চারুকলা অনুষদের এই শিক্ষার্থীরা রোববার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পর থানা ঘেরাওয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করলে ফটকে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক রবিউল ইসলাম শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে সেখানে যান।
তখন পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে থানা ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চারুকলা অনুষদের সামনের মানববন্ধনে অধ্যাপক নিসার হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। অধ্যাপক নিসার পহেলা বৈশাখের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি জানান।
দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী।
এর আগে সকাল ১১টায় ক্যাম্পাসে মিছিল করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশন।
গণজাগরণের মশাল মিছিল
যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
রোববার বিকালে শাহবাগের জাদুঘরে সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি জানান তিনি। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় বের হয় মশাল মিছিল।
সমাবেশে ইমরান বলেন, “এই যৌন নিপীড়কদের খুঁজে বের করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা উচিত। এদের হোতাসহ সবার এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে সাহস না দেখাতে পারে।”
পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে যৌন হয়রানির ঘটনাটি ‘পুর্বপরিকল্পিত’ দাবি করে তিনি বলেন, “ভিডিও ফুটেজ থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা গেছে, যারা এই ঘটনায় জড়িত তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য।”
জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ
নববর্ষে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীর মিছিলটি শুরু হয়ে পরিবহন চত্বর হয়ে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত মিছিল থেকে নিপীড়কদের শাস্তি চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়।
পহেলা বৈশাখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হন।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি তন্ময় ধর বলেন, “এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কোনো নিপীড়কদের দেখতে চাই না। সেঞ্চুরিয়ান মানিকের যেভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠাই হয়নি, তেমনি এই নিপীড়কদেরও ঠাই হবে না।”
প্রক্টরের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, ঘটনার বিচার চাইলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো খারাপ ব্যবহার করেছেন।”
জগন্নাথেও বিক্ষোভ
বর্ষবরণ উৎসবে ছাত্রী লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পহেলা বৈশাখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীও উত্ত্যক্ততার শিকার হন। এই ঘটনার পাশাপাশি জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নেরও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট আয়োজিত এই দুটি সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাত্রী লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানান।
ছাত্রফ্রন্টের সমাবেশে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে পহেলা বৈশাখে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না। ঘটনার ৫ দিন পার হয়ে গেলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সজীব বলেন, “নারী লাঞ্ছনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে জাতীয় নারী নির্যাতনবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ণ করতে হবে।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন, বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান হোসনে আরা জলি, সংগীতশিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা।