রোববার ভোরে গভীর সাগরে মাছ ধরার ট্রলার থেকে ২০ লাখ ইয়াবাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তাদের দেওয়া তথ্যে পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাড়ি থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করে মোজাহারকে।
মোজাহার এই ইয়াবা চালানের মালিক এবং এই চক্রের অন্যতম হোতা বলে অভিযানে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিনের দাবি।
অভিযানে ট্রলার থেকে গ্রেপ্তাররা হলেন- মকতুল হোসেন (৫০), মো. আব্দুর নূর (৩৭), হেলাল (২১), আব্দুল খালেদ (৬০), জানে আলম (৩২), লোকমান (৫৯), এনায়েত উল্লাহ (৭২) ও নুরুল মোস্তফা (২৬)।
র্যাব জানায়, এদের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার মকতুল হোসেন হলেন মোজাহারের ম্যানেজার। নূর এই ইয়াবা চালানের মালিকদের একজন। বাকি ছয়জন ট্রলারের মাঝি-মাল্লা।
ইয়াবা চালান ও ট্রলারটির মালিক জলিলকে (লবণ জলিল) গ্রেপ্তার করতে পারেনি র্যাব।
বিকালে নগরীর পতেঙ্গায় র্যাব-৭ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এই চালান ধরা পড়ার পর কে আসল ব্যবসায়ী তা খুঁজে বের করেছে র্যাব।
“এসব ইয়াবার মালিক ওই সিন্ডিকেটেরও প্রধান। আশ্চর্যের বিষয় সমাজে সে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। লোকজন তাকে সাধু ব্যক্তি হিসেবে চেনে। তার ছেলেমেয়েরাও ভালো স্কুল কলেজে পড়ে। তারাও হয়ত জানত না তাদের পিতা এ কাজ করে।”
মাদক পাচার চক্রের সবার মুখোশ উন্মোচনের ঘোষণা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ইয়াবা ব্যবসা করবেন আর সাধু ব্যক্তি হিসেবে থাকবেন তা হবে না।”
মোজাহার আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর এলাকার চান মিয়ার ছেলে।
র্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার সাফায়াত জামিল ফাহিম সাংবাদিকদের বলেন, মোজাহারের দাবি করেছেন যে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ-মরিচ-মসলার ব্যবসা ছিল তার এবং বর্তমানে তিনি শাড়ি-কাপড়ের ব্যবসা করেন।
“তার এক সন্তান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। অন্য সন্তান ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে।”
সকালে সুগন্ধা আবাসিক এলাকার যে বাড়ি থেকে মোজাহারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি ছয় তলা। এর দ্বিতীয় তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন।
৪ মাসে ৭৬ লাখ ইয়াবা খালাস
২০ লাখ ইয়াবার চালানসহ মাছ ধরার ট্রলার আটক হলেও গত চার মাসে মোট ৭৬ লাখ ইয়াবার চারটি চালান এই চক্র খালাস করেছে বলে র্যাব জানায়।
মোজাহার, জলিল ও নূর মিলে ডিসেম্বর মাসে ১৬ লাখ এবং জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে তিন চালানের প্রতিটিতে ২০ লাখ করে আরও ৬০ লাখ ইয়াবা খালাস করেন বলে জানান র্যাব-৭ প্রধান মিফতাহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, তাদের সাথে আনোয়ারা-গহিরার সবুর, কালা মনু, ফয়েজ, সেলিম, জাহাঙ্গীর, জালাল, লেদু এবং মনুসহ আরও কয়েরকজন আছে।
“আনোয়ারা-গহিরায় কয়েকটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র সক্রিয়। তাদের মধ্যে সবেচেয়ে বড় চক্রটি মোজাহারের।”
সিন্ডিকেটে মিয়ানমারের নাগরিক
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রে তিন মিয়ানমারের নাগরিকের থাকার কথা র্যাবকে জানিয়েছেন।
র্যাব-৭ অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের নাগরিক শুক্কুর, লাল মিয়া ও মগ ওরফে সেন্সু এই চালানটি পাঠিয়েছিল।
“এর মধ্যে ৭ এপ্রিল রাত ১০টায় মগ ওরফে সেন্সু এফভি মোহছেন আউলিয়া ট্রলারে করে নগরীর ফিশারি ঘাট থেকে রওনা হয়। এসময় জাহাজে মোজাহার বাদে গ্রেপ্তার অন্যরাও ছিল।”
ট্রলারটি কর্ণফুলী নদী ধরে কুতুবদিয়া, কক্সবাজার, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন হয়ে ছেঁড়া দ্বীপের পশ্চিমে মিয়ানমারের পচাখালির বাতির বাহির এলাকায় পৌঁছায়।
মিফতাহ উদ্দিন বলেন, সেখানে মিয়ানমারের একটি তেলের জাহাজ থেকে ইয়াবা এই ট্রলারে তুলে দিয়ে সেন্সু ওই জাহাজেই থেকে যায়।
“পরে অন্যরা ট্রলারটি নিয়ে দক্ষিণ হাতিয়া দ্বীপের কাছে মোক্তারিয়া এলাকায় আসে। তারা কাটালিয়া হয়ে আনোয়ারা-গহিরার দিকে আসছিল।”
সাফায়াত জামিল বলেন, ট্রলারটি মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে অবস্থান করছিল। রাডারে ট্রলারটির অবস্থান ধরা পড়ে।
“ওই ট্রলারে জাল থাকলেও কোনো মাছ ছিল না। কয়েকটি বস্তার মধ্যে ছিল এসব ইয়াবার প্যাকেট।”
উদ্ধার করা ২০ লাখ ইয়াবার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানান।
এটি এখন পর্যন্ত দেশে ধরা পড়া ইয়াবার চালানের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম চালান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, যদিও র্যাবের কাছে সমুদ্রগামী জাহাজ নেই। ছোটখাটো বোট আছে। তবুও তারা ভয়াবহ মাদক ইয়াবার বিস্তার রোধে সফলতা দেখাচ্ছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র এলাকায় টহল বেড়ে যাওয়ায় ইদানীং ইয়াবা পাচারকারীরা টেকনাফ থেকে গভীর সমুদ্র হয়ে বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী ও হাতিয়া উপকূলে ইয়াবার চালান নিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তারা।