এতে শত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বলে শঙ্কায় রয়েছে ব্যবসায়ীরা।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সড়ক হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভোগ্যপণ্যের গুদামে পানি ঢুকেছে।
খাতুনগঞ্জে আসা পণ্যবাহী ট্রাক থেকে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য খালাস বন্ধ রাখায় কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে এই পাইকারি বাজার।
পানিতে তলিয়ে যাওয়া পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, মরিচ, চাল ও শুটকিসহ নানা ধরণের ভোগ্যপণ্য পানি থেকে সরিয়ে শুকানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
টানা বর্ষণের মধ্যে শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত নির্দিষ্ট বিরতিতে আঘাত হানছে জোয়ারের পানি।
দুপুর নাগাদ জোয়ারের পানিতে আছদগঞ্জ, বাঁশঘাটা, চানমিয়া গলি, ওসমাইন্যার গলি ও পোস্ট অফিস গলি তলিয়ে যেতে দেখা যায়।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোশিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খাতুনগঞ্জে ৫ হাজার ট্রেডিং হাউজ আছে, যার প্রতিটা কোনো না কোনোভাবে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“শনিবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকাপাটের যে প্রতিবেদন পাচ্ছি, তাতে ক্ষয়ক্ষতি টাকার অংকে একশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ব্যাংক লোন পরিশোধে হিমসিম খাবে।”
এবারের জোয়ারের পানিতে খাতুনগঞ্জে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ছগির আহমদ।
জোয়ারের পানি থেকে এই পাইকারি বাজারকে রক্ষায় কোনো সরকারই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেও খেদোক্তি প্রকাশ করেন তিনি।
“এ ধরণের জলোচ্ছ্বাস থেকে খাতুনগঞ্জকে রক্ষা করতে চাক্তাই খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ, চাক্তাইয়ের শাখা খালগুলো পরিষ্কার করা ও কর্ণফুলি ড্রেজিং করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বার বার বলে আসছি। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এ পর্যন্ত।”
খাতুনগঞ্জের এস কে ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সুজন নন্দী জানান, জোয়ারের পানি থেকে বাঁচতে বছর দুয়েক আগে খাতুনগঞ্জের রাস্তা দু’ফিট উঁচু করেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।
নিজের আড়তের পেঁয়াজ রক্ষা করতে বেশি দামে ইট ও বালি কিনেছেন খাতুনগঞ্জের সততা বাণিজ্যালয়ের মালিক রতন রায়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তার দুশ বস্তা পেঁয়াজ পানির নিচে ছিল। এখন সে পেঁয়াজ তাকে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হবে।
রতন রায় বলেন, “এতদিন গজব গেছে অবরোধের। এবার আসল জোয়ারের পানি। খাতুনগঞ্জ এখন অভিশপ্ত জায়গা হয়ে গেছে।”
গত সাত দিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগরীসহ আশেপাশের এলাকায় টানা বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে জনজীবনে একপ্রকার স্থবিরতা নেমে এসেছে।