ভূমিকম্প: তিন জেলায় ৩ নারী নিহত

নেপালে উৎপন্ন শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়া মাটির দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে বগুড়ায় এক নারী এবং আতঙ্কে হুড়োহুড়িতে পাবনা ও টাঙ্গাইলে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2015, 09:37 AM
Updated : 26 April 2015, 02:48 AM

এদিকে ঢাকার সাভারের একটি তৈরি পোশাক কারখানা থেকে তাড়াহুড়ো করে নামার সময় পদদলিত হয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর খবর সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে গণমাধ্যমকে জানালেও পরে ‘তার মৃত্যুর সঙ্গে ভূমিকম্পের সম্পর্ক নেই’ বলে জানানো হয়।

মাটির দেয়াল ধসে চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায়। পাবনা শহরে নিহত নারী তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আতঙ্কিত হয়ে বের হতে গিয়ে মেঝেতে পড়ে মারা যান আরও এক জন।

শনিবার দুপুরে নেপালে সৃষ্ট শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা কেঁপে ওঠে। ৭ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পে নেপালে বহু ভবন ধসে এক হাজার ৮০০’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

ভূমিকম্পে বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে ভূমিকম্পের সময় উঁচু ভবনগুলো দুলে উঠায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে বেশি; হুড়োহুড়িতেও আহত হয়েছেন অনেকে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বগুড়া প্রতিনিধি জানান, নিহত মোরশেদা বেগম (৫৫) দুপচাঁচিয়া উপজেলার অনুহত সিংড়া গ্রামের বয়েজ উদ্দিন আকন্দের স্ত্রী।

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ভূমিকম্পের সময় বাড়ির পাশে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর সময় ঘরের কাঁচা মাটির দেয়াল ধসে পড়লে নিচে চাপা পড়ে তিনি মারা যান।

এছাড়া দুই দফা ভূমিকম্পে সোনাতলা উপজেলা ডাক বাংলোর এবং নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ে।

সোনাতলার ইউএনও হাবিবুর রহমান জানান, সোনাতলা ডাকবাংলোর দেয়াল ধসে পড়েছে। এছাড়াও উপজেলার দিকদাইড় ও কাটালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফাটল ধরেছে।

নন্দীগ্রামের ইউএনও আনোয়ার ইমাম জানান, ভূমিকম্পে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, ভূমিকম্পে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাথায় আঘাত পেয়ে রোকেয়া খানম (৫০) মারা যান।

রোকেয়া পাবনা পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলে পাবনা সদর থানার ওসি আহসানুল হক জানিয়েছেন। তিনি পাবনা জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি সোহরাব উদ্দিনের স্ত্রী।

ওসি আহসানুল বলেন, বেলা সোয়া ১২টার দিকে ভূমিকম্প শুরু হলে শহরের ময়নামতি এলাকার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দেয়ালে লেগে মাথায় আঘাত পান রোকেয়া। স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া ভূমিকম্পের সময় ঈশ্বরদী ইপিজেড এলাকায় বিভিন্ন ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়ে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন বলে সেখানকার চিকিৎসক আইরিন আফরোজ জানিয়েছেন।

চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আতঙ্কিত হয়ে ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় বলে জানিয়েছেন স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষার শিক্ষক আলিফ উদ্দিন।

আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, উপজেলার হাফানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের পলেস্তরা খসে ৫/৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে বের হতে গিয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে মারা যান পরিনা বেগম (২৫)।

কুড়িগ্রামের রৌমারি উপজেলার সাহেবের আগলা গ্রামের বাসিন্দা সুকুমুদ্দিনের স্ত্রী পরিনা ট্রাকচালক স্বামী ও এক সন্তানকে নিয়ে সৈয়দপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আদিলুর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার দুপুরের ভূমিকম্প হওয়ার সময় পরিনা রান্না ঘরে ছিলেন। আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মেঝেতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।

“তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”

সাভার প্রতিনিধি জানান, ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে সাভারের কর্ণপাড়া এলাকায় ‘আল মুসলিম গ্রুপের’ পোশাক কারখানায় শতাধিক শ্রমিক আহত হয়।

সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কাদের নাজিম জানান, আহতদের মধ্যে অন্তত ৫০ শ্রমিককে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মাথায় মারাত্মক আঘাত পাওয়া আহত এক পুরুষ শ্রমিক হাসপাতালে এসে মারা যান বলে দুপুরের দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন।

তবে বিকালের দিকে নিহত ব্যক্তির নাম পরিচয় উল্লেখ করে এই চিকিৎসক দাবি করেন, নিহত ব্যক্তি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন।

নিহত গয়া সরকার (২৫) কালিয়াকৈর উপজেলার গোলারটেক গ্রামের নারায়ণ সরকারের ছেলে বলেও দাবি করেন তিনি ডা. আনোয়ারুল কাদের।

তিনি বলেন, “ভূমিকম্পে আহত শ্রমিক ও দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি একই সময়ে হাসপাতালে আসায় আমি গয়া সরকারকে কারখানার শ্রমিক মনে করেছিলাম। বিষয়টিতে আমারই ভুল হয়েছিল।”

এদিকে ওই কারখানার আহত শ্রমিকদের কয়েকজন বলেন, ভূমিকম্প অনুভূত হলে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচতলা ওই কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা বাধা দেয় এবং এ নিয়ে আনসারদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা জোর করে নামতে গেলে পদদলিত হয়ে শতাধিক আহত হন।

তবে মুসলিম গ্রুপের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভূমিকম্পের সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ কারখানার কর্মকর্তাদের তদারকিতে সব শ্রমিককে বের করে আনা হয়। কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শ্রমিকরা বের হওয়ার সময় বাইরে থেকে বহিরাগত কয়েকজন ইট ছুড়লে কয়েকজন শ্রমিক আহত হন বলে দাবি করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

ভূমিকম্পের সময় বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় স্কুল ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

উপজেলার রুপসদীর বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ে দোতলা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে এ শিক্ষার্থীরা আহত হন বলে জানিয়েছেন বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি অংশু কুমার দে।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ভূমিকম্পের সময় ভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে নামার সময় শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।

ময়মনসিংহ সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচ শিক্ষার্থী ও ধোবাউড়া উপজেলার কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

এর মধ্যে শহরের বাঘমারা আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদরাসার সুমাইয়া আক্তারকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল করিম।

ধোবাউড়া থানার ওসি আব্দুল হক জানান, ভূমিকম্পের সময় উপজেলার কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে সাত জনকে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।