গ্রামীণফোনের শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা

‘অফার’ দিয়ে ‘প্রতারণার’ অভিযোগ তুলে গ্রামীণফোনের বর্তমান ও সাবেক ২২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেছেন এক গ্রাহক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2017, 03:43 PM
Updated : 29 March 2017, 04:14 PM

বুধবার চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম হারুন উর রশিদের আদালতে মামলাটি করা হয়। আদালত বাদীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে ইপিজেড থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটরটির সাবেক সিইও রাজীব শেঠি, সাবেক সিইও টরে জনসন, সাবেক সিইও বিবেক সুদ, সাবেক সিআরও কাজী মনিরুল কবির, বর্তমান হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল।

বাদী আইনজীবী এস এইচ এম হাবিবুর রহমান আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টেলিযোগাযোগ আইনে মামলাটি করতে তার পাঁচ বছর সময় লেগেছে।

“এরমধ্যে বিটিআরসি আমাকে তিন বছর ঘুরিয়েছে। থানার মামলা গ্রহণের ক্ষমতা থাকলেও তারা তা গ্রহণ করেনি। সবশেষে আজ নতুন করে অভিযোগ করার পর আদালত তা থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।”

বাদীর আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আদালতের পক্ষ থেকে বিটিআরসির প্রতিবেদন চাওয়া হয়।

“প্রতিবেদনে বিটিআরসি নিজস্ব মতামতও দিয়েছিল। যেটি আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। সব বিষয় উল্লেখ করে আজ আদালতে আবার নতুন অভিযোগ করা হয়।”

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ এর ৬৬(২)/৭৪ ধারায় বুধবার মামলাটি করা হয়।

৬৬ ধারায় রয়েছে- কোনো ব্যক্তি টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মিথ্যা বা প্রতারণামূলক বিপদ সংকেত, বার্তা বা আহ্বান প্রেরণ করিবেন না বা তাহা করাইবেন না৷ এর লঙ্ঘনে শাস্তি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

৭৪ ধারায় রয়েছে - কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন যে কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিলে, অথবা উক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দিলে বা ষড়যন্ত্র করিলে এবং উক্ত ষড়যন্ত্র বা প্ররোচনার ফলে অপরাধটি সংঘটিত হইলে, উক্ত সহায়তাকারী ষড়যন্ত্রকারী, বা প্ররোচনাকারী উক্ত অপরাধের জন্য বর্ণিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷

গ্রামীণফোনের একটি অফার নিয়ে সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে এই মামলাটি হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এসএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকায় ৪০ মিনিট কথা বলার অফারটি বাদীকে জানানো হয়েছিল।

“কিন্তু টাকার বিনিময়ে ওই অফার গ্রহণের পর তা ব্যবহার করার সুযোগ আমি পাইনি। তার আগেই জানানো হয় ওই ৪০ মিনিট শেষ।”

আজাদ ২০১২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতারণার অভিযোগ করলে আদালত এ বিচারিক অনুসন্ধানের আদেশ দেয়। এরপর ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল বিচারিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেন তৎকালীন মহানগর হাকিম নূরে আলম ভুঁইয়া।

২০১৩ সালের ২০ জুন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম লুৎফুল মজিদ নয়ন অভিযোগের ধারা পরিবর্তন করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করার নির্দেশনা দেন।

এরপর বাদী হাবিবুর রহমান আজাদ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ক্ষমতা অর্পণ পত্রসহ ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি নগরীর ইপিজেড থানায় মামলা করতে যান।

আজাদ বলেন, “থানা দীর্ঘদিন অপেক্ষায় রাখার পর মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করতে বলে। এরপর ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ করতে গেলে এ বিষয়ে একাধিক শুনানি শেষে ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আদালত আবার বিটিআরসিতে অভিযোগ করতে বলে।”

আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর বিটিআরসিতে লিখিত অভিযোগ করেন বাদী।

“দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বিটিআরসি আমার সাক্ষ্য গ্রহণ করে। বিধি মোতাবেক বিটিআরসির তদন্ত প্রতিবেদন, নথি, আলমত ও সাক্ষ্য আদালতে পাঠাতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি চেয়ার‌ম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।”

“বিটিআরসি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, আমি ইচ্ছে করে ওই অফার ভোগ করিনি। কিন্তু সেটা মিথ্যা।,”

বলেন আজাদ।

‘বাধ্য হয়ে’ বুধবার আদালতে নতুন অভিযোগ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “পাঁচ বছর ঘোরার পর আমার মামলা রেকর্ড হল। এখন আশাকরি আসামিরা আইনের আওতায় আসবে।”

এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা পরে এই বিষয়ে বক্তব্য দেবেন।