যৌন নিপীড়ন: শাহবাগের এসআই প্রত্যাহার

বর্ষবরণের উৎসবে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনার পর শাহবাগ থানার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) প্রত্যাহার করা হয়েছে, যিনি ঘটনার সময় ওই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2015, 03:30 AM
Updated : 28 Jan 2016, 01:30 PM

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পরদিনই এসআই আশরাফুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয় বলে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।

তিনি রোববার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যান্যরা (প্রত্যক্ষদর্শী) বলছে, একজন যৌন নিপীড়ককে ধরে তার হাতে দেওয়া হয়েছিল। আশরাফ বলছে, তার কাছে কাউকে দেয় নাই। এজন্য তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।”

ওই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফের গাফিলতি ছিল কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।”

বর্ষবরণের দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে এক দল যুবক নারীদের ওপর চড়াও হয়। তাতে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ কয়েকজন।

ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ থাকলেও নারীদের ওপর হামলা ঠেকাতে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

সে সময় চার নিপীড়ককে ধরে পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফের কাছে দেওয়া হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারীদের ওপর আক্রমণের সময় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাশ দুই নিপীড়ককে ধরে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন। তার নেমপ্লেটে আশরাফ লেখা ছিল।

“পরে ছাত্র ইউনিয়নের অন্য কর্মীরা আরো দুজনকে ধরে তার কাছে দেয়। পরে শোনা যায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করার পাশাপাশি সেদিন পুলিশের গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতেও একটি কমিটি করা হয়েছে বলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা চলাকালে টিএসসির ওই এলাকাতেই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়। দুর্বৃত্তের চাপাতির আঘাতে তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও আহত হন।

সে সময়ও ওই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছিল।

অভিজিৎ হত্যার পর প্রায় দেড় মাস পার হলেও এখনো খুনিরা গ্রেপ্তার হয়নি।

এদিকে বর্ষবরণ উৎসবে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে গত চার দিন ধরে দেশজুড়ে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি চললেও এখনো নিপীড়কদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধারণ করা পুলিশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনিবার একাত্তর টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চাপ দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিসহ তার মতো বেশধারী কয়েকজন ছিলেন আক্রমণের কেন্দ্রে।

তবে ওই ব্যক্তিদের কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি। পুলিশের তদন্তেও যৌন নিপীড়কদের শনাক্ত করা যায়নি বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম শনিবার জানিয়েছেন।

অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা জানাতে বলেছে পুলিশ। তথ্যদাতার নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

তদন্তের গতি নিয়ে মনিরুল বলেন, “কোনো ভিকটিম বা নারী এখনও পুলিশের কাছে এসে কোনো ধরনের অভিযোগ করেনি। কেউ নিগৃহীত হয়েছেন, এমন কারও অভিযোগ পায়নি পুলিশ।

“পুলিশ ঘটনা তদন্তে বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে। ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। শনাক্ত করা গেলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।”