বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নতুন সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বিধানটি ব্যাখ্যা করে বলেন, যে কোনো শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দুই কোটি টাকার উপরে যাদের মূলধন বা ৩ কোটি টাকার উপরে যাদের সম্পদ, তাদের বার্ষিক লাভের ৫ শতাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য। গণমাধ্যমে কর্মরতরাও এই সুবিধা পাবেন।
শ্রম আইন অনুসারে, কোনো প্রতিষ্ঠান ১ কোটি টাকা লাভ করলে তার পাঁচ শতাংশের ৮০ ভাগ ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা সমান ভাগে ভাগ করে নেবেন। বাকি ২০ ভাগের মধ্যে ১০ ভাগ ওই প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ ট্রাস্টে আর বাককি ১০ ভাগ শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
“মেঘনা পেট্রলিয়াম কিছু দিন আগে আমাদের দুই কোটি টাকা দিয়ে গেছে। তার মানে আরও ২ কোটি টাকা তাদের কল্যাণ ফান্ডে গেছে। বাকি ১৬ কোটি টাকা ওই প্রতিষ্ঠানের পিয়ন থেকে শুরু করে মালিক ছাড়া বাকি সবাই সমহারে ভাগ করে নিয়েছে। একজন ৫-৭ লাখ করে পেয়েছে। বেতনের চেয়েও বেশি পেয়েছে।”
গ্রামীণ ফোণ ঘোষিত লভ্যাংশের কল্যাণ ফান্ডের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয়ে ২০ কোটি টাকা দিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তার মানে ১৬০কোটি টাকা গ্রামীণের কর্মচারী-কর্মকর্তারা নগদ ভাগ করে নিয়েছে। এটা আইন।”
সম্প্রতি সোনারগাঁও হোটেলের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখানেও এ আইন কার্যকর করার উদ্যেগ নেওয়ার কথা জানিয়ে চুন্নু বলেন, তিনি ছিলেন ওই অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি, আর প্রধান অতিথি ছিলেন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
“সেখানে সোনারগাঁওয়ের জিএম জানালেন, তারা এবার ৫৬ কোটি টাকা লাভ করেছেন। আমি উঠে বললাম, মেনন ভাই, আপনি শ্রমিক রাজনীতি করছেন, আমি জীবনে শ্রমিক রাজনীতি করি নাই। এই যে ৫৬ কোটি লাভ করল, এখানকার ৫ শতাংশ কই? দয়া করে দেন, নাইলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করে দেব।”
এরপর হাসতে হাসতে চুন্নু বলেন, “মামলা করা লাগেনি। কাজ হয়েছে।”
তিনি বলেন, এই আইন কেউ না মানলে শ্রম আদালতে মামলা করা যায়। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তহবিলে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা দেখে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিতে শুরু করেন বলে জানান চুন্নু।
“অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান টাকা দিয়েছে। তাতে এই মুহূর্তে ফান্ডে ১৭২ কোটি টাকা জমা হয়েছে। সবাই টাকা দিলে অনেক টাকা হবে।”
মন্ত্রণালয়ের তহবিলে আসা টাকা ব্যয়ের খাত সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো শ্রমিক আহত হলে এক লাখ টাকা দেওয়া যাবে। সন্তানদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা যাবে।
“আগে এটা থেকে কেবল শ্রমিকরা সুবিধা পেত। এখন কর্মকর্তরাও পাচ্ছে। ২০১৩ সালে এই সংশোধনী এনেছি। তাই টাকা প্রদানে তাদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মিডিয়া মালিকদের বলব, আপনারা যারা লাভ করেন, পাঁচ শতাংশ দিবেন।
“এই পাঁচ শতাংশ না দিলে কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফার্ম অডিট রিপোর্ট ক্লিয়ার করতে পারে না। তাদেরকেও এটা বলেছি। তারা এটা করলে অটোমেটিক টাকা আসবে।”
এই বিধান বাস্তবায়নে সংবাদ মাধ্যমের মালিকদের চিঠি দেওয়া হবে কি-না, এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “চিঠি না দেওয়ার কোনো কারণ নাই। সবাইকে চিঠি দেওয়া হবে। যারা লাভ বেশি করে বলে চোখে পড়েছে তাদেরকে আগে দিয়েছি। বাকিদেরকেও দেব।”
তিনি বলেন, গ্রামের মেয়েদের কারণেই বাংলাদেশ এখন পৃথিবীত দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক।
“আমি একটা কাজ করছি। এখানকার রপ্তানির ১০০ টাকায় ৩ পয়সা কেটে রাখতে মালিকদের রাজি করিয়েছি। গত ১ জুলাই থেকে টাকা আসতেছে। হিসাব করে দেখেছি, বছরে প্রায় ৬২-৭০ কোটি টাকা আসবে। এই টাকা থেকে কর্মরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে সেই শ্রমিকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দেব। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর চাকরি ছেড়ে গেলে ইন্সুরেন্স কাভারেজে দুই লাখ টাকা আর তিন লাখ টাকা নগদে দেওয়া হবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরু চুন্নু সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আছেন বলেই আমরা অনেক ভালো আছি। বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও মিডিয়ার কারণে অনেক অনাচার, দুর্নীতি অনেক কম হয়। নয়ত অনেক বেশি হত।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রাজু্ আহমেদ। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ জামাল হোসেনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।