জাপানের অর্থায়নে কক্সবাজারে কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়ে প্রস্তাব জমা দিয়েছে দুটি কোম্পানি।
Published : 07 Sep 2015, 11:51 PM
গত বছরের অগাস্টে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার, যা হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যয়ের প্রকল্প।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এই প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে।
বাকি অর্থের মধ্যে ৪ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা আসবে সরকারের তহবিল থেকে। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা- কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) ২ হাজার ১১৯ কোটি টাকা জোগান দেবে।
সম্প্রতি এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দর ( প্রি-কোয়ালিফিকেশন) ডাকা হলে তাতে জাপানেরই দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন ও মারুবেনি করপোরেশন প্রস্তাব জমা দিয়েছে।”
তবে এখনও তাদের প্রস্তাব যাচাই করা হয়নি।
কাশেম বলেন, তারা আশা করছেন চূড়ান্ত দরপ্রস্তাবের মাধ্যমে আগামী বছরের অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে যোগ্য বিবেচিত কোম্পানিকে চূড়ান্ত কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হবে।
সুমিতোমো ও মারুবেনি, দুটি কোম্পানিই এর আগে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। মারুবিনি হরিপুর ও মেঘনা ঘাটে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট করে দুটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যুক্ত। সুমিতোমো ফেঞ্চুগঞ্জে ৯০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল ও শিকলবাহায় বার্জ মাউন্ডেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে যুক্ত।
‘মাতারবারি ২x৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রোজেক্ট’-এর কাজ ২০২৩ সালের অক্টোবরে শেষ হবে বলে বলে কার্যপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
পরিবেশবাদীদের আপত্তির মধ্যেই গত বছর সুন্দরবনের কাছে রামপালে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তি স্থাপনের পর মহেশখালীতে এই প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার।
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি রুলও দিয়েছিল হাই কোর্ট।
বিদ্যুৎ সংকটে থাকা বাংলাদেশে বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে গ্যাস থেকে; কয়লা থেকে আসে ৩ শতাংশেরও কম। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে যার মধ্যে অর্ধেক আসবে কয়লা থেকে।
প্রকল্পের সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ‘আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি’ ব্যবহার করা হবে, যাতে কেন্দ্রের কর্মদক্ষতা হবে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ।
বাংলাদেশের বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর গড় কর্মদক্ষতা ৩৪ শতাংশের বেশি নয়।
“বেশি কমর্দক্ষতার প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কম কয়লার প্রয়োজন হবে এবং কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। ফলে বায়ুদূষণসহ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে একেবারেই কম।”
এছাড়া নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে আনতে এ প্রকল্পে ‘লো রেট বার্নার’, সালফার-ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমাতে ‘ডি-সালফারাইজেশন’ পদ্ধতি এবং ছাই বা ‘এ্যাশ’ নির্গমন কমাতে ‘ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রিসিপিটেটর’ ব্যবহার করা হবে বলে সার সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়।
এ প্রকল্পের ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট চলবে ৪৭০০-৫২০০ কিলোক্যালরি/ কিলোগ্রাম মানের আমদানি করা কয়লায়। সার্বিক কর্মকাণ্ডের জন্য আবাসিক-অনাবাসিক বিভিন্ন ধরনের ভবন, পানিশোধন ব্যবস্থা, জেটি নির্মাণসহ একটি টাউনশিপ নির্মাণ করা হবে।
মহেশখালীতেই প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্যেই জাপান ছাড়াও আরও তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চীন ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও যৌথ উদ্যোগ চুক্তি করেছে সরকার।