ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়ার (এনআইটিআই) সদস্য ড. বিবেক দেবরায় বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা নিয়ে বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এই পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত সম্পর্ক তুলে ধরেই তিনি বলেন, “অন্য দেশের সঙ্গে যত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই হোকনা কেন, সেই সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে নিজের দেশেরপ্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)।
“নিজের দেশের প্রায়োরিটির মধ্যে যখন দুটি দেশের মিল পাওয়া যায়, তখনই বিদেশ নীতির সম্পর্ক।ভারতে ২০১৪ সালের মে মাসে নতুন সরকার এসেছে। বিদেশ নীতিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন মূল মন্ত্র হচ্ছে-দেশের সুরক্ষা।”
‘ইন্দো-বাংলা পারস্পরিক সহযোগিতায় টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নানা সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন বক্তারা।
লেইক শোর হোটেলের এই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। আলোচনা করেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ভারতের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের পরিকল্পনার কমিশন বিলুপ্ত হয়ে গঠিত এনআইটিআই’র সদস্য বিবেক দেবরায়।
কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র ও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, “প্রত্যেকটি দেশ কীভাবে শাসন করবে, সরকার কী করবে, তা সম্পর্ণূভাবে সেই দেশটি ঠিক করবে। প্রত্যেকটি দেশ তারপ্রায়োরিটিভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অন্য কোনো দেশ তা করতে পারবে না।”
একই ঐতিহ্যের অংশীদার বাংলাদেশ ও ভারতের নানা জটিল পথ পেরিয়ে বর্তমান সম্ভাবনার কথাও আসে মহাভারতের ইংরেজি ভাষান্তরকারী বিবেক দেবরায়।
“ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশ একইসঙ্গে অনেক বার ক্ষ্যাপা ঝড়ের কবলে পড়েছে। আমি বাস্তবিক ঝড়ের কথা বলছি, আক্ষরিক নয়। আমরা ১৯৩৫ সালে, ১৯৪৭ সালে, ১৯৫২ সালে ও ১৯৭১ সালে এই ঝড়ের কবলে পড়েছি।”
“সেই ঝড় থেমে যাওয়ার পর হাঁটতে হাঁটতে দূর প্রান্তে একটি রংধনুর দেখতে পায়। সেই রংধনুর পথ ধরে এগিয়ে যেতে যেতেরূপসী বাংলার সাথে দেখা।”
মূল প্রবন্ধে আতিউর রহমান বলেন, “এ শতাব্দী আমাদের বা এশিয়ার শতাব্দী। এশিয়ার প্রবৃদ্ধির নয়া কেন্দ্রবিন্দু হতে যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ।
“আমরা যদি সুবিবেচনার সাথে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে সম্ভাবনার দুয়ারগুলো একই সঙ্গে খুলে দিতে পারি, তাহলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব।”
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন অনন্য উচ্চতায় মন্তব্য করে এর সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো উন্মোচনের সুপারিশ করেন তিনি।
“বাংলাদেশে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মতো ঘটনাও ঘটছে। একসময় যা অভাবনীয় ছিল।”
আতিউর বলেন, “দরিদ্রতা নিরসন ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এ হার আরও বাড়াতে চাই আমরা। সেই জন্য একে অপরের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চাই।”
বাংলাদেশ শিল্প, রেল,শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্য প্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে চলেছে জানিয়ে তাতে ভারতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
“এদেশে বিনিয়োগ করে তারা বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন। আমাদের শস্তা শ্রম, তরুণ উদ্যোক্তাও খুবই সৃজনশীল আর্থিক খাতএবং একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি রয়েছে।”
এর পূর্ণ সুযোগ নিয়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ গভীর হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পর্যটনসহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতার দুয়ারও আরও খুলবে বলে মনে করেন তিনি।
ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা তার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অর্থনীতির সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের পরামর্শ দেন বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকদের।
বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তাদের ১১ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগের পাইপ লাইনে আছে।
“এখন আমরা এমন একটি সম্পর্কের মধ্যে কথা বলছি, যা অতীতে কখনও ছিলনা,”বলে শক্তিশালী বন্ধুত্বের হাত ধরে বিনিয়োগ দিনে দিনে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজ বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ যথেষ্ট নয় মন্তব্য করে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে নয়া দিল্লির উদ্যোগী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন বলেন, “দুই দেশের ভালো দিক পরস্পরের মধ্যে বিনিময় হওয়া উচিৎ। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতা আর ভারতের উত্তম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরস্পরের মধ্যে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।”
দি এশিয়ান এইজ আয়োজিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহও বক্তব্য রাখেন। সঞ্চালনায় ছিলেন মেজর জেনারেল শামীম চৌধুরী।
দি এশিয়ান এইজের চেয়ারম্যান এম শোয়েব চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সংবাদপত্রটির প্রধান সম্পাদক জেসমিন চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।