‘তরুণরা গড়বে নতুন দেশ, ডিজিটাল হবে বাংলাদেশ’

গতানুগতিকতার বেড়া ডিঙিয়ে আবারও ভিন্ন রূপে শিশু সাংবাদিকদের সামনে হাজির হলেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, গাইলেন তারুণ্যের জয়গান।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2015, 11:21 AM
Updated : 19 April 2015, 06:37 PM

শিশু সাংবাদিকদের লেখা প্রতিবেদন ও রচনা নিয়ে ‘আমার কথা আমাদের কথা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসে আড্ডার ঢঙে শতাধিক শিশু সাংবাদিককে তিনি মাতিয়ে রাখলেন বক্তৃতার পুরো ১৭ মিনিট।

এরই মধ্যে প্রতিমন্ত্রী বলে গেলেন শিশু সাংবাদিকদের কাছে নিজের প্রত্যাশার কথা, ভবিষ্যতের এই ‘কাণ্ডারিদের’ জন্য প্রতিশ্রুতির কথা।

অনুষ্ঠানের আগে-পরেও তাকে দেখা গেল হাসিমুখে শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে, সেলফির জন্য মোবাইলের সামনে দাঁড়াতে।      

রোববার বিকাল ৪টায় রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের উৎসব হলে এই প্রকাশনা উৎসব শুরু হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও এ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন।

শিশু সাংবাদিকতায় বিশ্বের প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট ‘হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ এ বইটি প্রকাশ করেছে।

বক্তৃতা দিতে এসে তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মিলনায়তনে উপস্থিত শিশু সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার ছলে বিভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণা করছিলেন। কখনো উচ্চস্বরে সাড়া দিয়ে, কখনো হাততালিতে মিলনায়তন কাঁপিয়ে তার জবাব দিচ্ছিল শিশুরা।  

২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে নিজের বয়স ৪১ হবে জানিয়ে পলক উপস্থিত শিশু সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান, “তোমাদের বয়স তখন কত হবে? সবাই নিজে নিজে অংকটা করে ফেল।

“তখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে চাই।”

শিশুদের বয়সের অংক মেলাতে দিয়ে পলক বলেন, “২০৪১ সালে আমার বয়স হবে ৬১। তখন আমি বুড়ো হয়ে যাব, তখন আমরা উন্নত দেশ গড়তে চাই।

“২০৪১ সালে তোমাদের বয়স হবে পরিণত নেতৃত্ব দেওয়ার। আমরা সেই পরিণত, দেশপ্রেমিক, সৎ নেতৃত্ব তোমাদের মাঝে দেখতে চাই।”

ছন্দে ছন্দে তিনি স্লোগান ধরেন- “তরুণরা গড়বে নতুন দেশ, ডিজিটাল হবে বাংলাদেশ।”

এ আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে থাকা গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে।

তাকে সামনে রেখে হ্যালোর শিশু সাংবাদিকদের জন্য গ্রামীণফোনের ‘বিশেষ প্যাকেজে’ দেওয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, “আসুন না আমার কিছু প্যাকেজ তৈরি করি, সবাইকে একটি করে সিম দিয়ে দেই, যারা হ্যালোর শিশু সাংবাদিকতা করছে তাদের জন্য। মাত্র তো কয়েকশ।”

মোবাইল ফোন অপারেটররা যাতে ইন্টারনেটের গতি ঠিক রাখেন- ঠাট্টার ছলে সে বিষয়েও তাগিদ দেন প্রতিমন্ত্রী।

“ইন্টারনেট ব্যবহার করে কি তোমরা শান্তি পাও? তোমরা কি খুশি? গ্রামীণফোন বলে যে ১ জিবি, কিন্তু আসলে ৫০০ কেবিপিএস। আমি ফেইসবুকে গেলেই.. আমি আইটি মন্ত্রী তো... সবার যেন রাগ আমার ওপর। সবাই বলে ইন্টারনেটের দাম কমাও, গতি বাড়াও, তোমাদের ভোট বাড়াও।”

