৩ মাসেও জট খোলেনি বিথুন হত্যাকাণ্ডের

ঢাকার আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার বিথুন হত্যাকাণ্ড কারা, কী কারণে ঘটিয়েছে, তা তিন মাসেও বের করতে পারেনি পুলিশ।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2015, 05:30 PM
Updated : 21 May 2015, 06:14 PM

একে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসাবে ধরে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা তখন বলেছিলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় তদন্ত এগিয়ে নিতে পারছেন না তারা।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরও তদন্তের কোনো অগ্রগতি না দেখে হতাশ ও ক্ষুব্ধ বিথুনের পরিবার।

গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর রামপুরার একটি বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ইত্তেফাকের উপদেষ্টা সম্পাদক আখতার-উল-আলমের মেয়ে বিথুনের (৪৫) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা বিথুনের গলায় মাফলার ও ওড়না প্যাঁচানো ছিল, হাত-পা ছিল শাড়ি দিয়ে বাঁধা। হাতে, পায়ে ও মুখে কালচে দাগও দেখা গেছে। বাসার কক্ষগুলো ছিল এলোমেলো।

বিথুন ঢাকার আদালতে আইনজীব হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তার স্বামী গোলাম রব্বানী নেক্সাস ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস নামের একটি বিদেশি সংস্থায় কাজ করেন। হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ছিলেন বাহরাইনে।

তদন্তের অগ্রগতির খবর জানতে এই সপ্তাহে বিথুনের ভাই বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রিজওয়ানুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।”

মামলাটি এখন সিআইডি তদন্ত করছে বলে জেনেছে বিথুনের পরিবার। রিজওয়ান বলেন, আগে যিনি তদন্ত করতেন তার পদোন্নতি হওয়ায় মামলাটি আরেক কর্মকর্তার হাতে পড়েছে।

খুনের পর পুলিশ ময়না তদন্ত পাওয়ার জন্য অপেক্ষার কথা বলেছিলেন। ইতোমধ্যে তা পেয়েছেন বলেও জেনেছে নিহতের পরিবার।

রামপুরা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান তরফদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। তবে এখনও কোনো ক্লু পাইনি আমরা।”

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান খান বলেন, “কয়েকদিন আগে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। এখনও এই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

“তবে আশা করছি, খুব দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”

২৫ বছর আগে রব্বানীর সঙ্গে সংসার শুরু করেছিলেন বিথুন। এরপর চাকরি নিয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে দেশের বাইরে আছেন রব্বানী।

এই দম্পতির একমাত্র ছেলেও দুই বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর থেকে রামপুরার ওই বাসায় একাই থাকতেন বিথুন।

স্ত্রী হত্যার খবর পেয়ে দ্রুত দেশে ফিরে পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে ছোটাছুটি শুরু করেছিলেন রব্বানী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, ঘটনার তিন দিন পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নিয়ে ঘরে ঢুকে প্রায় ৫০-৫৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার খোয়া যাওয়ার বিষয়টি দেখেন তিনি।

রব্বানীর বক্তব্য অনুযায়ী, তিন কাঠা একটি জমির রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্রও পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বিথুনের মোবাইল ফোনটিও খোয়া যায়।

স্ত্রীর সঙ্গে কারও শত্রুতার খবর তার কাছে নেই বলে জানান রব্বানী।

বিথুনের বাবা আখতার-উল-আলম আশির দশকের শেষদিকে ইত্তেফাকের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের সময় তাকে রাষ্ট্রদূত করে দুই বছরের জন্য ব্রুনাইয়ে পাঠানো হয়। ২০১০ সালের ২৫ জুন মারা যান তিনি।