এত ট্রেড ইউনিয়ন দিয়ে কি হবে: প্রতিমন্ত্রী

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বললেন, তৈরি পোশাক শিল্পে বেশি সংখ্যায় ট্রেড ইউনিয়ন হলে তার ফল ভাল নাও হতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2014, 10:31 AM
Updated : 28 Nov 2014, 10:35 AM

শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে সারা দেশের শতাধিক শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ভারত, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার শ্রমিক নেতাদের উপস্থিতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় চুন্নু বলেন, তিনি প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই দেখছেন- সব গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করতে চায়। কিন্তু তাদের অনেকরই ট্রেড ইউনিয়ন আইন সম্পর্কে জানা নেই।

“এত ট্রেড ইউনিয়ন দিয়ে কি হবে আমি বুঝি না। কম্বোডিয়ায় আমরা দেখেছি বেশি বেশি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতি দেওয়ার কারণে সেখানকার গার্মেন্ট সেক্টরে বিপর্যয় নেমে এসেছে।”

ফাইল ছবি

আগে দেশে তৈরি পোশাক খাতে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপে গত বছর সরকার আইন সংশোধন করে।

দেড় বছরের কম সময়ের মধ্যে দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত গার্মেন্ট শিল্পে নিবন্ধিত ইউনিয়নের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে।

প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি পোশাক খাতে দুটি বড় দুর্ঘটনা তাজরীনে অগ্নিকাণ্ড এবং রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি।

তবে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জাতীয় পার্টির নেতা চুন্নু বলেন, “তাজরীন ফ্যাশনস এবং রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল, আইএলও এবং বায়ারদের কাছ থেকে যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পেয়েছে তা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় অপ্রতুল নয়।”

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিপূরণের তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরবেন বলেও জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে ‘সুসম্পর্ক’ থাকা প্রয়োজন।

“আমাদের মনে রাখতে হবে, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সমন্বয়েই উৎপাদন এগিয়ে চলবে। তাই এ শিল্পের স্বার্থেই উভয়পক্ষের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।”

গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিষয়ে আগামী বছর জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভায় নীতিমালা উত্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

“যেসব শ্রমিক গৃহকর্মে নিয়োজিত আছেন তাদের কোনো কর্মঘণ্টা নেই, বেতন কাঠামো নেই। আগামী মাসের মধ্যে গৃহশ্রমিকদের নীতি নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব এবং জানুয়ারিতে এ সংক্রন্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।”

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শ্রমিক রাজনীতিকে বিদেশি মদদপুষ্ট সুবিধাবাদী ধারা এবং  হঠকারী ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

“শ্রমিকদের নিজেদের স্বার্থেই তা করতে হবে।”

আন্তর্জাতিক মজুরিমানের সঙ্গে বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের তুলনা করে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে কারখানা শ্রমিকদের গড় মজুরি দৈনিক ৩০-৩৫ ডলার। আর বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মাসিক মজুরি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।

বক্তব্যের শুরুতে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের কাছে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। কারণ এখানে যারা এসেছে তারা সবাই খেটে খাওয়া শ্রমিক। আমি আরো বিশ্বাস করি- তারা আমাদের চেয়ে স্বচ্ছ, আমাদের চেয়ে সৎ।”