‘আ. লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ সম্মান নিয়ে থাকবে’

স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন বাংলাদেশকে কেউ নিচে নামাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 02:39 PM
Updated : 6 May 2015, 04:17 PM

বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র বনাম গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত নেপালে বাংলাদেশের সহায়তা পাঠানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে জয় বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আমরা আমাদের পাশের দেশকে  সহযোগিতা করছি। এই ক্ষমতা এখন আমাদের আছে। বিশ্বের সামনে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি। স্বাধীনতার শক্তি যতদিন ক্ষমতায় থাকবে আমাদের মাথা কেউ নিচে নামাতে পারবে না।

“এখন যেহেতু গত ৬ বছর স্বাধীনতার শক্তি ক্ষমতায় আছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তার জন্যই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, বাংলাদেশ কী দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসেছে।”

অতীতের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “বেশি দিন আগে নয়, এক সময় ছিল বাংলাদেশ এমন একটি দরিদ্র দেশ ছিল- আমাদের দেশে ঝড় হত, বন্যা হত, আমাদের দেশের মানুষ হতাশ হত, প্রাণ হারাতো। আমাদের হাত পেতে থাকতে হতো বিদেশিদের কাছে, আমাদের সহযোগিতা করো; আমাদের পানি-চাল এনে দেয়ার জন্য জাহাজে করে, প্লেনে করে।”

সেমিনারে সন্ত্রাস, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়।

গত জানুয়ারি থেকে তিন মাস ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালে নাশকতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “এর আগেও আমি বলেছিলাম-এই সন্ত্রাস আমরা কঠোর হাতে দমন করবো। এই সন্ত্রাস আমরা কঠোর হাতে দমন করেছি।”

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সংবাদ প্রকাশে কয়েকটি গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করেন জয়।

“কিছু কিছু মিডিয়া আছে এই ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। কারণ তারা পছন্দ করে না যে, কোনও রাজনৈতিক দল এগিয়ে যাবে, ক্ষমতায় থাকবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের চোখ অন্যদিকে। তাদের চোখ নিজেদের ক্ষমতার দিকে। মানুষের ভোটে তারা কোনও দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এটা তারা জানে। শুধু এই ষড়যন্ত্র করেই তাদের সুযোগ…

“পঁচাত্তর সালে দেখেছিলাম, ষড়যন্ত্র করে কারা ক্ষমতায় এসেছিল, ২০০৭ সালেও দেখেছিলাম কারা ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল। এখনো কিন্তু তারা চেষ্টা ছাড়েনি। এখনো তাদের সেই আশা আছে- আহা দুদিনের জন্যও যদি পতাকা নিয়ে গাড়িতে চড়তে পারি!”

জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে এ প্রসঙ্গে তেমন কথা-বার্তা হচ্ছে না বলেও আক্ষেপ করেন সজীব ওয়াজেদ।

“জাতীয়তাবাদ, এই বিষয় নিয়ে কিন্তু আমাদের আলোচনা হচ্ছে না। গণতন্ত্রকে এগিয়ে আনার জন্য দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে। মানে জাতীয়তাবাদ থাকতে হবে।

“কিন্তু আমাদের দুঃখ, যারা নিজেদের জাতীয়তাবাদী দল বলে নাম দিয়েছে তারা কি দেশের জন্য কাজ করছে? তারা তো ক্ষমতায় ছিল। তারা কি তখন দেশের জন্য কাজ করেছিল? তারা সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, রাজাকার-আলবদরদের নিয়ে জোট করে রাজনীতি করেছে।”

‘যারা রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানাতে পারে ও তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারে সেই দল কি কখনো জাতীয়তাবাদী হতে পারে?,” প্রশ্ন ছুড়ে দেন জয়।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, “যে দল দেশের স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে, যে দল সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করেছে, যে দল সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে সেই দল হচ্ছে আসল জাতীয়তাবাদী দল। বাংলাদেশের আসল জাতীয়তাবাদী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।”

আওয়ামী লীগ ও এর নেত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে বিশ্বের কোনো দেশের ‘সামনে’ ও ‘চাপে’ মাথা নিচু করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জয় বলেন, “কিন্তু আমাদের দুঃখ, আমাদের কিছু মানুষ সেরকম একটি দল, সেরকম একজন নেত্রী- তার পক্ষে কথা বলতে লজ্জা পায়। স্বাধীনতার পক্ষে বলতে লজ্জা পায়…মানুষ আওয়ামী লীগ বলবে। জয় বাংলা বলতে লজ্জা পায়.. মানুষ আওয়ামী লীগ বলবে।”

এটাতো ‘লজ্জার বিষয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে জয়বাংলা বলতে লজ্জা পায়, সে বাঙালি না, সে বাঙালি হতে পারে না।”  

সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন লেখক সৈয়দ শামসুল হক, শোলাকিয়ার ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত।

গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধে  গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ নাশকতার ওপর ‘সহিংসতার দিনলিপি’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

এছাড়া ঢাকার নবনির্বাচিত দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। দুই মেয়র সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।