অস্ট্রেলিয়ার ‘স্টার’ ব্যাটসম্যান স্টার্ক

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে স্পিন। শুরু থেকেই পিচে ধুলোর ওড়াওড়ি, বোলারের বুটের ক্ষত। চতুর্থ ওভার থেকে তীক্ষ্ণ টার্ন। মাঝেমধ্যেই অসমান বাউন্স। ধারাভাষ্য কক্ষে থাকা শেন ওয়ার্ন প্রথম সেশনের পরই বললেন, “এখনই মনে হচ্ছে অষ্টম দিনের উইকেট!”

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 12:34 PM
Updated : 23 Feb 2017, 12:42 PM

ওয়ার্নের মতে, আড়াইশ রানই এখানে ভালো স্কোর। দারুণ শুরুর পর অস্ট্রেলিয়া ধুঁকেছে দিনভর। দিন শেষে তবু পেয়ে গেছে সেই ভালো স্কোরের দেখা। কাঙ্ক্ষিত আশ্রয়ে অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গেছেন মিচেল স্টার্ক!

বল হাতে ঝড় তোলার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে স্টার্কের ব্যাটও চলে দারুণ। শুরুতে দারুণ এক অর্ধশতক করেছেন ম্যাট রেনশ। শেষে ঝড় তুলেছেন স্টার্ক। ভারতের বিপক্ষে পুনে টেস্টের প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়া তুলেছে ৯ উইকেটে ২৫৬।

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস দুই ব্যাটসম্যান আর দুটি জুটির গল্প। শুরু আর শেষে অর্ধশতক করেছেন রেনশ ও স্টার্ক। বলার মত জুটিও দুটি, প্রথম আর শেষ উইকেটে!

বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন স্টার্ক। নইলে দিনের নায়ক উমেশ যাদব। স্পিন মঞ্চেও দুর্দান্ত বোলিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন ভারতের এই ফাস্ট বোলার। নিয়েছেন ৪ উইকেট।

পুনের অভিষেক টেস্টে টস জিতেছেন সফরকারী অধিনায়ক। ব্যাটিং নিতে দুবার ভাবার কারণ নেই। স্পিন পরীক্ষা সামলে অস্ট্রেলিয়াকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন ডেভিড ওয়ার্নার ও রেনশ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবেই টেকনিক ও টেম্পারামেন্ট দিয়ে নজর কেড়েছেন রেনশ। তরুণ ব্যাটসম্যান স্পিনের সর্বোচ্চ পরীক্ষায়ও প্রথম সুযোগে পেয়ে গেছেন পাশ নম্বর।

অন্য প্রান্তে ওয়ার্নারও নিজের সহজাত আক্রমণাত্মক খেলা দমিয়ে টিকে থেকেছেন মাথা নীচু করে। ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো জুটি শেষ পর্যন্ত ভেঙেছেন উমেশ। স্পিন পরীক্ষায় উতরে ওয়ার্নার আউট হলেন পেসে। স্টাম্পে টেনে আনলেন বাইরের বল। ভাঙল ৮২ রানের উদ্বোধনী জুটি।

পরের বলটি হওয়ার আগে ওয়ার্নারের প্রায় পিছু পিছু ড্রেসিং রুমে ছুটলেন রেনশও। হতবাক সবাই। খানিক পর জানা গেল, পাকস্থলীর পীড়ায় বাইরে গেছেন বাঁহাতি ওপেনার।

স্টিভেন স্মিথ ও শন মার্শ সতর্ক ব্যাটিংয়ে চেষ্টা করেছেন জুটি গতে তুলতে। তবে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি সেই প্রচেষ্টা। জুটি ভাঙার চেষ্টায় লাইন বদলে লেগ-মিডলে বল করছিলেন জয়ন্ত যাদব। অধিনায়ক বিরাট কোহলিও মাঠ সাজালেন সেভাবেই ফাঁদ পেতে। মার্শও সুইপ খেলে পা দিলেন ফাঁদে।

এরপরও খুব বাজে ছিল না অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসের চেহারা। শুরুটা ভালো করেন পিটার হ্যান্ডসকমও। চা বিরতির ঠিক আগেই বিপত্তি। পরপর দুই ওভারে নেই দুই উইকেট। জাদেজার দারুণ এক আর্মার ফেরায় হ্যান্ডসকমকে। স্মিথ টিকে ছিলেন সংযত ব্যাটিংয়ে। হঠাৎই অশ্বিনকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়লেন ৯৫ বলে ২৭ রান করে।

সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরেছেন রেনশ। স্পিনে দারুণ টেকনিকের প্রমাণ রেখে তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক। ভারতের মাটিতে তার চেয়ে কম বয়সে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার আর কেউ।

২০ বছর ৩৩২ দিন বয়স রেনশর। ১৯৭৯ সালে কানপুর টেস্টে ২২ বছর ১৫৪ দিন বয়সে ৫৯ রান করেছিলেন রিক ডার্লিং।

শেষ পর্যন্ত অশ্বিনের দারুণ এক ডেলিভারিতে ৬৮ রানে শেষ হয়েছে রেনশর লড়াই। জাদেজার আরেকটি সোজা বল ফিরিয়েছে মিচেল মার্শকে। ম্যাথু ওয়েডকে ফেরানোর পর টানা দুই বলে স্টিভ ও’কিফ ও নাথান লায়নকে তুলে নিয়েছেন উমেশ।

ইনিংসের শেষ তখন মনে হচ্ছিলো স্রেফ সময়ের ব্যাপার। স্টার্কও হয়ত সেটি ভেবেই ব্যাট চালালেন দ্রুত কিছু রান তুলতে। চার-ছক্কা এলো, টিকেও গেলেন। আরেক পাশে জস হেইজেলউড পড়ে রইলেন উইকেটে। অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার ভারতকে ভোগালেন ব্যাট হাতে।

তিন স্পিনারের সৌজন্যে ৯০ ওভারের পরও হয়েছে আরও চার ওভার। অস্ট্রেলিয়ার শেষ জুটি ভাঙেনি। অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৫১, তাতে হেইজেলউডের অবদান মাত্র ১!

৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৮ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত স্টার্ক। টেস্টে যেটি তার নবম অর্ধশতক। বল হাতে আগুন ঝরানোর আগে বাঁহাতি ফাস্ট বোলার ব্যাট হাতে দলকে জোগালেন লড়াইয়ের রসদ!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৯৪ ওভারে ২৫৬/৯ (রেনশ ৬৮, ওয়ার্নার ৩৮, স্মিথ ২৭, শন মার্শ ১৬, হ্যান্ডসকম ২২, মিচেল মার্শ ৪, ওয়েড ৮, স্টার্ক ৫৭*, ও’কিফ ০, লায়ন ০, হেইজেলউড ১*; ইশান্ত ০/২৭, অশ্বিন ২/৫৯, জয়ন্ত ১/৫৮, জাদেজা ২/৭৪, উমেশ ৪/৩২)।