হ্যালোর শিশু সাংবাদিকদের জন্য ইন্টারনেটের ‘স্পেশাল প্যাকেজ’ নিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী।

আজকের শিশু সাংবাদিকদের আগামী দিনের বাংলাদেশের কাণ্ডারি উল্লেখ করে পলক প্রতিটি জেলায় হ্যালোর সাংবাদিকদের একটি করে ল্যাপটপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

“আজকে আমি অত্যন্ত উৎসাহিত, আনন্দিত। এই প্রজন্মকে নিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। এই প্রজন্মকে নিয়েই আমরা প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ব।

পলক বলেন, “তোমরা শুধু বাংলাদেশের গর্ব নও। তোমরা সারা বিশ্বের শিশু সাংবাদিকতার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আমরাও সেটাই চাই। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।”

তিনি জানান,  বাংলাদেশে ২০০৮ সালে যেখানে ২৪ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করত, সেখানে বর্তমানে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে সাড়ে চার কোটি মানুষের কাছে।

“স্বাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশ হলেও এদেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহাকারী ৮০ শতাংশ। অক্ষরজ্ঞান নেই, সেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, বিশ্বে কোনো দেশে এ রকম আর আছে নাকি বল? আমরা পারব না তো কে পারবে বল?”

এ অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগে মিরপুরে শুরু হয় বাংলাদেশ-পাকিস্তান ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ।

পলক বলেন, “জানি আমার বক্তব্যের দিকে তোমাদের মনযোগ নেই। মাথা নিচু করে মোবাইল ফোনে তোমরা দেখছ। আচ্ছা স্কোর কত খেলার?”

দর্শক সারি থেকে সঙ্গে সঙ্গে জবাব আসে একাধিক কণ্ঠে।

কথার খেলায় বয়সের ব্যবধান যেন আরও কমিয়ে আনেন তরুণ এই প্রতিমন্ত্রী।  

“আইসিটি ডিভিশন নতুন হয়েছে, মাত্র দুই বছর আগে এই বিভাগ হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় নতুন, মন্ত্রীও নতুন। মন্ত্রণালয়ের বয়স কম, মন্ত্রীরও বয়স কম।”

শিশু সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইল অ্যাপ করছি...আমি চাই আমাদের আইসিটি বিভাগের কার্যক্রম তোমরাও মনিটর করবে। আমাদের কার্যক্রম ঠিকমত হচ্ছে কি না।”

আইসিটি নিয়ে ‘কেমন বাংলাদেশে দেখতে চাও’? আইসিটি নিয়ে ‘সমাজ সচেতনতামূলক কী কাজ করতে চাও’? আইসিটির মাধ্যমে ‘শিশু-কিশোরের কল্যাণের জন্য কী কী করা যায়’- এসব বিষয়ে আইসিটি বিভাগ একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চায় বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

ওই প্রতিযোগিতায় হ্যালোর সাংবাদিকরাও থাকতে পারে জানিয়ে গ্রামীণফোনকে এর সঙ্গে থাকার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।

শিশু সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সারা দেশে যেসব স্কুলে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো চলছে কি না সেই খবর আমি হ্যালোতে দেখতে চাই।”

সরকারের একটি টাকাও যেন অপচয় না হয়, দুর্নীতি না হয়- সে বিষয়ে সজাগ থাকতে শিশু সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

“ক্লাউড সোর্স অ্যাপ্লিকেশনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অ্যাডমিন করে দেবে, যাতে শিশু সাংবাদিকরা দেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো ভিডিও, অডিও, ডকুমেন্ট বা কেউ বাসে আগুন দিচ্ছে সেই ভিডিও, কোনা খারাপ ছেলে কোনো বোনকে উক্তক্ত করছে সেইসব তথ্য সরাসরি তুলে ধরতে পারে।”

শিশুদের সংগ্রহ করা খবর নিয়ে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ যাত্রা শুরু করে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত এই ওয়েবসাইট। হ্যালোর জন্য সংবাদ সংগ্রহ থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সব কাজেই যুক্ত রয়েছে শিশু ও কিশোর সাংবাদিকরা।

সংবাদভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।