মিলার ঝড়ে সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকার

ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথের শতকে বিশাল সংগ্রহ গড়েও জেতা হল না অস্ট্রেলিয়ার। ডেভিড মিলারের নিজেকে ফিরে পাওয়ার দিনে ৩৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2016, 08:08 PM
Updated : 6 Oct 2016, 08:59 AM

‘কিলার’ মিলারের শতকে ৪ উইকেটে তৃতীয় ওয়ানডেতে জেতা দক্ষিণ আফ্রিকা নিশ্চিত করেছে সিরিজও।

এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে ফাফ দু প্লেসির দল। আগামী রোববার পোর্ট এলিজাবেথে হবে চতুর্থ ওয়ানডে।

গত বছরর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তিন ম্যাচে দুটি শতক করার পর আর সেভাবে রানের দেখা পাচ্ছিলেন না মিলার। মাঝের ১৯ ইনিংসে তার সেরা ছিল ৪৯ রান। ছন্দ হারিয়ে ফেলায় গত অগাস্টেই দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলে খেলতে হয়েছে তাকে। এবার ফিরলেন স্বরূপে, দলকে এনে দিলেন অবিশ্বাস্য এক জয়। ৭৯ বলে অপরাজিত থাকেন তিনি ১১৮ রানে, ১০টি চার ও ৬টি ছক্কায়।  

বুধবার ডারবানের কিংসমিডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩৭১ রান করে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডেতে এটি তাদের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান। জবাবে চার বল বাকি থাকতে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ওয়ানডেতে এর চেয়ে বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় আছে আর মাত্র একটি। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই জোহানেসবার্গে ৪৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১ উইকেটে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্মরণীয় সেই ম্যাচের মতোই এদিনও ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর চড়াও হয় স্বাগতিকরা। কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে ৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ৩০ বলে নয় চারে ৪৫ রান করেন দলে ফেরা হাশিম আমলা।

দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক দু প্লেসির সঙ্গে ৭৪ রানের আরেকটি ভালো জুটি গড়েন ডি কক। ৩২ বলে ৩৩ রান করে বিদায় নেন দু প্লেসিও।

২১তম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২ উইকেটে ১৬৪ রানের সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়া ডি কক ফিরেন অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে। ৪৯ বলে ৬টি চার আর দুটি ছক্কায় এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান করেন ৭০ রান।

দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো, জেপি দুমিনি পারেননি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে। ৩২তম ওভারে দুমিনি ফিরে যাওয়ার সময় দলের স্কোর ২১৭/৫। ম্যাচ তখন অনেকটাই হেলে পড়ে অতিথিদের দিকে। তবে বিধ্বংসী এক ইনিংসে দলকে কক্ষপথে রাখেন মিলার। শেষটায় আন্দিলে ফেহলুকওয়াহোর কাছ থেকে পেয়েছেন ভালো সঙ্গ।  

১১.৪ ওভার স্থায়ী সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১০৭ রানের জুটিতে ফেহলুকওয়াহোর অবদান ৩৯ বলে ৪২ রান। তার রিভার্স সুইপ থেকেই আসে জয়সূচক রান।

এর আগে ১৩.১ ওভার স্থায়ী ১১০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ। জুটিতে ছিল ১১টি চার আর পাঁচটি ছক্কা। ইমরান তাহিরের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিঞ্চের বিদায়ে ভাঙে বিপজ্জনক এই জুটি। ৩৪ বলে ৫৩ রান করতে ৪টি ছক্কা ও তিনটি চার হাঁকান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

সময় নিয়ে থিতু হন অধিনায়ক স্মিথ। এই সময়ে শান্ত ছিলেন ওয়ার্নারও। তাদের জুটির প্রথম ১৪ ওভারে আসে ৬৭ রান। শেষ পর্যন্ত ২১.৪ ওভারে এই দুই জনে গড়েন ১২৪ রানের জুটি।  

লেগ স্পিনার তাহিরের বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ওয়ার্নার। ১০৭ বলে খেলা তার ১১৭ রানের ইনিংসটি গড়া ১৩টি চার আর দুটি ছক্কায়। চলতি বছর ওয়ানডেতে এটি তার চতুর্থ আর সব মিলিয়ে অষ্টম শতক।

টপ অর্ডারের দৃঢ়তায় ৪০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ২ উইকেটে ২৭০ রান। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ১০১ রান যোগ করে অতিথিরা। এতে দারুণ অবদান ট্র্যাভিস হেড (১৮ বলে ৩৫) ও ম্যাথু ওয়েডের (৮ বলে ১৭*)।

এর আগেই শতকে পৌঁছে ডেল স্টেইনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান স্মিথ। ১০৭ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ১০৮ রান করেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। ১৮ বলে ২৮ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন জর্জ বেইলি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে ওয়ানডেতে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড এখন ডেল স্টেইনের। ১০ ওভারে ৯৬ রান দেন তিনি। আরেক পেসার কাগিসো রাবাদা খরচ করেন ৮৬ রান। তবে ম্যাচ শেষে তাদের আর হতাশায় পুড়তে হয়নি মিলারের তাণ্ডবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৭১/৬ (ওয়ার্নার ১১৭, ফিঞ্চ ৫৩, স্মিথ ১০৮, বেইলি ২৮, মার্শ ২, হেড ৩৫, ওয়েড ১৭*; তাহির ২/৫৪, স্টেইন ২/৯৬, ফেহলুকওয়াহো ১/৫৮, রাবাদা ১/৮৬)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.২ ওভারে ৩৭২/৬ (ডি কক ৭০, আমলা ৪৫, দু প্লেসি ৩৩, রুশো ১৮, দুমিনি ২০, মিলার ১১৮*, প্রিটোরিয়াস ১৫,  ফেহলুকওয়াহো ৪২*; হেস্টিংস ২/৭৯, হেড ১/৩১, জ্যামপা ১/৫৫, মার্শ ১/৬১, ট্রেম্যাইন ১/৬৫)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ডেভিড মিলার