ঈদের সাধ মেটাতে বাদ সাধছে সাধ্য 

ঈদের সপ্তাহখানেক আগে ক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম রাজধানীর মার্কেটগুলো, তবে চড়ার বাজারে পছন্দে লাগাম টানার কথা বলেছেন অনেকে।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2017, 02:49 PM
Updated : 21 June 2017, 04:43 PM

তারা বলছেন, নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান বাজারমূল্যের সাথে আয় না বাড়ায় সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরইমধ্যে পোশাক, জুতাসহ অন্যান্য বিলাসী সামগ্রীর দাম বাড়ায় ঈদ কেনা-কাটার চাহিদায় কাটছাট করতে হচ্ছে।

আবার অনেকের অভিযোগ, সকালে কেনা-কাটা করতে বেরুলে বিকালে তীব্র যানজট পেরিয়ে ফিরতে হয় গন্তব্যে। আর সন্ধ্যার পর বের হওয়ার মতো সময়ও থাকে না অনেকের, অন্যদিকে বাইরে ইফতার করতে গেলে গলাকাটা দামের ভয়ে অধিকাংশ ক্রেতাই সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে চান। সময়ের এই হিসেব আবার গুলিয়ে যাচ্ছে বৈরী আবহাওয়ায়।

এর বাইরে বিভিন্ন মার্কেটে ইফতারের অতিরিক্ত দাম, যানজট এবং যখন-তখন বৃষ্টিতে এবার পছন্দমতো ঈদের কেনাকাটায় বিঘ্ন ঘটার কথা বলেছেন অনেকে। 

বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে বিকি-কিনি চললেও দুপুরের পর থেকে ক্রেতা সমাগম বাড়তে থাকে। 

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ধানমন্ডির মেট্রো শপিং মল, রাইফেলস স্কয়ার, রাপা প্লাজা, সানরাইজ প্লাজা, অর্কিড প্লাজা, প্লাজা এ. আর, মিরপুর ১ নম্বরের শাহ আলী প্লাজা, স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট এবং মিরপুর-২ নম্বরের মিরপুর শপিং সেন্টার ও বিভিন্ন পোশাকের দোকান ঘুরে দেখা যায়, শেষদিকে এসে ‘রেডিমেড’ কাপড় আর জুতা-কসমেটিকস-জুয়েলারির দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়।

এদিন প্রচুর ক্রেতা আসার কথা জানান মিরপুর ২ নম্বরে ফ্যাশন হাউজ 'কে-ক্রাফট'র ব্যবস্থাপক আল আমীন হায়দার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রচুর কাস্টমার আসছে, বিক্রিও হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে এত দিন যারা আসতে পারেননি তারা এখন আসছেন, কেনাকাটা করছেন।”

দুই ছেলেকে নিয়ে মিরপুর শপিং কমপ্লেক্সে কেনাকাটা করতে আসা শামসুন্নাহার বলেন, “বৃষ্টির কারণে কাদা-পানি পেরিয়ে আসিনি এতদিন। দু-তিন দিন ধরে কেনাকাটা করছি, কিন্তু এখনও শেষ করতে পারিনি। কাল দিনটাই সময় আছে হাতে, পরশু বাড়ি চলে যাব।"

দয়াগঞ্জ থেকে বসুন্ধরায় কেনাকাটা করতে আসা ফাতেমা জোহরা হক মেয়ের জন্য ড্রেস কিনতে ঢোকেন ‘লি পিংক প্লাস’-এ। দোকানি এর দাম চাইছিলেন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এত দামে কিনতে নারাজ জোহরা। তাই পোশাকটি না কিনেই বেরিয়ে যান তিনি। 

“১২ বছরের বাচ্চার জন্য সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে জামা কিনব? একজনের জামায় যদি সাড়ে ৫ হাজার টাকা চলে যায়, তাহলে সবার জন্য কাপড় কিনব কী করে?,” বলেন তিনি।

‘লি পিংক প্লাস’র বিক্রয়কর্মী আলোক চান মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যে দামে কিনতেও পারি নাই, সে দামে বেঁচব কেমনে? ‘পঞ্চু’ ড্রেসটার দাম দিতে চায় ৩/৪ হাজার টাকা। কিন্তু আমাদের তো আরও দামে কিনতে হইছে। তাহলে বেঁচব কেমনে?”

তিনি বলেন, “১০০০ টাকার ড্রেস কাস্টমার ৭০০ টাকায় কিনতে চায়। মনে করে আমরা বেশি লাভ করে ফেলছি। কিন্তু কাপড়েরও তো দাম বাড়ছে। এক বছর আগের দামে তো আমরা কিনতেও পারি নাই, বেঁচমু কেমনে?”

মেট্রো শপিং মলে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আশিতা ইসলামও বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পোশাকের দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, “গতবারের চেয়ে সব কিছুর দামই কিছুটা বেশি। ক্যাটালগের ড্রেসগুলো গতবার যে দামে কিনেছি, এবার তার চেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। অর্নামেন্টস, কসমেটিকস সব কিছুরই  দাম বেশি।

“চাল-ডালের দাম যেভাবে বাড়ছে, সংসার চালানোই তো দায়। পছন্দ অনুযায়ী এখন চাইলেই হুট করে কিছু কেনা যায় না। ঈদে বাসার নতুন পর্দা কিনলাম, সেগুলোরও দাম বেড়েছে।”

স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসুন্ধরায় আসা শামীম খন্দকার বলেন যানজটে ভোগান্তির কথা: “দুই ঘণ্টা জ্যাম পেরিয়ে কচুক্ষেত থেকে এসেছি। বৃষ্টির কারণে তো শপিং করতে দেরি হয়ে গেল। আর ইফতারের আগে তো বাসায় পৌঁছানোও যাবে না। এখানে খাবারের যা দাম! খাবারও তো ভালো না। চারজন খেলে দেড়-দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে। আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষের চলাটা কষ্টকর।"

দুপুরের পর থেকেই এই শপিং মলের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের শো-রুমে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে।

ছেলেদের পোশাকের ব্র্যান্ড ‘দর্জি বাড়ি’র ব্যবস্থাপক আলী বলেন, “অনেক কাস্টমার আসছে। বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি, কিনছেনও অধিকাংশ কাস্টমার। সন্ধ্যার পর ক্রেতা সমাগম আরও বাড়বে।

“আমাদের ক্যাজুয়াল শার্ট আর প্যান্টের কাস্টমারই বেশি। তবে পাঞ্জাবিও কিনেছে অনেকে।”

বিকালে ধানমন্ডির শপিংমলগুলোতে ভিড় দেখা গেলেও তা বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের তুলনায় কম।

রাইফেলস্ স্কয়ারের ‘জেমস গ্যালারি'র ব্যবস্থাপক মামুন বলেন, “ক্রেতা আসছে। দেখছে, কিনছে। বিকালের পরে কাস্টমার বাড়বে আরও।"