স্বপ্নের ভেলায় এইচপি দলের অস্ট্রেলিয়া যাত্রা

দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নয়; নয় কোনো অফিসিয়াল সফরও। বলা চলে অনুশীলন প্রক্রিয়ারই অংশ। তবু অস্ট্রেলিয়া সফর বিসিবি হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) স্কোয়াডের ক্রিকেটারদের চোখে এঁকে দিয়েছে স্বপ্নের মায়াঞ্জন। কারও লক্ষ্য এখানে ভালো পারফর্ম করে জাতীয় দলে ফেরা, কেউবা চান নির্বাচকদের নজর কাড়তে, কারও চাওয়া নিজেকে শাণিত-সমৃদ্ধ করে উন্নতির পথে এগিয়ে চলা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2017, 01:43 PM
Updated : 1 July 2017, 01:43 PM

শনিবার রাতে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাচ্ছে বিসিবি এইচপি স্কোয়াড। ডারউইনে নর্দান টেরিটরি নির্বাচিত একাদশের বিপক্ষে পাঁচটি একদিনের ও একটি তিন দিনের ম্যাচ খেলবে এই দল।

মজার ব্যাপার হলো, বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে স্কোয়াড ঘোষণা করল যাত্রার দিন বিকেলে! তবে যারা যাচ্ছেন, তারা জানতেনই। বিসিবি একাডেমি ভবনে দিনজুড়েই দেখা গেল ক্রিকেটারদের ছুটোছুটি, কিটব্যাগ সংগ্রহ আর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

একসময় জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য এনামুল হক দলের বাইরে আছেন বেশ কিছুদিন ধরে। বিদেশ সফরে যাচ্ছেন অনেকদিন পর। তার চোখে-মুখে সেই রোমাঞ্চ। জানালেন এই সফরকে বানিয়ে নিতে চান জাতীয় দলে ফেরার সিঁড়ি।

“অনেকদিন পর সফরে যাচ্ছি। অবশ্যই নিজের মধ্যে এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। অনেকটা নতুনের মত, সেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সফরের মতো মনে হচ্ছে। আমি খুব আত্মবিশ্বাসী। স্যাররা বিশ্বাসী আমার উপর। এজন্যই সুযোগ পেয়েছি। তাদের আশাটা পূরণ করাটা মূল লক্ষ্য হবে। চাইব, তাড়াতাড়ি যেন জাতীয় দলে ফিরতে পারি।

এবারের ঢাকা লিগে ৩৭.২৫ গড়ে ৫৯৬ রান করেছেন এনামুল। লিগের ধারাবাহিকতাই এইচপি দলে ধরে রাখতে চান এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।

“ঘরোয়া ক্রিকেটে যে ম্যাচগুলো খেলেছি, ওগুলো বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে। ওই সাহস নিয়ে যাচ্ছি। প্রিমিয়ার লিগে যেভাবে খেলেছি ওই খেলা ধরে রাখতে চাই। যেহেতু কঠোর পরিশ্রম করছি অনেকদিন ধরে, আশা করি ভালো কিছু করার।”

অনেক আশা জাগিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আবির্ভাব জুবায়ের হোসেনের। তবে সেই আশা এখন রূপ নিয়েছে হতাশায়। তরুণ লেগ স্পিনারের নিজের দায় আছে কিছু, তবে তাকে সামলানোয় বিসিবির ব্যর্থতাও চোখে পড়ার মতো; ঘরোয়া ক্রিকেটেও যে খেলার সুযোগ পান না।

এবার ঢাকা লিগে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন জুবায়ের। জাতীয় লিগে সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র দুই ম্যাচে। এইচপি দলের সফরে জুবায়েরর প্রথম লক্ষ্য তাই একাদশে জায়গা করে নেওয়া। এরপর পারফর্ম করে আবার জাতীয় দলে ফেরা।

“লিগে তো খেলার সুযোগই হয় না। এর চেয়ে বেশি সুযোগ আসে এই ধরনের সফরে। চেষ্টা থাকবে সুযোগ পেলে ভালো কিছু করার। যত সফর করেছি, খারাপ করিনি। বাইরের দলগুলোর সাথে আমার বোলিং ভালো ছিল। চেষ্টা থাকবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার।”

“এখানে পারফরম্যান্স ভালো করলে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ থাকবে। ক্যাম্পে ঢোকা সহজ হবে। চেষ্টা থাকবে এখানে ভালো কিছু করার।”

বাংলাদেশের নিষ্প্রাণ উইকেটেও এবার ঢাকা লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আবু হায়দার রনি। ১৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৫ উইকেট। তার পরও জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক না পাওয়া একটু মন খারাপ ছিল। তবে দমে না গিয়ে পারফর্ম করে যেতে চান এই বাঁহাতি পেসার। শিখতে চান এই সফর থেকে।

“দেশের শীর্ষ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট অনেক বড় অর্জন। আমার আত্মবিশ্বাস এখন অনেক উঁচুতে। চেষ্টা করব প্রিমিয়ার লিগের মতোই পারফর্ম করার। অস্ট্রেলিয়ায় সফর করার সুযোগ সবসময় হয় না। এই অভিজ্ঞতা তাই হবে মূল্যবান। চেষ্টা করবো অনেক কিছু শিখতে যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।”

গত শ্রীলঙ্কা সফরে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল সাইফ উদ্দিনের। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য বাংলাদেশের যে দীর্ঘ অনুসন্ধান, সেটির ভবিষ্যত সমাধান মনে করা হচ্ছে আপাতত তাকেই। তরুণ অলরাউন্ডারও এই সফর দিয়ে আরেকটু এগোতে চান ভবিষ্যতের পথে।

“অস্ট্রেলিয়ায় পেস বোলারদের জন্য অনেক সহায়তা থাকবে। চেষ্টা করব শেখার। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হওয়ায় সামনে সুযোগ বেশি। তবে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগানোর।”

গত নিউ জিল্যান্ড সফরে অনেকের ইনজুরিতে অনেকটা আচমকাই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর। আপাতত জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও তাকে মনে করা হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যত। নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টায় অস্ট্রেলিয়া সফরটি শান্তর কাছে শিক্ষা সফর।

“অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে খেললে অবশ্যই আমাদের খুব ভালো অভিজ্ঞতা হবে। ফাস্ট, বাউন্সি উইকেট হবে। শেখার অনেক কিছু থাকবে। আমি সবসময় চেষ্টা করি লম্বা সময় ব্যাট করার। এবারও লক্ষ্য থাকবে লম্বা ইনিংস খেলার।”

এরকম চাওয়া, লক্ষ্য আছে প্রায় সবারই। সফর শেষে মেলানো হবে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। যাদের হিসাব মিলবে, হয়ত তাদের কপালও খুলবে!

বিসিবি এইচপি স্কোয়াড: এনামুল হক, সাইফ উদ্দিন, লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), তানবির হায়দার খান, মেহেদি মারুফ, ইমতিয়াজ হোসেন, আবু হায়দার রনি, আবু জায়েদ চৌধুরি, নাজমুল হোসেন শান্ত (সহ-অধিনায়ক), এবাদত হোসেন, তাসামুল হক, আবুল হাসান রাজু, ইরফান শুক্কুর, ইয়াসির আলি চৌধুরি, নিহাদ-উজ-জামান, জুবায়ের হোসেন।

স্ট্যান্ড বাই: সাদমান ইসলাম, হোসেন আলি, ইমরান আলি এনাম, আল আমিন।