‘দাঁড়িয়ে যাও, যে যেখানে আছ’

পহেলা বৈশাখে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব প্রতিবাদের সঙ্গে নারীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানও এসেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2015, 03:27 PM
Updated : 18 April 2015, 03:32 PM

সেদিনকার ঘটনায় পুলিশ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘নির্বিকার’ ভূমিকার সমালোচনার পাশাপাশি এই ঘটনার পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন অনেকে।

গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। এতে জড়িতদের এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

ওই ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদের মধ্যে ফেইসবুকেও নারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।

ঊর্মি রুবিনা নামে একজন লিখেছেন, “...টিএসসির যৌন নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য প্রমাণ সামনে আসছে, আর আমার মনে হচ্ছে, এই পরিমাণ ক্রাইম বাংলাদেশে ঘটেছে আর এ নিয়ে সরকারের কোনো বিবৃতিই নেই। লিটন নন্দীর কথাই বলতে ইচ্ছে করে, ট্যাক্সের টাকায় এত পুলিশ রেখে কী লাভ? ১৯টা সি সি ক্যাম রেখে কী লাভ, প্রক্টরকে কি দাবা খেলার দায়িত্বে টেকাটুকা দিয়ে রাখা হয়েছে?”

সেদিন হয়রানির শিকার নারীদের বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী। 

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার মুমতাহিনা বুনি টয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “... আমাদের পর্দাশীল হতে বলার আগে নিজে সংযত হোন। চোখকে সংযত করুন। গার্লস কাম অন। কারও দিকে তাকায়ো না। নিজেকে নিজেই প্রটেক্ট কর। দাঁড়ায়ে যাও। যে যেখানে আছো।”

বর্ষবরণের ঘটনার পর হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নারীদের এই ধরনের অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়েছে।   

মুমতাহিনা ছাড়াও আরও অনেকেই  নিজেদের বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও শেয়ার দিয়েছে তাদের দেয়ালে।

আসমাউল হুসনা মুনিয়া তার ভিডিওতে বলেছেন, “১৯৭১ সালে আমরা যত স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই স্বাধীনতা আমাদের নেই। ২০১৫ সালেও আমরা স্বাধীন নই। একাত্তরে আমরা ভিনদেশী জানোয়ারদের দ্বারা লাঞ্ছিত ছিলাম, আজ নিজের দেশের মানুষদের দ্বারা।”

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওই ভিডিওতে বলা হয়েছে, “আপনিও তো একজন নারী, একজন মা। আপনিই বলেন, কী করা উচিত। অনুরোধ করছি সুষ্ঠু বিচার করেন।”

আরাত্রিকা রোজী তার দেয়ালে নারীদের সঙ্গে আলপিন রাখার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, “বাংলার নারী সকলকে বলছি-  রাষ্ট্র বলুন, প্রতিষ্ঠান বলুন, কোনো সংগঠন বলুন, নিদেন পক্ষে কোনো সভ্য পুরুষ বলুন, ভিড়-ভাট্টায় আপনার জন্য এই ছোট্ট যন্ত্রটি যা করতে পারবে, তেমনটি আর কেউ করতে পারবে না। ইহা পরীক্ষিত সত্য ।

“... আসুন বাংলার নারী, এই ‘আলপিন থেরাপি’ দিয়ে কুপুরুষটিকে মানুষ হবার সুযোগ করে দেই । যে কাজটি তার মা করতে পারেনি ‘আলপিন থেরাপি’ সেই কাজটি করে দেবে। এইবারের বৈশাখী মেলায় নরপশুদের আক্রমণে অনেকদিন আগের ভুলে যাওয়া যন্ত্রের কথা মনে পড়ে গেল!”

‘বাংলাদেশিজম’ নামে একটি পেইজ থেকে ওই দিনের ঘটনার কিছু ছবি শেয়ার করে দোষীদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গোলাম হোসেব হাবীব নামে এক লিখেছেন, “নিজেকে বড় নারীদরদী হিসেবে প্রমাণ করতে চাই না। কিন্তু এটুকু বুঝি যে মেয়েদের জীবনে যত দুর্যোগ ঘটে, তার তিলমাত্র পুরুষের জীবনে ঘটলে পুরুষেরা শোককাব্যের বান বইয়ে দিত।”