ইয়াসিরের ঘূর্ণিতে পাকিস্তানের লর্ডস জয়

দ্রুতগতির ফুল লেংথ বল উড়িয়ে দিল ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যানের বেলস। ডানা মেলে দিলেন মোহাম্মদ আমির, উড়ে গেলেন যেন দূর দিগন্তে। তাকে আর পায় কে! ধারাভাষ্যকক্ষে ডেভিড লয়েড বললেন, “লর্ডসে আমিরের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন!”

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2016, 06:18 PM
Updated : 17 July 2016, 06:56 PM

৬ বছর আগে এই মাঠেই আমির জড়িয়েছিলেন কলঙ্কে। নিজ দেশকে, ক্রিকেটকে করেছিলেন কলঙ্কিত। দু:সহ প্রহর পেরিয়ে এবার লর্ডসেই পাকিস্তানের জয়ের মুহূর্তটি এলো আমিরের হাত ধরে!

পাকিস্তানের জয়ের মূল নায়ক অবশ্য আরেকজন। এশিয়ার বাইরে নিজের প্রথম টেস্ট ১০ উইকেট নিয়ে জয়টাকে রাঙালেন ইয়াসির শাহ। ৬ বছর আগে যে মাঠে চারদিনে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল পাকিস্তান, সেখানেই এবার তারা জিতল ৭৫ রানে, চার দিনেই!

ইংল্যান্ডের মাটিতে এটি পাকিস্তানের দশম টেস্ট জয় যার চারটিই লর্ডসে। এখানে সবশেষ জয় ছিল তাদের ১৯৯৬ সালে।

রোববার সকালে পাকিস্তানের শেষ ২ উইকেট মাত্র ১ রানেই তুলে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। ২৮৩ রানের লক্ষ্যটা ছিল তবু কঠিন। লর্ডসে এর চেয়ে বড় রান তাড়া করে জয় আছে ইতিহাসে একটিই।

ইংল্যান্ড ধাক্কাও খায় শুরুতেই। দুর্দান্ত এক প্রথম স্পেলে ইংলিশ ব্যাটিংয়ের মাথা ভেঙে দেন রাহাত আলি। বাঁহাতি পেসার ফেরান ইংল্যান্ডের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান কুক, হেলস ও রুটকে।

তৃতীয় উইকেটে খানিকটা প্রতিরোধ গড়েন জেমস ভিন্স ও গ্যারি ব্যালান্স। ভিন্সকে ফিরিয়ে ৪২ রানের জুটি ভাঙেন ওয়াহাব রিয়াজ। এরপরই ইয়াসির দেখাতে শুরু করেন তার জাদু।

অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে ফুট মার্কে পিচ করে বিশাল টার্ন করে বাঁহাতি ব্যালান্সের পায়ের পেছন দিয়ে বল আঘাত করে লেগ স্টাম্পে। পরের ওভারে ফেরান মইন আলিকে। ইংল্যান্ড তখন ৬ উইকেটে ১৩৯।

ষষ্ঠ উইকেটে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে পাকিস্তানের কাজ কঠিন করে তুলেছিলেন জনি বেয়ারস্টো ও ক্রিস ওকস। এখানেও ত্রাতা সেই ইয়াসির। বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে ভাঙেন ৫৬ রানের সপ্তম উইকেট জুটি।

এরপর আর জিততে সময় নেয়নি পাকিস্তান। থিতু হওয়া ওকসকেও ফেরান ইয়াসির। আক্রমণে ফিরে আমির নেন দুটি উইকেট। উল্লাসে মাতে পাকিস্তান।

আমিরের পাশপাশি দল হিসেবে পাকিস্তানের উদযাপনটাও ছিল দেখার মতো। তাৎক্ষনিক বাধনহারা উচ্ছ্বাস তো ছিলই। ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে আর্মির মতো লাইন করে দাঁড়িয়ে গেলেন সবাই। স্কোয়াড কমান্ডার ইউনুস খান। ইউনুসের নেতৃত্বে সবাই একসঙ্গে দিলেন “পুশ-আপ!”

সিরিজের আগে অ্যাবোটাবাদে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিবিড় ক্যাম্প করেছিল পাকিস্তান দল। পুরস্কার বিতরণীতে অধিনায়ক মিসবাহ জানালেন, সেরাদের সম্মান জানাতেই অমন উদযাপন।

হতাশ ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুক সান্ত্বনা দিলেন ক্রিস ওকসকে। ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়েছেন ওকস, দুই ইনিংসেই ব্যাট হাতে খেলেছেন কার্যকরি ইনিংস। সেটিও ছিল না যথেষ্ট। প্রথম ইনিংসের পাকিস্তানের ৬৭ রানের লিডই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিল ব্যবধান।

৪ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টি শুরু আগামী শুক্রবার, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৩৯

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৭২ ও

পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ২১৫

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৮৩) ৭৫.৫ ওভারে ২০৭ (কুক ৮, হেলস ১৬, রুট ৯, ভিন্স ৪২, ব্যালান্স ৪৩, বেয়ারস্টো ৪৮, মঈন ২, ওকস ২৩, ব্রড ১, ফিন ৪*, বল ৩; আমির ২/৩৯, রাহাত ৩/৪৭, ইয়াসির ৪/৬৯, ওয়াহাব ১/৪৬)

ফল: পাকিস্তান ৭৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ইয়াসির শাহ