মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভার ৫ বলে ২৬৫ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসের ২০ ওভার শেষে বৃষ্টি নামে। সে সময় স্কোর ছিল ৮২/৩। দেড় ঘন্টা পর খেলা শুরু হলে ডাকওয়ার্থ/লুইস পদ্ধতিতে অতিথিদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩ ওভারে ২০৬ রান।
২৯ ওভার ৫ বলে বলে ১৬২ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড।
চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হামিশ রাদারফোর্ডকে (১) বোল্ড করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন অফস্পিনার সোহাগ গাজী।
বদলি বোলার হিসেবে বল করতে এসে প্রথম ওভারেই সাফল্য পান আরেক অফস্পিনার মাহমুদুল্লাহ। অভিষিক্ত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অ্যান্টন ডেভসিচকে বোল্ড করেন তিনি।
মাশরাফি বিন মুর্তজার বদলে বল করতে এসে প্রথম ওভারেই সাফল্য পেয়েছেন পেসার রুবেল হোসেনও। বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান রস টেইলরকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী করেন তিনি।
বৃষ্টি থামার পর ১৩ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের প্রয়োজনীয়তা দাঁড়ায় ১২৪ রান। প্রথম তিন ওভারে ৩৮ রান নিয়ে লক্ষ্যটা ধরাছোঁয়ার মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন গ্রান্ট এলিয়ট ও কোরি অ্যান্ডারসন।
বদলি বোলার হিসেবে এসে পর-পর তিন বলে অ্যান্ডারসন (৩১ বলে ৪৬), অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (০) ও জেমস নিশামকে (০) বিদায় করে ম্যাচের পাল্লা স্বাগতিকদের দিকে নিয়ে আসেন রুবেল। বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক পেলেন তিনি।
এরপর নাথান ম্যাককালামকে মাশরাফির হাতে ক্যাচে পরিণত করে ইনিংসে ৪২ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট শিকারের স্বাদও পান রুবেল।
তবে বদলে যাওয়া এই পেসারের কৃতিত্ব তাতে শেষ হয়নি। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে এলিয়টকে আউট করে নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসা মুড়ে দিয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো বোলারের সেরা বোলিংয়েও ভাগ বসালেন তিনি।
২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে এলিয়টের ক্যাচ ধরা মাশরাফির সঙ্গে এখন রুবেল যৌথভাবে বাংলাদেশের এক ইনিংসে সেরা বোলিং নিদর্শনের মালিক। কেনিয়ার সঙ্গে ২০০৬ সালে এই রেকর্ড গড়েছিলেন মাশরাফি।
রুবেলের আগের সেরাটাও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ছিল। ২০১০ সালে এই মাঠেই ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
চোটের কারণে ব্যাট করতে নামেননি কেন উলিয়ামন। তাই ৭৭ বলে ৭১ রান করা এলিয়টের আউটেই শেষ হয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড ইনিংস।
নিউ জিল্যান্ডের সামনে চ্যালেঞ্জ ছোড়া ইনিংস দেয়া বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু ভালো হয়নি। সাত ওভারের মধ্যে ২৫ রানে প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান হারায় স্বাগতিকরা।
টিম সাউদির করা তৃতীয় ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তামিম ইকবাল (৫)।
টেস্ট সিরিজের সেরা খেলোয়াড় মুমিনুল হক তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে কোনো বল না খেলেই শূন্য রানে বিদায় নেন। এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি এনামুলও (১৩)।
জ্বরের জন্য ওয়ানডে সিরিজে খেলা হচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। তার বদলে একাদশে আসা
নাঈমের সঙ্গে মুশফিকের ১৫৪ রানের জুটি দলকে ৩ উইকেটে ১৭৯ রানের দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করায়। জেমস নিশামের করা ব্যাটিং পাওয়ার প্লের দ্বিতীয় ওভারে (৩৭তম) মুশফিক ও নাসির হোসেনের (১) বিদায় স্বাগতিকদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।
৯০ রান করা মুশফিকের ৯৮ বলের ইনিংসে ২টি বিশাল ছক্কা ও ৮টি চার। এটি তার দ্বাদশ অর্ধশতক।
নাঈম, মুশফিকের ৩০ ওভার স্থায়ী এই জুটির সংগ্রহ যে কোনো উইকেটে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১০ সালের অক্টোবরে এই মাঠেই উদ্বোধনী জুটিতে ১২৭ রান করেছিলেন ইমরুল কায়েস ও শাহরিয়ার নাফীস।
ষষ্ঠ উইকেটে সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৪৭ বলে ৫১ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন নাঈম (৮৪)। নাঈমের ১১৫ বলের ইনিংসে ১২টি চার। প্রথম ২৯ বলে মাত্র ১ রান করা নাঈম সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন।
এটি নাঈমের চতুর্থ অর্ধশতক ও ক্যারিয়ার সেরা। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৩ ছিল তার সর্বোচ্চ।
নাঈমের বিদায়ের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও মাহমুদুল্লাহ (৩০ বলে ২৯) ও আব্দুর রাজ্জাক (৮ বলে ১২) অতিথিদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ এনে দেন। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২৪১ রান। ২০১০ সালে ঢাকা ও ক্রাইস্টচার্চে দুবার এ রান করেছিল বাংলাদেশ।
৪২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের সেরা বোলার নিশাম। ৩৪ রানে ৩ উইকেট নেন সাউদি।
সাবেক অফস্পিনার শেখ সালাউদ্দিনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচ শুরুর আগে এজন্য মাঠে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৯.৫ ওভারে ২৬৫ (তামিম ৫, এনামুল ১৩, মুমিনুল ০, মুশফিক ৯০, নাঈম ৮৪, নাসির ১, মাহমুদুল্লাহ ২৯, সোহাগ ৬, মাশরাফি ৬, রাজ্জাক ১২, রুবেল ৩*; নিশাম ৪/৪২, সাউদি ৩/৩৪, অ্যান্ডারসন ২/৪৬)
নিউ জিল্যান্ড: ২৯.৫ ওভারে ওভারে ১৬২ (রাদারফোর্ড ১, ডেভিসিচ ২২, এলিয়ট ৭১, টেইলর ৮, অ্যান্ডারসন ৪৬, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ০, নিশাম ০, নাথান ম্যাককালাম ১০, সাউদি ০, ম্যাকক্লেনাগান ১*; রুবেল ৬/২৬, মাহমুদুল্লাহ ১/২৭, সোহাগ ১/৩৬, রাজ্জাক ১/৪৫)
ম্যাচ সেরা: রুবেল হোসেন।