ঢাকায় বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে রোববার চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলন করে এই দুই যুবককে গ্রেপ্তারের খবর দিয়ে বলেছিলেন, এরা খুনে ‘সরাসরি জড়িত’ ছিলেন।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিম এবং ফটিকছড়ির রাঙামাটিয়া এলাকার আনোয়ারকে কবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু বলেনি।
দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে দুজনকে আদালতে পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার। মহানগর হাকিম হারুন অর রশীদের আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর রাত ৯টার দিকে তাদের কারাগারে নেওয়া হয়।
মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দুজনে হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।”
জবানবন্দিতে তারা কী বলেছেন, সে বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি ডিবির সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান।
সিএমপি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে সাত থেকে আটজন জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে দুজন হলেন ওয়াসিম ও আনোয়ার।
“আমরা দুজনকে ধরেছি। এই হত্যাকাণ্ডে বাকি যারা জড়িত, তাদের সম্পর্কেও আমরা জেনেছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
হত্যাকাণ্ডের পর মোটর সাইকেলে যে তিনজনকে পালাতে দেখা গিয়েছিল, ওয়াসিম তাদের একজন বলে পুলিশ কমিশনারের দাবি।
“সেই (ওয়াসিম) মিতুকে গুলি করেছে। আনোয়ার অনুসরণকারীদের একজন,” বলেন ইকবাল বাহার।
গুন্নু ও রবিনের ‘সম্পৃক্ততা নেই’
দেশজুড়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর শাহ জামান রবিন ও আবু নসুর গুন্নু নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন পুলিশ বলছিল, মোটর সাইকেলের তিন আরোহীর মধ্যে রবিন একজন বলে তারা সন্দেহ করছেন।
কিন্তু রোববার সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, এই দুজনের সম্পৃক্ততা মিতু হত্যাকাণ্ডে নেই।
“আগে যাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে, সেটি আলাদা ব্যাপার।’
গত ৮ জুন হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ থেকে গুন্নু এবং ১১ জুন বায়েজিদ বোস্তামী থানার শীতল ঝর্ণা থেকে রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
গুন্নুর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছিল, মুসাবিয়া দরবার শরীফের বিরোধের জের ধরে এক পক্ষের প্ররোচনায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
গুন্নু ও রবিনের বিষয়ে কী হবে- জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, “এখন পর্যন্ত তাদের যেহেতু সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি, যখন মামলার নিষ্পত্তি হবে, তখন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জঙ্গি নয়, পেশাদাররা
সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় সম্প্রতি কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামে সহকর্মীর স্ত্রী একই কায়দায় খুন হলে পুলিশের সন্দেহ হয় জঙ্গিদেরই।
যেহেতু বাবুল চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন, সে কারণে এই সন্দেহের কথা বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।
এরপর তদন্ত জঙ্গিদের নিয়ে আবর্তিত হলেও ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এখন বলছে, পেশাদার অপরাধীরাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।
ইকবাল বাহার বলেন, “হত্যাকারীরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। যে দুজন গ্রেপ্তার হয়েছে তারা পেশাদার অপরাধী।”
কারা খুন করিয়েছে- প্রশ্নে তিনি বলেন, “কার নির্দেশে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটি আমরা পর্যায়ক্রমে বের করব।”
তবে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্ত থেকে এখনই বাদ দিতে চাইছেন না পুলিশ কমিশনার।
“ঘটনাটা টার্গেট কিলিং। তবে জঙ্গি সম্পৃক্ততা, ব্যক্তিগত, চোরাচালান, ব্যবসা সংক্রান্ত কি না, নিশ্চিত না হয়ে বলা যাবে না।”
গ্রেপ্তার দুজনের কাছে ‘অনেক তথ্য পাচ্ছেন’ দাবি করলেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেশি কিছু বলতে রাজি হননি পুলিশ কমিশনার।
“৬ থেকে ৭ জন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বাকি যারা সবাইকে পেলে তদন্ত করে ঘটনার মোটিভ বলতে পারব। পূর্ণ তদন্ত শেষ হলে আমি পুরোপুরি বলতে পারব। অনুমাননির্ভর কোনো কথা বলব?”
মোটর সাইকেলে থাকা তিনজনসহ মোট আটজন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এবিষয়ে সিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “শুধু দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তথ্য জানতে হয়ত অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তা কোনোভাবে গ্রেপ্তার বলা যাবে না।”