এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও বেশ কয়েকটি ভবন হেলে পড়েছে বা ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যা পরীক্ষা করে দেখছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ভোজন সরকার শনিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভূমিকম্পে রাজধানীতে ১০টি এবং ঢাকার বাইরে সাতটি ভবন হেলে পড়েছে বা ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে তারা খবর পেয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সব ভবনের পরিস্থিতি পরীক্ষা করে দেখছেন বলে জানান তিনি।
শনিবার বেলা ১২টা ১১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে রাজধানীসহ সারা দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয় বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।
ভূমিকম্পে পুরান ঢাকার বংশালে একটি ছয় তলা ভবন হেলে পড়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এতে কেউ হতাহত হননি।
বংশালের ২৪৯/১ নম্বর ওই ভবনের পুরোটাজুড়ে জুতা ও ব্যাগের কারখানা।
ভবনটি পাশের একটি ভবনের দিকে হেলে পড়েছে বলে বংশাল থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন।
ভূমিকম্পে রাজশাহীতে চারটি ভবন হেলে পড়েছে এবং তিনটিতে ফাটল ধরেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের ওই অঞ্চলের সিনিয়র স্টাফ অফিসার শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় ডা. সুজিত ভদ্র বাড়ি, ভেড়িপাড়া কেশবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন ও মসজিদ মিশন স্কুলের তিনতলা ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এছাড়া নগরীর মালোপাড়ায় মোশারফ হোসেন কারিগরি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ একাডেমির পাঁচতলা ভবন, কাদিরগঞ্জ তিনতলা বাণিজ্যিক ভবন, নারীবাজার বাটার মোড়ে তিনতলা বাণিজ্যিক ভবন ও সোনাদিঘী মনি চত্বরে চারতলা বাণিজ্যিক ভবন হেলে পড়েছে বলে জানান তিনি।
সাহেববাজারের ১১তলা একটি বাণিজ্যিক ভবনের জানালার বেশ কিছু কাচ ফেটে গেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার টিআমীন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওমর শরীফ জানিয়েছেন, তাদের স্কুলের নবনির্মিত তিনতলা ভবন ও কম্পিউটার ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
ভূমিকম্পে চাঁদপুর শহরের জে এম সেনগুপ্ত রোডে ‘এসটি প্লাজা’ নামের ছয়তলা ভবন সামান্য হেলে পড়া ছাড়াও নতুনবাজারে ‘মাকসুদা মহল-১’ নামের পাঁচতলা ভবনের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তবে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে ওই দুই ভবন হেলে পড়া বা ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে প্রকৌশলীরা পরীক্ষা করে মত দেওয়ার আগে সেটি হেলে পড়েছে বলা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম বলেন,“ভূমিকম্পে আমাদের কারখানার কোনো ক্ষতি হয়নি। ভবন দেবে যায়নি বা হেলে পড়েনি এবং ভবনে কোনো ফাটলও দেখা দেয়নি।
“তারপরেও আমরা প্রকৌশলী ডেকে এনে ভবন পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিয়েছি।”
এদিকে ভূমিকম্পের সময় পাবনা সদর উপজেলায় ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এক নারী মারা গেছেন।
ভূমিকম্পের সময় সাভারের কর্নপাড়া এলাকায় ‘আল মুসলিম গ্রুপের’ একটি পোশাক কারখানায় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অন্তত ৫০ শ্রমিক আহত হন।
তাদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কাদের নাজিম জানিয়েছেন।
এদিকে ভূমিকম্পের সময় কুমিল্লা ইপিজেডের একটি এবং সাভারের একটি কারখানায় শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন।
কুমিল্লায় চীন-যুক্তরাজ্যের যৌথ মালিকানাধীন ‘কাদেনা স্পোটর্স ওয়্যার লিমিটেড’ এ হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে তারা আহত হন বলে ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক আবদুস সোবহান জানিয়েছেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হাবিব আবদুল্লাহ সোহেল জানান, তাদের হাসপাতালে ৪৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।