একইসঙ্গে তাঁতী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানের দিকেও বাড়তি নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে দশ দিনব্যাপী জামদানি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর যৌথভাবে আয়োজন করেছে এই প্রদর্শনী।
এসময় তিনি জামদানি কারুশিল্পী ছাড়া অন্য কেউ প্লট বরাদ্দ নিয়ে থাকলে তা বাতিল করে দ্রুত প্রকৃত জামদানি শিল্পীদের মধ্যে বরাদ্দ দিতে বিসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।
সম্প্রতি জামদানি শিল্পের সমস্যা ও এর সমাধানে করণীয় শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে ১৬টি সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়ণের আহ্বান জানান তিনি।
ইউনেস্কো ঘোষিত ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ এর তালিকাভুক্ত জামদানি শিল্পের প্রসার ও গুণগত মানোন্নয়নে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিসিকের তথ্য মতে, জামদানি শিল্পের সঙ্গে এখন ১৫ হাজার মানুষ সরাসরি জড়িত রয়েছেন। দেশে প্রতি বছর এখ লাখের বেশি জামদানি শাড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। চাহিদার প্রেক্ষিতে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকর্মে এসেছে গুণগত পরিবর্তন। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, মানিব্যাগ, রুমাল ও হাত ব্যাগ, মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক, টেবিল ক্লথ ইত্যাদিতে জামদানির নকশা ব্যবহার হচ্ছে।
বিসিকের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক ইফতেখারুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ভারত ও ভিয়েতনামে, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের জামদানি শাড়ি ও বস্ত্র রপ্তানি হচ্ছে।
জামদানি প্রদর্শনীতে রূপগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীর তাঁতীদের পাশাপাশি রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও উপজেলার কারিগররা এতে অংশ নিয়েছেন।
সুতি, হাফ সিল্ক ও রেশমে পুঁইডুগা পাড়, মৌর প্যাচ পাড়, করলা পাড় ও বক্স পাড়সহ নানা নকশার জামদানি এসেছে।
শাড়ির পাশাপাশি জামদানি নকশায় বেড কাভার, সোফার কুশন, টেবিল ক্লথ, স্কার্ফ, ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, মেয়েদের থ্রি পিসও এখানে স্থান পেয়েছে।
কটন, হাফসিল্কের পাট্টিপাল্লু, গ্রিন মিটি, কালার, কলাপাতা, রাণী কালারের পাশাপাশি এই প্রদর্শনীতে এবার নতুন এসেছে করলাপাড়, মদনাপাড়, গোলাপসর, ডালিমপাড়, পানপাড়।
ইউসুফ জামদানি ঘরের বিক্রেতা মো. বাবুল মিয়া জানান, এসব শাড়ির দাম নকশাভেদে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন তারা।
শাড়ির জমিনে প্রকৃতির ছাপ রেখেছেন তাঁতীরা। একা জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরির আব্দুর রহমান জানান, তেরছি নকশায় করা আমপাতা, জলপাই, সাদা জাল জামদানির দাম পড়বে ১২ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বুটফুল, চাকাফুল ও সুরমাদানি জামদানিগুলোর দাম ৩৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা অবধি।
জামদানির দাম নির্ভর করে নকশার ওপরে। যে শাড়ির যত ভারি কাজ, তার দাম তত বেশি।
তবে জামদানি কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন আনোয়ার জামদানির ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর।
“আমরা ক্রেতাদের বলব, তারা যেন একটু ভারী জামদানি নেন। হালকা জামদানি কিনতে গেলে ক্রেতারা বাংলাদেশি না ভারতীয় জামদানি কিনছে তা ধরতে পারবে না। অনুরোধ থাকবে ১২ হাত শাড়ি যেন তারা মেপে নেন। শাড়ির কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে বহর যেন ৪৬ ইঞ্চি হয়, শাড়ির যে অংশটি কোমড়ে প্যাঁচানো হবে তা যেন ২৫ ইঞ্চির কম না হয়।”