ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিসিবি একাদশের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার পর দলের সঙ্গেই রেখে দেওয়া হয় শুভাশীষসহ আরও কজনকে। দলের সঙ্গেই থাকা আর অনুশীলন, কাছ থেকে দেখেছেন দলের আবহ। তবু আনুষ্ঠানিকভাবে তো ছিলেন বাইরের একজনই। শুভাশীষ এখন দলেরই একজন।
মিরপুর টেস্টের স্কোয়াড আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে মঙ্গলবার রাতে। তবে অধিনায়কের কাছ থেকে দুপুরেই খবরটি জেনেছেন শুভাশীষ।
জয়ের কাছে গিয়েও দলের হারে মনটা বিষাদে ছেয়ে ছিল। নিজের একটা স্বপ্নপূরণের খবর তবু দিল আনন্দের দোলা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ফেরার বিমানে ওঠার আগে ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন সেই সময়ের অনুভূতি।
“ভালো লেগেছে অবশ্যই। দিনটির জন্যই অপেক্ষা ছিল। দলের সঙ্গে যখন রাখা হয়েছিল, আশা ছিল যে সুযোগ আসতে পারে। ডাক পেয়ে তাই খুব অবাক লাগেনি। তবে ভালো লাগছে অনেক।”
প্রথম নজর কেড়েছিলেন তিনি সম্ভবত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ফতুল্লায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। দুর্দান্ত এক স্পেলে আউট করেছিলেন দিনেশ চান্দিমাল, দিলশান মুনাবিরা, কুসল পেরেরা, রোশান সিলভা ও আশান প্রিয়াঞ্জনকে।
কদিন পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ৪ উইকেট নিয়ে অবদান রাখলেন সিরিজ জয়ে। খেললেন ২০০৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‘এ’ অভিষেক হয়ে গেছে আগেই। রংপুরের ছেলে হলেও শুরুতে খেলেছেন সিলেটের হয়ে। ২০১০ সালে বিসিবি একাডেমির হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা একাডেমির বিপক্ষেও করলেন দুর্দান্ত বোলিং। ক্যারিয়ারটা এগোচ্ছিল সঠিক পথেই।
এরপরই পথচলায় হানা দিল চোট। দেশের মাটিতে ২০১১ বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে জায়গা পেয়েছিলেন। দলে সুযোগ পাওয়ার আশা করেননি। কিন্তু বুঝতে পারছিলেন ক্যারিয়ার আছে ঠিক পথেই। ২০১২ সালে বাধালেন হাঁটুর লিগামেন্টের চোট। ডান হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করাতে হলো ভারতে গিয়ে।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলে শুভাশীষ খেলেছেন নাসির-সোহওরাওয়ার্দী-মিঠুন-রুবেল-মার্শাল-ডলারদের সঙ্গে। সেই সময়ের সতীর্থদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দেখে ফেলেছে অনেক বাঁক। আর তিনি জাতীয় দলে সুযোগই পেলেন ২৮ ছুঁইছুঁই বয়সে। পেছন ফিরে তাকিয়ে ডানহাতি এই পেসার দায় দিলেন চোটকেই।
“এত বেশি ইনজুরি ছিল যে টানা লম্বা সময় খেলতে পারিনি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করা তাই কঠিন ছিল। এখন আর সমস্যা নেই।”
চোটের সঙ্গে লড়াই করতে করতে পেস বোলার হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিল কম। শুভাশীষ কতটা ভালো হতে পারতেন, সেটা তাই প্রশ্নই থেকে যাবে। তবে ছন্দে থাকলে এখনও তিনি বেশ কার্যকর।
প্রথম শ্রেণির রেকর্ড খুব আহামরি নয়, ৫১ ম্যাচে ১৩৬ উইকেট। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা অস্বাভাবিকও নয়, রেকর্ড খুব ভালো নয় কোনো পেস বোলারেরই।
খুব গতিময় নন শুভাশীষ, তবে গুড লেংথ থেকে বল আচমকা তুলতে পারেন। শর্ট বলও বেশ ভালো। ছন্দে থাকলে বোলিং আর শরীরী ভাষায় বেশ আগ্রাসী। গত ঢাকা লিগে দারুণ কিছু স্পেল করেছেন। মিরপুরে তার দারুণ বেলিংয়েই তামিম ইকবালের আবাহনীকে হারিয়েছিল মুশফিকুর রহিমের মোহামেডান।
তবে ছন্দে থাকবেন কতটা, সেটিই প্রশ্ন। তার আগে প্রশ্ন, একাদশে সুযোগ মিলবে কিনা। মিরপুরে এক পেসার নিয়ে খেলার সম্ভাবনা প্রবল। সুযোগ পেলেও মন্থর, টার্নিং উইকেটে কতটা কি করতে পারবেন?
শুভাশীষ অবশ্য অতসব ভাবনতেই যেতে চান না।
“ডাক পেয়েছি, খেলার সুযোগ পেলেও ভালো লাগবে। তবে সেটা দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সুযোগ পেলে চেষ্টা করব ভালো করার।”
সময়ই বলে দেবে কোন দিকে গড়াবে শুভাশীষের ক্যারিয়ার। তবে হাল না ছেড়ে যেভাবে লেগেছিলেন চোটের সঙ্গে লড়াইয়ে এবং জায়গা করে নিলেন টেস্ট দলে, অনেকের জন্যই তিনি হতে পারেন উদাহরণ।