মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তৃতীয় বাংলাদেশ

টুর্নামেন্ট জুড়ে বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে থাকা রানিং বিটুইন দ্য উইকেট ভোগাল শেষ ম্যাচেও। তিনটি রান আউটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা স্বাগতিকরা জিতল কঠিন করে। ঘরের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ মেহেদি হাসান মিরাজের দল শেষ করল তৃতীয় হওয়ার স্বস্তিতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2016, 07:08 AM
Updated : 13 Feb 2016, 01:41 PM

ফতুল্লায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। ৪৮.৫ ওভারে ২১৪ রান করেছিল লঙ্কানরা। মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বাংলাদেশ জয় পায় ৩ বল বাকি থাকতে।

তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর জুটির সময় মনে হচ্ছিল অনায়াসেই জিতে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু দৃষ্টিকটু রান আউটে কাটা পড়েন দুজনই।

সেই ধাক্কা সামলেও এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৩৬ রান, হাতে ৬ উইকেট। কিন্তু আরেক থিতু ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও (১৯) ফিরে যান রান আউটে। তিন নম্বরে নেমে চোট নিয়ে বাইরে চলে যাওয়া ব্যাটসম্যান জাকের আলি অনিককে ফিরে আসতে হয় উইকেটে। শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে প্রথমবার মাঠে নামা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের দুটি বাউন্ডারি বড় ভূমিকা রাখে বাংলাদেশের জয়ে। শেষ ওভারে লাহিরু কুমারাকে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে জয় এনে দেন জাকেরই।

তিনটি পরিবর্তন নিয়ে এই ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ। জায়গা পাননি নিয়মিত দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও পিনাক ঘোষ। প্রথমবার মাঠে নামেন জাকের ও শফিউল হায়াত। টুর্নামেন্ট জুড়ে বিবর্ণ সাঈদ সরকারও হারান জায়গা, ফিরেন পেসার মোহাম্মদ হালিম।

জয়রাজ শেখের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন জাকির হাসান। নতুন জুটিতেও শুরু ভালো হয়নি বাংলাদেশের। আসিথা ফার্নান্ডোর দারুণ ইয়র্কারে প্রথম ওভারেই বোল্ড জাকির (০)। যথারীতি থিতু হয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি জয়রাজ (২৬)।

পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে এর আগেই মাঠ ছাড়েন তিনে নামা জাকের। তৃতীয় উইকেটে মিরাজ ও শান্ত গড়েন ৮৮ রানের জুটি। যুব ওয়ানডেতে বাংলাদেশের রেকর্ড টানা চতুর্থ অর্ধশত করে এক বল পরই রান আউট মিরাজ (৫৩)। খানিক পর অধিনায়ককে অনুসরণ করেন সহ-অধিনায়ক শান্তও (৪০)।

এরপর শফিউল (২১), সাইফুদ্দিনরা (১৯) দলকে এগিয়ে নিলেও শেষ করতে পারেননি কাজ। ফিরে আসতে হয় তাই জাকেরকে। দলকে জেতানও তিনিই।

ব্যাটে-বলে আরেকটি অসাধারণ পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা যদিও আবারও মিরাজই। অর্ধশতকের আগে বল হাতে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যাচের প্রথম ভাগ ছিল দুই অধিনায়কের লড়াই। বল হাতে জ্বলে উঠেছিলেন মিরাজ, ব্যাট হাতে দলকে বলতে গেলে এটাই টেনেছেন চারিথ আসালাঙ্কা।

কুয়াশা ঘেরা সকালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা লঙ্কানদের শুরুটা হয়েছিল দারুণ। ওপেনিংয়ে উঠে আসা কামিন্ডু মেন্ডিস ও টুর্নামেন্টে প্রথমবার মাঠে নামা সালিন্ডু উশান পেরেইরাকে নিয়ে গড়া নতুন উদ্বোধনী জুটি দলকে এনে দেয় ৬০ রানের ভিত্তি।

টুর্নামেন্টে প্রথমবার ৩ পেসার নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। তবে নতুন বলে সুবিধা করতে পারেননি দুই পেসার মেহেদি হাসান রানা ও সাইফুদ্দিন। প্রথম পরিবর্ত বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে লঙ্কানদের জোর ধাক্কা দেন মিরাজ। দারুণ টার্ন ও বাউন্সে বিভ্রান্ত করেন পেরেইরাকে (৩৪)। পরের ওভারে আরেক ওপেনার মেন্ডিসকেও (২৬) ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

জোড়া ধাক্কা না সামলাতেই মিরাজের আরেকটি আঘাত। এবার ফিরিয়ে দেন তিনে নামা আভিশকা ফার্নান্ডোকে (৬)। বিনা উইকেটে ৬০ থেকে শ্রীলঙ্কা তখন ৩ উইকেটে ৭০! মিরাজের প্রথম স্পেলটি ছিল দেখার মতো, ৬-২-৮-৩!

মিরাজ আক্রমণ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে আলগা হয় লঙ্কানদের ফাঁস। একটু একটু করে দলকে এগিয়ে নেন আসালাঙ্কা। চতুর্থ উইকেটে শামু আশানের (২৭) সঙ্গে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে ভানিডু হাসারাঙ্গার সঙ্গে জুটি ৫৫ রানের। শ্রীলঙ্কা তখন এগিয়ে যাচ্ছিল আড়াইশ রানের দিকে।

পুরোনো বলে বাংলাদেশের সেরা বোলার সাইফুদ্দিন আক্রমণে এসে এলোমেলো করে দেন লঙ্কানদের। ফুল লেংথ বলে হাসারাঙ্গাকে (৩০) বোল্ড করে ভাঙেন জমে ওঠা জুটি। পরের বলেই দারুণ এক ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারে উড়িয়ে দেন জেহান ড্যানিয়েলের (০) বেলস।

স্রোতের বিপরীতে আসালাঙ্কা দারুণ সব শটে বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন দলের রান। ৭৬ রানে লঙ্কান দলপতিকে ফেরান আব্দুল হালিম, ৭৬ রানে সীমানায় ক্যাচ দেন আসালাঙ্কা। ওই ওভারেই লাহিরু কুমারাকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের মুড়িয়ে দেন হালিম। ২৮ রানে শ্রীলঙ্কা হারায় শেষ ৫ উইকেট।

টুর্নামেন্টে চতুর্থ ম্যাচে এসে প্রথমবার উইকেটের দেখা পেলেন হালিম, ২৬ রানে ২ উইকেট তার। ৪৮ রানে দুটি সাইফুদ্দিনের। মেহেদি হাসান রানা ও শাওন গাজী পেয়েছেন একটি করে। ২৮ রানে ৩ উইকেটে নিয়ে সেরা বোলার মিরাজ।

পরে ব্যাট হাতেও সবচেয়ে বড় অবদান সেই মিরাজেরই। সেমি-ফাইনালে উঠেই ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য পেয়ে যাওয়া বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হলো তৃতীয়।