প্রস্তাব দেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যক্তিগত আয়ের করমুক্ত সীমা দু্ই লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা, নারী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বের ব্যক্তিদের জন্য এই সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেন।
ব্যবসায়ীদের কথা শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলো হল- দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা, রপ্তানিমুখী শিল্পে প্রণোদনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে যে পণ্য সুবিধাজনক অবস্থায় আছে,সেটার আওতা বাড়ানো।”
বন্দর নগরীর ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এনবিআরের একজন সদস্য প্রতিমাসে চট্টগ্রামে আসবেন ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিরসন করার জন্য।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে চট্টগ্রামে এনবিআর একটি ত্রৈমাসিক সভা করবে বলেও জানান তিনি।