অবশেষে স্বপ্নের ফাইনালে নিউ জিল্যান্ড

সপ্তমবারের চেষ্টাতে শিকে ছিড়ল; সেমি-ফাইনালের গণ্ডি পেরিয়ে অবশেষে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল নিউ জিল্যান্ড। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৪ উইকেটে হারিয়ে মেলবোর্নের ফাইনালের টিকেট পেয়েছে বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2015, 01:27 AM
Updated : 24 March 2015, 01:21 PM

দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের ৩৮তম ওভারে বৃষ্টি নামলে প্রায় দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। এতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৩ ওভারে। এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ফাফ দু প্লেসির দুই মেজাজের অর্ধশতকে ৫ উইকেটে ২৮১ রান করে প্রোটিয়ারা।

তবে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে নিউ জিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৮ রান। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও কোরি অ্যান্ডারসনের দুই অর্ধশতক ভিত গড়ে দিলেও স্বাগতিকদের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান গ্র্যান্ট এলিয়টের। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে এক বল বাকি থাকতে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কিউইরা।

তিনশ’ রানের কাছাকাছি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউ জিল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ম্যাককালাম। মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পথে তিনি করেন ৫৯ রান। তার ২৬ বলের বিধ্বংসী ইনিংসটি ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

ম্যাককালামকে ফেরানোর পর কেন উইলিয়ামসনকেও বিদায় করেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার মর্নে মরকেল। ৫৯ রানে তিন উইকেট নেন এই পেসার।

রস টেইলর ও মার্টিন গাপটিল এগিয়ে নিতে থাকেন নিউ জিল্যান্ডকে। কোয়ার্টার-ফাইনালে এই দু্ই জনের জুটি ভেঙেছিল টেইলরের রান আউটে। এবার ভাঙে সেই ম্যাচে দ্বিশতক করা গাপটিল রান আউট হলে।

উইকেটে থিতু হয়ে টেইলর বিদায় নিলে অস্বস্তিতে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব এলিয়ট-অ্যান্ডারসনের। ৯৮ বলে ১০৩ রানের দারুণ এক জুটি উপহার দেন এই দুই জন।

রান আউট হয়ে আগেই বিদায় নিতে পারতেন অ্যান্ডারসন। ৩৩ রানে তাকে ফেরানোর সেই সুযোগটি হাতছাড়া করেন ডি ভিলিয়ার্স। অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর ফিরে যান অ্যান্ডারসন (৫৮)। তার ৫৭ বলের ইনিংসটি সাজানো ৬টি চার ও ২টি ছয়ে।

এরপর লুক রনকির দ্রুত বিদায় আবার অস্বস্তিতে ফেলে দেয় সহ-আয়োজকদের।

তবে ড্যানিয়েল ভেটোরিকে নিয়ে বাকি কাজটুকু ঠিকই সারেন ম্যাচ সেরা এলিয়ট। ডেল স্টেইনের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেয়া এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৮৪ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া নিউ জিল্যান্ডের এই ব্যাটসম্যানের ৭৩ বলের ইনিংসটি ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় গড়া।

৪২তম ওভারের শেষ বলে জীবন পেয়েছিলেন এলিয়ট। ফারহান বেহারদিন তার ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারলে চিত্রটা ভিন্ন হতে পারতো। ক্যাচ ধরতে গিয়ে আরেকটু হলেই সংঘর্ষ হতে যাচ্ছিল জেপি ডুমিনি ও বেহারদিনের মধ্যে।

শেষ ওভারে ১২ রান প্রয়োজন ছিল নিউ জিল্যান্ডের। ভেটোরি একটি চার মেরে কাজটা একটু সহজ করেন আর পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে আরেকটি সেমি-ফাইনাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায় নিশ্চিত করেন এলিয়ট।

এর আগে মঙ্গলবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ট্রেন্ট বোল্টের দারুণ বোলিংয়ে ৩১ রানে বিদায় নেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক।

অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান আমলা। ৬ রানে একবার জীবন পাওয়া ডি কক থার্ড ম্যানে টিম সাউদির হাতে ধরা পড়েন।  

রাইলি রুশোর সঙ্গে ১১০ বলে ৮৩ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেন দু প্লেসি। অ্যান্ডারসনের বলে মার্টিন গাপটিলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে রুশোর বিদায় ভাঙে প্রতিরোধ গড়া জুটি।

এসেই রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। ৮৫ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন দু প্লেসিও। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে এই সময়ে ৭১ বলে ১০২ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।

বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে এই জুটি টিকে মাত্র দুই বল। অ্যান্ডারসনের প্রথম বলে এক রান নেন ডি ভিলিয়ার্স। পরের বলে লুক রনকির গ্লাভসবন্দি হন দু প্লেসি। ১০৭ বলে খেলা তার ৮২ রানের ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও ১টি ছক্কায়।

ক্রিজে এসেই ঝড়ো ব্যাটিং করেন ডেভিড মিলার। মাত্র ১৮ বলে ৪৯ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলার পথে ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি উপহার দেন তিনি। মিলারের ইনিংসটি ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

বৃষ্টির পর খুব বেশি বল খেলার সুযোগ না পাওয়া ডি ভিলিয়ার্স অপরাজিত থাকেন ৬৫ রানে। তার ৪৫ বলের ইনিংসটি ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৩ ওভারে ২৮১/৫ (আমলা ১০, ডি কক ১৪, দু প্লেসি ৮২, রুশো ৩৯, ডি ভিলিয়ার্স ৬৫*, মিলার ৪৯, ডুমিনি ৮*; অ্যান্ডারসন ৩/৭২, বোল্ট ২/৫৩)

নিউ জিল্যান্ড: ৪২.৫ ওভারে ২৯৯/৬ (গাপটিল ৩৪, ম্যাককালাম ৫৯, উইলিয়ামসন ৬, টেইলর ৩০, এলিয়ট ৮৪*, অ্যান্ডারসন ৫৮, রনকি ৮, ভেটোরি ৭*; মরকেল ৩/৫৯, ডুমিনি ১/৪৩, স্টেইন ১/৭৬)

ম্যাচ সেরা: গ্র্যান্ট এলিয়ট।