মেন্ডিস-বীরত্বে ঘুরে দাঁড়াল শ্রীলঙ্কা

ব্যাটিং দুরূহ উইকেট; আরও দুরূহ পারিপার্শ্বিকতা। ৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে শ্রীলঙ্কা। অস্ট্রেলিয়া তখনও ৮০ রানে এগিয়ে। বলে আগুন ঝরাচ্ছেন এক ফাস্ট বোলার। স্পিনাররা অপেক্ষায় ফণা তোলার। তরুণ এক অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান এই সময়ে কি করতে পারেন?

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 12:58 PM
Updated : 28 July 2016, 03:09 PM

ভেঙে না পড়ে কুসল মেন্ডিস চ্যালেঞ্জ জানালেন সব বাস্তবতাকেই। গড়লেন প্রতিরোধ, করলেন পাল্টা আক্রমণ। অসাধারণ এক ইনিংস খেলে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করে এগিয়ে নিলেন দলকে। প্রথম দিনে ১১৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা এখন জয়ের স্বপ্নও দেখতে পারছে!

দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৮২ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে স্বাগতিকরা এগিয়ে ১৯৬ রানে; হাতে ৪ উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা, এখনও টিকে আছেন মেন্ডিস। ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অপরাজিত ১৬৯ রানে, একাই করেছেন দলের প্রায় ৬০ শতাংশ রান! প্রথম দুই দিনের মতো বৃহস্পতিবারও বৃষ্টিতে খেলা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই।

সপ্তম টেস্টে মেন্ডিসের এটি প্রথম শতক। এই ইনিংসের আগে বারবার আউট হয়ে যাচ্ছিলেন থিতু হয়ে। আগের ৬ টেস্টে ৮ বার ২৫ ছুঁয়েও অর্ধশতক করতে পেরেছিলেন মাত্র একটি। গত মে মাসে হেডিংলিতে সেই ইনিংসেও আউট হয়েছিলেন ৫৩ করেই। অবশেষে খেললেন বড় ইনিংস, যেটি হয়ে থাকল অসাধারণ ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ের প্রতিচ্ছবি।

১ উইকেটে ৬ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। দিনের তৃতীয় বলে আবারও আঘাত মিচেল স্ট্যার্কের। প্রথম ইনিংসের মতোই এলবিডব্লিউয়ে ফেরান দিমুথ করুনারত্নেকে।

মেন্ডিসকে ২২ গজে নামতে হয় সাতসকালেই। প্রথম বলেই স্ট্যার্কের দেড়শ’ কিলোমিটারের গোলা ঠেকানো দিয়ে শুরু। খানিক পরই শুরু প্রতিআক্রমণ। তেতে থাকা স্ট্যার্ক ও হেইজেলউডকে একের পর এক চার মারেন দারুণ কিছু শটে।

আরেক পাশে অবশ্য ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়া ছিলই। ওপেনার কৌশল সিলভা ও অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস করতে পারেননি তেমন কিছু। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের লিড (৮৬ রান) ছাপিয়ে যেতেই লঙ্কানরা হারায় ৪ উইকেট।

তবে মেন্ডিসের ব্যাটে সেসবের প্রভাব পড়েছে সামান্যই। পঞ্চম উইকেটে যোগ্য সঙ্গী পান দিনেশ চান্দিমালকে। দুজনে গড়েন ১১৭ রানের জুটি। অভিষিক্ত ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে জুটি ৭১ রানের। বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েও আউট হয়েছেন চান্দিমাল ও ধনঞ্জয়া। মেন্ডিস বড় ইনিংস খেলে আরও বড় কিছুর পথে।

লাঞ্চের আগেই করে ফেলেন ৮৬। লাঞ্চের পর সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ১৪৩ বলে। সেটিও রাজসিক ঢংয়ে, ৯৫ থেকে স্লগ সুইপে নাথান লায়নকে ছক্কা মেরে!

মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন সেঞ্চুরির পরও। মাইলফলক ছুঁয়েই কাজ শেষ হয়েছে মনে না করে টেনে নিয়েছেন দলকে। দিন শেষে তাই দারুণ অবস্থানে শ্রীলঙ্কা।

ধনঞ্জয়াকে ফিরিয়ে লায়ন পেয়েছেন দুইশতম টেস্ট উইকেট। ২০০ উইকেট পাওয়া প্রথম অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার তিনি। তবে আড়াল তিনি মেন্ডিসের ব্যাটে। অস্ট্রেলিয়া ভুগেছে স্টিভ ও’কিফের চোটে। হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় লাঞ্চের আধঘণ্টা পর মাঠ ছাড়েন বাঁহাতি স্পিনার, আর বল করতে পারেননি।

মেন্ডিসের কৃতিত্ব তাতে অবশ্য কমছে না। চতুর্থ দিনেও শ্রীলঙ্কার ভরসা এই তরুণ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১১৭

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২০৩

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (দ্বিতীয় দিন শেষে ৬/১) ৮০ ওভারে ২৮২/৬(কুশল পেরেরা ৪, কৌশল ২৭, করুনারত্নে ০, মেন্ডিস ১৬৯*, ম্যাথিউস ৯, চান্দিমাল ৪২, ধনঞ্জয়া ৩৬, দিলরুয়ান ৫*; স্টার্ক ২/৪৪, হেইজেলউড ০/৪১, ও’কিফ ১/৪২, লায়ন ২/৯৮, ওয়ার্নার ০/১০, ভোজেস ০/৩, মার্শ ১/৩৩, স্মিথ ০/১)।