শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শুক্রবার সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিন ভারতের ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন পুজারা। এরপর পেরিয়ে গেছে বৃষ্টিবিঘ্নিত দুটি দিন। এর মাঝেই ছিল উইকেটে সতীর্থদের আসা-যাওয়া। কিন্তু পুজারা ছিলেন অটল।
রোববার তৃতীয় দিন সকালে প্রথম ইনিংসে রঙ্গনা হেরাথের বলে ভারতের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বোল্ড হলেন উমেশ যাদব, তখনও আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে পুজারা। অপরাজিত ১৪৫ রানের ইনিংস খেলে নাম লিখিয়ে ফেললেন ইতিহাসে। ‘ক্যারিং ব্যাট থ্রু আউট আ কমপ্লিটেড ইনিংস’।
পুজারার আগে আর মাত্র তিনজন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের ছিল এই কীর্তি। পুজারার জন্য এটা আরেকটু বেশিই গর্বের। কারণ ভারতের হয়ে সবশেষ যিনি এটি করতে পেরেছিলেন, পুজারাকে মনে করা হয় সেই রাহুল দ্রাবিড়ের যথার্থ উত্তরসূরি।
এবার যেমন পুজারা, সেবার তেমনি দ্রাবিড়ও ইনিংস উদ্বোধন করতে বাধ্য হয়েছিলেন দলের প্রয়োজনে। ২০১১ সালের ইংল্যান্ড সফরে, ওভালে। সেবার ১৪৬ রানে অপরাজিত ছিলেন দ্রাবিড়, ভারত করেছিল ৩০০ রান। এবার পুজারা অপরাজিত ১৪৫ রানে, ভারতের রান ৩১২।
দুটি ইনিংসের সঙ্গেই আবার জড়িয়ে আছে অমিত মিশ্রর নাম। দ্রাবিড় সেই ইনিংস খেলার পথে সপ্তম উইকেটে মিশ্রর সঙ্গে গড়েছিলেন ৮৭ রানের জুটি। এবার সেই মিশ্রর সঙ্গেই অষ্টম উইকেটে ১০৪ রানের জুটি গড়েন পুজারা!
দ্রাবিড়ের আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন বীরেন্দর শেবাগ। সেটিও এই শ্রীলঙ্কার মাটিতেই, ২০০৮ সালে। গলে ভারতের ৩২৯ রানের মধ্যে একাই ২০১ রান করে অপরাজিত ছিলেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান।
পুজারার ইনিংসটি সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে আদ্যন্ত ব্যাট করার ৪৯তম ঘটনা। প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বার্নার্ড টানক্রিড, ১৮৮৯ সালে কেপ টাউনে। ৪৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তখন টেস্ট ক্রিকেটের নবীন দল দক্ষিণ আফ্রিকা, ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান টানক্রিড। এখনও সেটি আদ্যন্ত ব্যাট করে সবচেয়ে কম রানের ইনিংস।
পুজারার আগে সবশেষ এই কীর্তি ছিল ডেভিড ওয়ার্নারের। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে হোবার্টে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়ার ২৩৩ রানের মধ্যে একাই অপরাজিত ১২৩ রান করেছিলেন ওয়ার্নার।
এই তালিকায় বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যানেরই নাম আছে। ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে বাংলাদেশের ১৬৮ রানের ইনিংসে ৮৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জাভেদ ওমর।
জাভেদের অভিষেক টেস্ট ছিল সেটি। ১৩৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে অভিষেকেই আদ্যন্ত ব্যাট করার কীর্তি আছে আর একটিই। ১৮৯৯ সালে ইংল্যান্ডের পেলহাম ওয়ার্নার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ১৩২ রান করে এই কীর্তি গড়েছিলেন।
ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন-তিন বার আদ্যন্ত ব্যাটিংয়ের নজির গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেসমন্ড হেইন্স। ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচিতে অপরাজিত ৮৮, ১৯৯১ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৫ আর ১৯৯৩ সালে পোর্ট অব স্পেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ১৪৩ রান করেছিলেন তিনি।
এরপরই ভাটার টান। পরের ১১ টেস্টে শতক নেই, গড় নেমে এলো পঞ্চাশের নীচে। জায়গাও হারালেন দলে। গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় বক্সিং ডে টেস্টের পর থেকেই ছিলেন একাদশের বাইরে।
এরপর নিজেকে শাণিত করতে ঘাম ঝরিয়েছেন অনেক। সতীর্থরা যখন ব্যস্ত আইপিএলে, তিনি তখন ইংল্যান্ডে খেলেছেন কাউন্টি ক্রিকেট। আর ছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। অবশেষে সেই সুযোগ এলো দুই সতীর্থের চোটে। শিখর ধাওয়ান ও মুরালি বিজয়ের চোট আশীর্বাদ হয়ে এলো পুজারার জন্য।
প্রিয় পজিশন তিন নম্বরে নয়, পুজারার সুযোগ এলো ইনিংস উদ্বোধনে। সেই চ্যালেঞ্জটাও নিলেন পুজারা এবং জিতলেন। সেটাও এমন এক উইকেটে, সবুজের ছোঁয়া থাকা যে উইকেটে সতীর্থরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।